নোংরা অর্থের খেলায় ধরা পড়েছে ভারত

0

মানি লন্ডারিং আর সন্ত্রাসে অর্থায়নের অভিযোগে পাকিস্তানকে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশান টাস্ক ফোর্সের (এফএটিএফ) কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে ব্যর্থ হওয়ার পর ভারত এখন নিজেই তার অপকর্মের জন্য হাতেনাতে ধরা পড়েছে। 

মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অব ট্রেজারির ফিনসেন – ফিনান্সিয়াল ক্রাইমস ইনভেস্টিগেশান নেটওয়ার্ক – যে রেকর্ড প্রকাশ করেছে, সেখানে দেখা গেছে যে, ভারতের ৪৪টি রাষ্ট্রায়ত্ব ও প্রাইভেট ব্যাঙ্ক সন্দেহজনক লেনদেন করেছে। ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে এই ব্যাংকগুলো ২,০০০ লেনদেন করেছে, অর্থের অঙ্কে যেটা এক বিলিয়ন ডলারের বেশি। মার্কিন ব্যাংকগুলোর সন্দেহজনক তৎপরতা প্রতিবেদন (এসএআর) থেকে ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেশান জার্নালিজম (আইসিআইজে) যে তথ্য পেয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে, ভারতের ব্যাংকগুলোর লেনদেনগুলো মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাসবাদ ও মাদকের সাথে জড়িত থাকতে পারে। 

ইন্সটিটিউট অব বিজনেস ম্যানেজমেন্টের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ড. শাহিদা উইজারাত ভারতের এই অবৈধ আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে বলেন, “পাকিস্তানের উচিত প্রতিটি ফোরামে এই ইস্যুটি উত্থাপন করা। ভারতের সন্ত্রাসবাদের শিকার যে সব দেশ রয়েছে, তাদেরকে সাথে নিয়ে পাকিস্তানের উচিত হবে এই বিষয়টি ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস, জাতিসংঘ ও এফএটিএফে উত্থাপন করা”।

ড. উইজারাত এই বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি করেন। তিনি বলেন: “ভারত সন্ত্রাসবাদে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার জন্য পরিচিত এবং নিঃসন্দেহে এটার সাথে মানি লণ্ডারিংয়ের যোগ রয়েছে”।

“সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডের প্রতিবেদন অনুসারে, বেশ কিছু ভারতীয় ব্যাংক দেশের ও বাইরে অবৈধ অর্থ লেনদেনের সাথে জড়িত। এই ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, ব্যাংক অব বারোদা, কানাড়া ব্যাংক, এইচডিএফসি ব্যাংক, আইসিআইসিআই ব্যাংক, কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাংক, অ্যাক্সিস ব্যাংক ও ইন্দুসইন্ড ব্যাংক। 

অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বহু দশক ধরে ভারত আর তার পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো পাকিস্তানের উপর প্রচণ্ড চাপ দিয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে অবৈধ চ্যানেলে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ করেছে। এক বিশেষজ্ঞ বলেন, ভারতের এই অপকর্মের তথ্যটি এমন সময় ফাঁস হলো, যেখানে আসছে অক্টোবরে এফএটিএফের পূর্ণাঙ্গ বৈঠক হতে যাচ্ছে। 

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. আশফাক হাসান খান বলেন, “ভারতের অন্ধকার দিকটা তুলে ধরার জন্য পাকিস্তানের এখনই সুযোগ। চোখ খুলে দেয়া এই তথ্য ফাঁসের পর, পাকিস্তানকে ব্ল্যাকমেইল করার কোন নৈতিক অবস্থান ভারত আর তার মিত্র দেশগুলোর নেই”।

ইসলামাবাদ-ভিত্তিক অর্থনীতি বিষয়ক এই বিশেষজ্ঞ বলেন, “এফএটিএফে পাকিস্তানকে যারা দোষারোপ করে, তাদের উচিত আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখা, যেটা এখন উন্মুক্ত হয়ে গেছে”।

ড. হাসান বলেন, ধুসর তালিকা থেকে বের হয়ে আসার জন্য পাকিস্তান অসামান্য পদক্ষেপ নিয়েছে। “আমাদেরকে বক্তৃতা দেয়ার আগে, তাদের উচিত ভারতসহ বিশ্বের মানি লন্ডারিংয়ের কেন্দ্রগুলোকে আগে উচ্ছেদ করা”।

ড. হাসান বলেন, পাকিস্তানের উচিত আসন্ন এফএফটিএফ বৈঠকে আক্রমণাত্মক অবস্থান নেয়া। তিনি আরও বলেন, “পাকিস্তান অনেক কিছু করেছে এবং এখন ক্ষমাপ্রার্থী মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে”।

পাকিস্তানকে ধুসর তালিকা থেকে কালো তালিকায় নেয়ার জন্য যারা চেষ্টা করছে, সেখানে প্রধান শক্তি হলো নয়াদিল্লির নরেন্দ্র মোদির সরকার। তাদের সব ধরণের প্রচেষ্টার পরও পাকিস্তান নিজেকে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশান টাস্ক ফোর্সের কালো তালিকাভুক্তি থেকে বিরত রাখতে পেরেছে। 

বিশেষজ্ঞরা আরও বিশ্বাস করেন যে, বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদে-অর্থায়ন নজরদারি প্রতিষ্ঠান এশিয়া প্যাসিফিক জয়েন্ট গ্রুপের যে বৈঠক মাত্র কিছুদিনের মধ্যেই হতে যাচ্ছে, সেখানে চীনকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। ড. ইউজারাত বলেন, “আসন্ন এফএটিএফ বৈঠকে এই ইস্যুটি উত্থাপনের জন্য এটাই সবচেয়ে ভালো সুযোগ। চীন যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তাই তাদের সক্রিয় হওয়া দরকার”। তিনি বিশ্বাস করেন, সন্ত্রাসীদের অর্থায়নে ভারতের আর্থিক সহায়তার বিষয়টি এ অঞ্চলে বেইজিংয়ের স্বার্থেরও ক্ষতি করছে। 

সম্প্রতি প্রকাশিত এই দলিলপত্রে দেখা গেছে যে, ১৯৯৯ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে ২ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। এই অবৈধ লেনদেনের মধ্যে বিশ্বের বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নামও রয়েছে। 

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com