স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন: ইসির আইন করার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন চার কমিশনারের

0

‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে নির্বাচন পরিচালনা আইন’-এর খসড়া তৈরিতে নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চার নির্বাচন কমিশনার। তারা বলেছেন, বিদ্যমান আইনে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় বিধিমালা তৈরির এখতিয়ার দেয়া হয়েছে, আইন প্রণয়ন নয়। এছাড়া তারা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন নিয়েও আপত্তি জানিয়েছেন। সোমবার কমিশনের ৬৯তম সভায় কমিশনাররা এসব প্রশ্ন তোলেন। সভায় নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে আইন তৈরির বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নেন। এতে আরপিওতে ৯১ই ধারা বাতিলের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এতে নির্বাচন কমিশন নখ দন্তহীন বাঘ নয়, বিড়ালে পরিণত হবে। কমিশনারদের আপত্তির কারণে ওই সভায় খসড়া আইন অনুমোদন দেয়া হয়নি। আগামী সোমবার আবারও বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে সোমবার নির্বাচন ভবনে কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে নির্বাচন পরিচালনা আইন’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তোলা হয়। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত এ আইনের খসড়া তৈরির এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কমিশনাররা। এর আগেও কমিশনের আরেক সভায় এ আইনের খসড়া তৈরি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন কমিশনাররা।

জানা গেছে, কমিশনার মাহবুব তালুকদার তার নোট অব ডিসেন্টে বলেন, নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন পরিচালনা আইন সংস্কারের যে প্রস্তাব করেছে তার সঙ্গে আমি একমত নই। কেবল নির্বাচন পরিচালনার জন্য ভিন্ন আইন হতে পারে না। এতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামো, মেয়াদকাল ইত্যাদি পরিবর্তন নির্বাচন কমিশনের কর্তব্য নয়। বিশেষত স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পদ ও পদবি পরিবর্তন নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার নয়। এই সংস্কার কার্যক্রম নিতান্তই স্থানীয় সরকারের বিষয়।

সভায় নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় যেসব প্রস্তাব আনা হয়েছে সেটি আইনে রূপ নিলে অন্য অনেক আইনের পরিবর্তন ও সংশোধন আনতে হবে। অন্যথায় অন্য আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। আইন সংস্কার কমিটিকে পাশ কাটিয়ে আইনে খসড়া তোলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এ সংক্রান্ত কমিটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম। 

বৈঠকে তিনি বলেন, আইন সংস্কার কমিটির প্রধান হয়েও খসড়া আইনের কপি পাইনি, যা দুঃখজনক। খসড়াটি কমিটির মাধ্যমে কমিশন সভায় তোলার কথা ছিল, কিন্তু তা করা হয়নি। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণ দেখিয়ে আইন সংস্কার কমিটিকে পাশ কাটানো হলেও কমিটির প্রধানকে অন্তত জানানো দরকার ছিল।

স্থানীয় সরকারের পৃথক আইন থাকার পরও নতুন আইনের খসড়া তৈরির এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের আইনগুলো সংসদে পাস হয়েছে। সেখানে নির্বাচন কমিশনকে বিধি করার এখতিয়ার দেয়া হয়েছে। আমরা কেন নতুন আইন করতে যাচ্ছি। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আইন করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তাদের আইন আমরা কিসের ভিত্তিতে করছি। সভার একপর্যায়ে সিইসি কেএম নূরুল হুদা জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কমিশনের যোগাযোগ হয়েছে। তারা সম্মতি দিয়েছে। 

এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, তাহলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আমাদের চিঠি দিয়ে তাদের সম্মতির কথা জানানোর পর আমরা আইন নিয়ে এগোতে পারি। তারা সম্মতি দিলে সিটি কর্পোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদসহ যেসব প্রচলিত নাম অক্ষুণ্ন রেখে খসড়া তৈরি করতে পারি। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম পরিবর্তন করা ঠিক হবে না।

সিইসি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আমার ওপর আস্থা রাখতে পারেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ইসির যোগাযোগ হয়েছে। আমরা খসড়া চূড়ান্ত করার পর তা মতামতের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করব। সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে খসড়া চূড়ান্ত করার আশ্বাস দেন সিইসি। আগামী সোমবার আবারও বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আলাদা আইন রয়েছে। ওই আইনগুলোর নির্বাচনী সংক্রান্ত যে চ্যাপ্টারগুলো রয়েছে সেগুলো পাঁচটি আইনে আলাদা করে না রেখে ওইগুলোকে একটি আইনের মধ্যে নিয়ে আসতে একটি আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। সোমবার বৈঠকে সেটি তোলা হয়। আলোচনা করে কিছু কিছু জায়গায় সংশোধনীর প্রস্তাব এসেছে। আগামী সোমবার আবার কমিশন সভায় তা তোলা হবে। ওইদিন যদি আরও মতামত আসলে তা চূড়ান্ত করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। সবার মতামতের ভিত্তিতে কমিশন এটি চূড়ান্ত করলে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। তারাও তাদের আইনগুলোকে হালনাগাদ করতে একটি কমিশন গঠন করবে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে রয়েছে। কমিশন গঠন হলে তখন হয়তো সেখানেও এই সংশোধনীর বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। প্রয়োজনীয় সংশোধনীর প্রস্তাব আসবে। এই আইন প্রণয়নে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আইনগুলোতে পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়বে না বলেও মন্তব্য করেন সচিব। তিনি বলেন, আইনটি বাংলায় করলেও একটা প্রস্তাব আছে যে প্রচলিত শব্দগুলোর বাংলা নামের পাশে ইংরেজি শব্দ থাকবে। যেমন মেয়র শব্দের পাশে নগরপিতা বা মহানগর প্রধান শব্দ রাখা হবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com