কোন পথে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধ?
সাম্প্রতিক সময়ে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর প্রভাব পড়েছে দু’দেশের অর্থনীতিতেও। এক দেশ অপর দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় দিন দিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও খারাপ থেকে খারাপের দিকে যাচ্ছে।
শুধু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কই নয়, দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কেও তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে। সম্প্রতি চীনের ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটকের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
টিকটক বন্ধ করে দিতে বার বার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনো চুক্তি না হলে চীনের বাইটড্যান্স কোম্পানির এই ভিডিও অ্যাপটি বন্ধ করে দেওয়া হবে।
বর্তমানে বিশ্বে টিকটক ব্যবহারকারী সংখ্যা ৫০ কোটির বেশি। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেই রয়েছে আট কোটি। বাইটড্যান্স এই অ্যাপের মাধ্যমে হয়ত চীনের কাছে ব্যবহারকারীদের তথ্য হস্তান্তর করতে পারে এমন আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় এটি বন্ধের হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প।
এছাড়াও টিকটক এর মার্কিন ব্যবহারকারীদের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করছে বলেও দাবি করেন প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্প। তবে টিকটক বলছে, এখন পর্যন্ত চীনকে কোন প্রকার তথ্য সরবরাহ করা হয়নি। এমনকি ব্যবহারকারীর তথ্য চীন চাইলেও তা টিকটক সরবরাহ করতে বাধ্য নয় বলে জানিয়েছে তারা।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমাগত চাপের কারণে হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের ব্যবসার অংশটি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হবে বাইটড্যান্স। শুধু টিকটক নয়, চীনের বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এই তালিকায় চীনের প্রযুক্তি কোম্পানি হুয়াওয়েও রয়েছে।
এদিকে, দু’দেশের এমন বৈরী সম্পর্কের কারণে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে, মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি অ্যাপল হয়তো চীন থেকে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেবে।
বিশ্বের পরাশক্তির এই দেশ দু’টি নিজ নিজ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে ব্যস্ত যা মোটেও অযৌক্তিক নয়। তবে দু’দেশের মধ্যে এতো সব বিরোধ থাকা স্বত্ত্বেও চীনে ওয়াল স্ট্রীটভিত্তিক বিভিন্ন কোম্পানি এবং অন্যান্য বিদেশি বিনিয়োগ প্রসারিত হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশি বিনিয়োগকে গুরুত্ব দিচ্ছে চীন। ফলে চীনের মূল ভূখণ্ডে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে। বিশেষ করে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো বিপজ্জনকভাবে চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের মধ্যেও ওয়াল স্ট্রীট ফার্মগুলোকে আকৃষ্ট করছে চীন।
তবে অর্থনৈতিক পরাশক্তির দেশ হিসেবে আবির্ভূত হতে হলে চীনকে অবশ্যই নিজেদেরকে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আরও শক্তিশালী করে তুলতে হবে। একই সঙ্গে লেনদেনের অবকাঠামো এবং তাদের মুদ্রা ইউয়ানকে আরও বেশি সহজেই রূপান্তরযোগ্য করে তুলতে হবে।