ভারত কথা রাখে না!

0

মস্কোতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চীন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন, পাঁচ দফা সমঝোতায় পৌঁছেছেন। বর্তমান সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত করতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বিবেচিত হচ্ছে। এটি বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকের প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে গেছে এবং দুই দেশের দুই নেতার মধ্যে ভবিষ্যতের সমঝোতাকে সম্ভব করার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করছে। গ্লোবাল টাইমসকে শুক্রবার এমনটাই বলেছেন চীনা বিশেষজ্ঞরা।
অবশ্য, যৌথ বিবৃতির সফল বাস্তবায়ন নির্ভর করছে ভারতীয় পক্ষের সত্যিকারভাবে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার ওপর। দেশটির ইতিহাস বিবেচনা করলে এই যৌথ বিবৃতি স্রেফ কাগুজে আলোচনা পরিণত হওয়া সম্ভব বলেও তারা হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।

মস্কোতে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিই) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনের ফাঁকে চীনের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াঙ ইয়ি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বৈঠক করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্করের সাথে। তাদের বৈঠকের স্থায়িত্ব হয় তিন ঘণ্টা। সাম্প্রতিক সীমান্ত সঙ্ঘাতের শান্তিপূর্ণ নিরসনের শেষ সুযোগ হিসেবেই বিশেষজ্ঞরা এই বৈঠককে দেখেছিলেন। এর আগে দুই দেশের কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে, গত সপ্তাহে প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকও হয়েছে মস্কোতে। কিন্তু কোনোটিই সত্যিকারের কোনো ফলাফল বয়ে আনেনি।
ওয়াং ও জয়শঙ্কর যে ৫ দফা সমঝোতায় উপনীত হয়েছেন, তাতে বলা হয়েছে যে ভারত ও চীন দুই নেতার মধ্যকার সমঝোতার নির্দেশনা অনুসরণ করবে। এই সমঝোতার অন্যতম বিষয় হলো, মতানৈক্যকে সঙ্ঘাতে পরিণত হতে দেয়া হবে না। সীমান্ত এলাকায় বর্তমান সঙ্ঘাত কোনো পক্ষের স্বার্থই হাসিল করবে না। দুই দেশের সীমান্ত সৈন্যদের উচিত হবে যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় দূরত্ব বজায় রাখা ও বর্তমান উত্তেজনা প্রশমিত করা।

বেইজিংয়ের সিংগুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ইনস্টিটিউটের গবেষণা বিভাগের পরিচালক কিয়ান ফেং গ্লোবাল টাইমসকে শুক্রবার বলেন, যৌথ বিবৃতি অনুযায়ী, দুই সরকার সর্বোচ্চ পর্যায়ে সঙ্ঘাত আর বাড়তে না দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
তিনি ৫ দফা সমঝোতার ব্যাপারে বলেন যে দুই দেশের মধ্যে এটি সংক্ষিপ্ত চুক্তি। এতে পরবর্তী পর্যায়ের আলোচনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

সমঝোতার মধ্যে রয়েছে চীন ও ভারতের বিশেষ প্রতিনিধিদের মাধ্যমে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা, পারস্পরিক আস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সঙ্ঘাত শুরু হওয়ার পর এই প্রথম একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলো এর মাধ্যমে।
অবশ্য, অতীতের এ ধরনের বৈঠকে হওয়া সমঝোতা লঙ্ঘনের ভারতের অতীত ইতিহাস বিবেচনা করে অনেক চীনা বিশেষজ্ঞ জোর দিয়ে বলছেন যে এই সমঝোতা বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়ে আশাবাদী হওয়ার সময় এখনো আসেনি।

সাংহাই একাডেমি অব সোসাল সায়েন্সের ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্সের রিসার্চ ফেলো হু জি ইয়ং বলেন, কাগজে-কলমে যৌথ বিবৃতিটি খুবই সুন্দর দেখাচ্ছে, কিন্তু ভারত উত্তেজনা প্রশমনে কাজ করবে কিনা তা এখনো অস্পষ্ট। কারণ ভারতের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
হু বলেন, ভারত কী বলছে তা নয়, বরং কী করছে, তাই আমাদের দেখা উচিত। ভারতের মতো দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সে কিভাবে কাজ করছে তা।

চীনা প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও ২০০৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করে দুই সরকার এক যৌথ বিবৃতিতে শান্তি ও সমৃদ্ধি বিকাশের জন্য একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেছিল। দুই সরকার এগ্রিমেন্ট অন দি পলিটিক্যাল গাইডিং প্রিন্সিপ্যাল ফর রিসলভিং দি বাউন্ডারি ইস্যু বিটউইন চায়না অ্যান্ড ইন্ডিয়া শীর্ষক একটি চুক্তিতে সইও করেছিল। এতে দুই দেশ সশস্ত্র বাহিনী হ্রাস ও শান্তি বজায় রাখার কথা বলেছিল।

তিনি গ্লোবাল টাইমসকে বলেন, কিন্তু মোদি ক্ষমতায় আসার পর ভারত সরকার ওই যৌথ বিবৃতিতে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে। চীন তার কথা রেখেছিল, কিন্তু ভারত সাম্প্রতিক সীমান্ত সঙ্ঘাতে ইন্ধন দিয়েছে।
দেশের মন্থর অর্থনীতি ও দুর্বল মহামারি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ীট বিবেচনা করে মোদি সরকার জনসাধারণের মনোযোগ সরিয়ে দিতে সীমান্ত উত্তেজনা ছড়িয়ে দিতে থাকবেন। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব সীমান্ত উত্তেজনাকে ব্যবহার করা হচ্ছে জনসাধারণকে বোকা বানানোর জন্য।
বিশ্লেষকেরা বলছে, চীনা সামরিক বাহিনরি কাছ থেকে জোরালো সমর্থন পাওয়ার কারণেও এবার এই সমঝোতা সম্ভব হয়েছে।

সম্প্রতি চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশনে এক ভিডিওতে চীনা সৈন্যদের ব্যাপক প্রস্তুতির বিষয়টি দেখানো হয়। এতে বোঝা যাচ্ছে, চীনা সৈন্যরা আসন্ন শীতে সম্ভাব্য সামরিক সঙ্ঘাতের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। এটি ভারতীয়দের মধ্যে ছায়াপাত করেছে বলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
হু বলেন, কেবলমাত্র শক্তিশালী সামরিক বাহিনীই ভারতের ঘুম ভাঙাতে পারে, কথা যথেষ্ট নয়।
কিয়ান বলেন, সীমান্ত সঙ্ঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর ফলে ভারত দেশের অন্যান্য সমস্যার দিকে নজর দিতে পারবে।

তিনি উল্লেখ করেন, ভারতে জাতীয়তাবাদ প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। আর তা বিভ্রান্ত হওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য ভারতের শীর্ষ নেতাদের সত্যিকারের পরীক্ষায় পরিণত হয়েছে। ভারত সরকারের উচিত চরম সামরিক পদক্ষেপ থেকে সংযত ও প্রতিরোধ করার মতো সক্ষমতা থাকা।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com