তুরস্ক-সৌদি বিরোধ

0

গত কয়েক বছর ধরে সৌদি আরবের সাথে তুরস্কের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। কারণ পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের তেল সমৃদ্ধ দেশ কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি আরবসহ চারটি প্রতিবেশী মুসলিম দেশের যৌথ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কাতারের সাথে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে তুরস্ক। কাতার এ অঞ্চলে সন্ত্রাসীদের অস্ত্র সরবরাহ করছে এমন অজুহাতে এবং ইরানের সাথে কাতারের সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবে ২০১৭ সালের ৫ জুন সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসর একযোগে এ নিষেজ্ঞা ঘোষণা করে স্থল, নৌ ও বিমানপথে কাতারের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে বাহরাইন।

আসল বিরোধ শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় যখন বিভিন্ন আরব দেশের আন্দোলন আর অভ্যুত্থানে পরস্পর বিপরীত পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল কাতার ও সৌদি আরব। আর ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের আক্রমণেরও বিরোধিতা করছে কাতার, ইরান ও তুরস্ক।

গত বছর তুরস্কে রাজধানী ইস্তানবুলে সৌদি দূতাবাসের অভ্যন্তরে সাংবাদিক জামাল খাশোগি খুন হবার পর দু’দেশের সম্পর্কের ফাটল আরো বৃদ্ধি পায়।

সম্প্রতি সৌদি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতিহাসের পাঠ্যবইয়ে উসমানীয়দের দ্বারা তাদের দেশ পরাস্ত করার বিবরণ সংশোধন করে নিয়েছে। উসমানিয়া শাসকদেরকে দখলদার হিসেবে চিহ্নিত করে তারা নতুন প্রজন্মের জন্য নতুন ইতিহাস রচনা করেছে।
ইতিহাস সংশোধনের অংশ হিসেবে সম্প্রতি সৌদি আরবে রাজধানী রিয়াদের একটি প্রাচীন সড়কের নাম বদলে দেয়া হয়েছে। উসমানিয়া সম্রাট সুলতান সোলায়মানের নামে নামকরণে করা এ সড়কটির নাম পরিবর্তনের পেছনে সৌদি-তুর্কি সম্পর্কের অবনতিকে চিহ্নিত করা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধমে।

ইউরোপীয় দেশ গ্রিসের সাথে অনেক বছর ধরেই তুরস্কের বিবাদ চলে আসছে। প্রতিবেশী দু’দেশের দক্ষিণে অবস্থিত ভূমধ্যসাগরে তেল-গ্যাস আহরণ নিয়ে এ বিবাদ এখন ভয়াবহ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। গ্রিস যুদ্ধের ভাষায় কথা বলছে। কোনো রকম পিছু হটতে রাজি নয় তুরস্ক। উত্তেজনাকর পরিস্থিতি যেকোনো মুহূর্তে একটা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের রূপ নিতে পারে।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ তুরস্কের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে সৌদি আরব, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। ইসরাইলের সাথে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন ও গ্রিসের সাথে যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়ে আমিরাত প্রকাশ্যেই তুরস্কের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে।

তুরস্ক আর ইরান এ চুক্তিকে মুসলমানদের বিশেষ করে ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে আমিরাতের বিশ্বাসঘাতকতা বলে ঘোষণা করেছে। ভূমধ্য সাগরীয় অপর একটি দেশ লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে তুরস্ক আর মিসর পরস্পরবিরাধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে চুক্তি সই হবার পর ইসরাইলও প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে দিয়েছে গ্রিসকে।
এরকম জটিলতার মধ্যে মূলত তুরস্কের ইসরাইলবিরোধী ভূমিকার কারণে দারুণ নাখোশ আমেরিকা। সম্প্রতি তুরস্ক মিসাইল কেনার জন্য রাশিয়ার সাথে চুক্তি করার পর আমেরিকা থেকে তুরস্কের যুদ্ধ বিমান কেনার চুক্তি বাতিল করে দিয়েছে ট্রাম প্রশাসন। বিপরীত দিকে ফ্রান্স যুদ্ধ জাহাজ আর যুদ্ধ বিমান পাঠিয়ে গ্রিসের পক্ষে শক্তি যোগান দিচ্ছে।

তুরস্ককে ঘিরে ময়দানে নেমে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বেশ কয়েটি যুদ্ধবাজ দেশ ও বৃহৎ শক্তি আমেরিকা। এদিকে রয়েছে আঞ্চলিক শক্তি ইরান ও রাশিয়া।

পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ ১৯১৪ সালের প্রথম মহাযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। তখন বাজার দখল আর সম্পদ লুটের লোভে ইউরোপের শক্তিশালী দেশগুলো নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। তুরস্ককে লড়তে হয়েছিল ইউরোপীয় শক্তির বিরদ্ধে। আর ওই যুদ্ধেই ভেঙ্গে পড়েছিল উসমানিয়া সাম্রাজ্য।

সেদিন কেউই যুদ্ধ চায়নি। চেয়েছিল নিজ নিজ দেশর স্বার্থ রক্ষা করতে। তাতেই মহাযুদ্ধ বেঁধে গিয়েছিল।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com