যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন: ভোটের আগে চরিত্রের পরীক্ষায় ট্রাম্প

0

হোয়াইট হাউস শাসনকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন বহুবার। তার কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা হয়নি এমন দিন বোধ হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না! বরাবরই এসবে থোড়াই কেয়ার ভাব দেখিয়েছেন ট্রাম্প। তবে নির্বাচনের আগমুহূর্তে যুদ্ধে নিহত মার্কিন সেনাদের নিয়ে তার পুরোনো এক বাজে মন্তব্যের অভিযোগ হঠাৎই সামনে চলে আসায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে রিপাবলিকানদের কপালে।

গত বৃহস্পতিবার প্রথমবার ট্রাম্পের বেফাঁস মন্তব্যের খবর প্রকাশ করে দ্য আটলান্টিক ম্যাগাজিন। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্যারিস সংলগ্ন মার্কিন সমাধিক্ষেত্র পরিদর্শনের সূচি বাতিল করেছিলেন ট্রাম্প। সেখানে শায়িত যুদ্ধে নিহত মার্কিন সেনাদের ‘লুজার’ ও ‘সাকারস’ বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। ওই একই সফরে আরেকটি আলাপচারিতায় ১৯১৮ সালে বেলে উডের যুদ্ধে প্রাণ হারানোয় ১ হাজার ৮০০ সেনাকে ট্রাম্প ‘সাকারস’ বলেছিলেন বলে দাবি আটলান্টিকের।

নির্বাচনের আগমুহূর্তে ম্যাগাজিনটির এমন দাবি রিপাবলিকানরা তো বটেই, সম্পূর্ণ গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন খোদ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও। তিনি সত্যিই এ কথা বলেছিলেন কি না এখন সেটাই হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে প্রধান আলোচ্য বিষয়। রিপাবলিকানরা বলছেন, ট্রাম্প মাঝেমধ্যে বিতর্কিত কথাবার্তা বললেও নিহত সেনাদের নিয়ে ওসব মন্তব্য কখনোই করেননি। তবে তাদের এ দাবি বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মূলত ট্রাম্পের চরিত্রই। এক্ষেত্রে সমালোচকরা টেনে আনছেন তার সাবেক অ্যাটর্নি মাইকেল কোহেনের বইয়ে লেখা কথাগুলোকে।

Trump

সম্প্রতি কোহেনের বইয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার পূর্বসূরি বারাক ওবামাকে নিয়ে বর্ণবাদী মন্তব্য করেছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বইটিতে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালে ওবামা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতার পর ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘কৃষ্ণাঙ্গ পরিচালিত এমন একটা দেশের কথা বলো যেটা শি*হোল নয়। তাদের সবগুলোই পুরোপুরি টয়লেটের মতো।’ দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার মৃত্যুর পর ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘ম্যান্ডেলা পুরো দেশটিকে *** দিয়েছেন। এটা এখন একটা শি*হোল। ম্যান্ডেলাকে ***। তিনি কোনও নেতাই নন।’

ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে এখন এখন মূল ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে, ভোটদানের ক্ষেত্রে মার্কিনিরা এধরনের কথাবার্তা বা চরিত্রকে কতটা গুরুত্ব দেয় সেটি। সেক্ষেত্রে ট্রাম্পের বাজি, মার্কিনিরা এসবের ধার ধারে না। এ কারণে একদিকে সেনা সদস্য ও তাদের পরিবারগুলোকে শান্ত করার চেষ্টা করলেও অন্যদিকে যুদ্ধনায়ক এবং সাবেক জেনারেলদের এখনও সমালোচনা করতে ছাড়ছেন না এ রিপাবলিকান নেতা।

২০১৬ সালের নির্বাচনের আগেও ঘটেছিল এধরনের ঘটনা। সেইসময় নারীদের যৌন হয়রানির বিষয়ে ট্রাম্পের প্রকাশ্যে বিতর্কিত মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল গোটা দেশে। এরপরও ওই নির্বাচনে ঠিকই জয় তুলে নিয়েছিল রিপাবলিকানরা। এবারের নির্বাচনের আগেও মার্কিন ভোটারদের সামনে সেই একই প্রশ্ন, ট্রাম্পের চরিত্র তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু কি না?

তবে বিশ্লেষকদের মতে, ২০২০ সালের পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। গত চার বছর ধরে প্রেসিডেন্টের মুখে বহুবার তীব্র শ্লেষাত্মক, যৌনতা ও বর্ণবাদী বক্তব্য শুনছে জনগণ, যেটা আগেরবার এত বেশি শোনা যায়নি। ফলে এবারের নির্বাচনে মত বদলাতে পারে অনেক ভোটারের।

নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন ঠিক এই সুযোগটাই নিতে চাচ্ছেন। তিনি নিজেকে ট্রাম্পের পুরোপুরি বিপরীত চরিত্রের মানুষ হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছেন। প্রেসিডেন্ট হয়ে চার বছরের মধ্যে ২৯৬তম দিন হিসেবে গত রোববার নিজের গলফ ক্লাবে হাজির হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই দিনই উইলমিংটনের একটি চার্চের কার্যক্রমে অংশ নিতে যান বাইডেন।

ডেমোক্র্যাটরা তাদের নির্বাচনী প্রচারণাতেও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরছেন ট্রাম্পের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো। যুদ্ধে নিহত সেনাদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর জো বাইডেন তো সরাসরি বলেই দিয়েছেন, এসব কথা যদি সত্যি হয় তাহলে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশ পরিচালনার যোগ্য নন ট্রাম্প।

এখন দেখার বিষয়, আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্পের চরিত্র সত্যিই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে কি না। নাকি এবারও সব বিতর্কের পাশ কাটিয়ে হোয়াইট হাউসের দখল নেবে রিপাবলিকানরা?

সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com