পদত্যাগ করছেন লিবিয়ার জাতিসংঘ স্বীকৃত সরকারের প্রধানমন্ত্রী

0

দেশের বিবদমান বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সমঝোতার মধ্যমে নতুন সরকার গঠনের জন্য পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন জাতিসংঘ স্বীকৃত লিবিয়া সরকারের প্রধানমন্ত্রী ফায়েজ আল-সাররাজ। এর কয়েকদিন আগেই বিক্ষোভের জেরে পদত্যাগ করেছে জাতিসংঘ স্বীকৃত লিবিয়া সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যুদ্ধবাজ খলিফা হাফতারের সমর্থিত পূর্ব লিবিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী।

তবে এ বার লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রী ফায়েজ আল-সাররাজ বিক্ষোভের জন্য পদত্যাগ করছেন না। তিনি বলেছেন যে, অক্টোবরের শেষে তিনি নতুন সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে চান। তিনি পদত্যাগ করছেন দেশের বিবদমান বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সমঝোতার মধ্যমে নতুন সরকার গঠনের পথ তৈরি করতে। এই গোষ্ঠীগুলি ১৮ মাসের মধ্যে ভোট করে নতুন সরকার গঠন করা নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছেছে।

ফায়েজ আল-সাররাজ ছিলেন ত্রিপোলি-ভিত্তিক সরকারের প্রধান এবং জাতিসংঘ তাঁর সরকারের পিছনে ছিল। তাঁর সরকারকে বিভিন্ন দেশ স্বীকৃতি দিয়েছিল। আর পূর্ব লিবিয়ায় ক্ষমতা দখল করে ছিল আন্তর্জাতিক সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা বিদ্রোহী খলিফা হাফতারের অন্তর্বর্তী সরকার। পূর্ব লিবিয়া হলো খালিফা হাফতার ও তাঁর লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি(এলএনএ)-র ঘাঁটি।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে তেলসমৃদ্ধ দেশ লিবিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করে ন্যাটো বাহিনী। তখন থেকেই দেশটি টালমাটাল হয়ে পড়েছে। কোথাও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এক এক এলাকা শাসন করছে এক এক সরকার। মুলত তখন থেকেই লিবিয়া দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একটি অংশের নাম হয়েছে পূর্বাঞ্চলীয় প্রশাসন। আরেকটি অংশ হয়েছে পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রশাসন। পূর্বাঞ্চলীয় সরকারকে সমর্থন করছে সশস্ত্র গ্রুপগুলো। এর নেতৃত্বে রয়েছে কমান্ডার যুদ্ধবাজ খলিফা হাফতার।

অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চলে ক্ষমতায় রয়েছেন জাতিসংঘ সমর্থিত সরকার। এই সরকারকে গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল একর্ডের (জিএনএ) বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে দেশটিতে আন্তর্জাতিক সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে আসছে যুদ্ধবাজ খলিফা হাফতার। এই যুদ্ধবাজ বিদ্রোহীকে মদদ দিয়ে যাচ্ছে মিশর, রাশিয়া, ইরান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ইউরোপের বেশ কিছু দেশ।

তাদের সামরিক সহযোগিতায় লিবিয়ার পূর্বাঞ্চল দখল করে নেয় হাফতার। সম্প্রতি তুরস্ক জিএনএ সরকারের সমর্থনে লিবিয়ায় সেনা পাঠালে পুনরায় বেশ কিছু শহর নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হন আন্তর্জাতিক স্বীকৃত ত্রিপোলি সরকার।

হাফতার গত বছরের এপ্রিল থেকে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি দখল করার চেষ্টা করছে। তবে যুদ্ধবাজ হাফতারের মিলিশিয়া বাহিনী সম্প্রতি অনেকটা প্রতিহত হয়েছে, কারণ লিবিয়ান সরকারের সেনাবাহিনী রাজধানী তারহুনা, বনি ওয়ালিদ, ওয়াটিয়া এয়ার বেস এবং পশ্চিম পর্বত জেলার শহরগুলি ইতিমধ্যে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়েছে।

এর আগে মিশরের স্বৈরশাসক আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি রাজধানী কায়রোতে বৈঠক করে লিবিয়ার বেনগাজির উপজাতির নেতাদের জাতিসংঘ সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে উসকে দেয়। এছাড়া তাদের অস্ত্র দিয়ে সিসি যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।

এদিকে দেশটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃত জিএনএ সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে তুরস্ক ও কাতার। এ বিষয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান এক বক্তব্যে বলেছিলেন, ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে লিবিয়ার সাথে আমাদের ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক। আমরা আমাদের লিবিয়ান ভাইদের একা ছেড়ে যাব না। লিবিয়ার ব্যাপারে তুরস্ক যে দায়িত্ব আজ অবধি পালন করে আসছে, ভবিষ্যতেও তা নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com