যুক্তরাষ্ট্র-চীন যুদ্ধ হলে কার পাশে থাকবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া?
২০০৭ সাল থেকে দক্ষিণ চীন সাগরে দ্রুত প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছে চীন। এই সমুদ্রপথে চীনের প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। ইতিমধ্যেই এই অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করেছে বেইজিং। একইসঙ্গে সেনার উপস্থিতিও বাড়াচ্ছে। আমেরিকার সঙ্গে সামরিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনা যখন তুঙ্গে তখন নতুন করে উত্তর-পূর্ব ও পূর্ব উপকূলে নৌ-মহড়া শুরু করেছে চীন। এই মহড়াকে আমেরিকার জন্য শক্তি প্রদর্শন বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও চীনের একজন সামরিক পর্যবেক্ষক এই মহড়াকে ‘রুটিন মহড়া’ বলে মন্তব্য করেছেন। দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র থাইল্যান্ড চুপিসারে বেইজিং থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
চীন থেকে দু’টি সাবমেরিন নেয়ার পরিকল্পনা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে থাইল্যান্ড। সেই সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে চীনের একটি খাল খননের প্রস্তাবের পরিবর্তে নিজস্ব একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে দেশটি। চীন থেকে দু’টি সাবমেরিন ৭২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে কেনার বিষয়ে জনগণের ক্ষোভের পর থাইল্যান্ড এখন এ চুক্তি পেছাতে যাচ্ছে। থাইল্যান্ডের অর্থনীতি ক্রমশ নিম্নমুখী হওয়ায় জনগণ এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানায়। ইউরোএশিয়ান টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘ক্রা ক্যানাল’ এর মাধ্যমে চীন ‘মালাক্কা সমস্যা’র সমাধান করতে চেয়েছে। ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ থাই খাল চীনের ‘মেরিটাইম সিল্ক রোড’ ইনিশিয়েটিভের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। মালাক্কা জলপ্রণালী ব্যস্ততম জলপথগুলোর একটি। প্রতি বছর বিশ্বের সমুদ্র বাণিজ্যের প্রায় ৩০ শতাংশ পণ্য বহন করে এর মধ্য দিয়ে চলে যায় ৮৪ হাজার জাহাজ। প্রশান্ত মহাসাগরকে ভারত মহাসাগরের সঙ্গে যুক্ত করে এ জলপ্রণালী। ‘ক্রা ক্যানাল’ বা থাই খাল খননের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে ও দূরত্বে মালাক্কা জলপ্রণালী পাড়ি দিতে পারবে চীন । তবে এই খাল মায়ানমার এবং কম্বোডিয়ার মতো দরিদ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর স্বাধীনতা আরও ক্ষুন্ন করবে বলে আশঙ্কায় রয়েছে সেদেশের জনগণ। কারণ এর ফলে দেশগুলোর ওপর চীনের হস্তক্ষেপের ঝুঁকি রয়েছে। এরই মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবং তাইপেইয়ের মধ্যে সম্পর্ক তৈরী হওয়ায় তা মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বেইজিংয়ের। এখন প্রশ্ন উঠছে, আমেরিকা এবং চীনের মধ্যে যদি যুদ্ধ হয় তাহলে এর ভবিষ্যৎ কী ? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমেরিকা তার সেনা নিয়ে এগিয়ে যাবে এবং ফিলিপিন্সের ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করবে। দুর্বল সামরিক বাহিনী এবং ভৌগোলিক পরিবেশের জন্য ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট চীনের সঙ্গে মিত্রতা বজায় রেখে চলেছে। চীনা আগ্রাসন রুখতে বালিনতাং চ্যানেল এবং সুরিগাও স্ট্রেইট সিল করে দেবে বলে ঘুটি সাজাচ্ছে আমেরিকা। এখন এমন পরিস্থিতি নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেও নিজেকে এই যুদ্ধ থেকে আলাদা রাখতে পারবে না ফিলিপিন্স বা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্য দেশগুলো । কথায় বলে, রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই সুপার পাওয়ারের মধ্যে যদি যুদ্ধ বাঁধে তাহলে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে তার মাসুল গুনতে হবে, মারাত্মক প্রভাব পড়বে দেশের অর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার ওপর। সেই আশঙ্কায় এখন থেকেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিশেষজ্ঞরা।