এমপি কন্যার একি কান্ড!
সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ। প্রচলিত এ কথাটি বাস্তব করে তুলেন ক্ষমতাশালীরা। ক্ষমতার অপপ্রয়োগ হরহামেশা করছে তারা। এক এমপি কন্যার ক্ষমতার প্রভাব এখন মুখরোচক আলোচনায়। হতবাক হওয়ার মতো ঘটনা। বুধবার একটি টিভির অনলাইন ভার্সনের এ রিপোর্টটি চমকে উঠার মতো। জামালপুরের এক এমপি কন্যা এক মাসের অসুস্থতার ছুটি নিয়ে ১১ বছর ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। ইসলামপুর উপজেলার জে জে কে এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন এমপি কন্যা।
এ রিপোর্টে রমেশ কুমার পার্থ নামের একজন মন্তব্য লিখেছেন, নীতি নৈতিকতাবোধ কি কেবল অসহায় জনগণের জন্য প্রযোজ্য ? এই পদে কি একজন বেকারের কর্মসংস্থান হতো না? আব্দুর রশীদ নামের একজনের মন্তব্য এমন- আজব দুনিয়া রঙ্গীন মানুষ। এনামুল বাবু নামে একজন লিখেছেন-বাহ,বাহ,বাহ।
ঘটনাটি কি? জামালপুর- ২ আসনের এমপি ফরিদুল হক খান দুলালের কন্যা ফারজানা হক। ২০০৫ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হিসেবে চাকরি পান ফারজানা। ২০০৯ সালে জে জে কে এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেন। সেখানে কয়েকদিন ক্লাস নেন। পরে ওই বছরই তিনি অসুস্থতাজনতি কারণে এক মাসের ছুটি নিয়ে স্বামী সন্তান নিয়ে অস্ট্রেলিয়াতে চলে যান। এরপর থেকে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। বিষয়টি সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ফরিদুল হক খান দুলাল অকপটে স্বীকারও করেছেন। বলেছেন, তার মেয়ে স্বামী নিয়ে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। সেখানে একটা ব্যবস্থা হলেই এর একটা সুরাহা হবে। আগামী সেপ্টেম্বর অক্টোবরের মধ্যে এ বিষয়টি সমাধান হবে বলে তিনি জানান।
জে জে কে এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আশরাফুর রহমান বলেন, ওই শিক্ষিকা বিদ্যালয়ে না আসলেও বেতন উত্তোলন করেন না। তবে তার পদ থেকে অব্যাহতিও দেননি। তবে শুনেছি, তিনি অস্ট্রেলিয়া থেকে কিছুদিনের মধ্যে এসে এর একটা ব্যবস্থা করবেন। এ ব্যাপারে ইসলামপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ফেরদৌসের বক্তব্য হলো-, ওই শিক্ষিকা ২০০৯ সালে অসুস্থতাজনিত কারণে এক মাসের ছুটি নেন। এরপর থেকে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তবে তিনি এরপর থেকে বেতনও উত্তোলন করেননি। এই শিক্ষা কর্মকর্তা বেতনের উপর জোড় দিচ্ছেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী বেতন না নিলেই যেন সব জায়েজ। এক মাসের ছুটি নিয়ে ১১ বছর অনুপস্থিত শুধু বাংলাদেশেই সম্ভব। প্রশ্ন হলো- এতো বছরেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি কেন? এমপির মেয়ে বলে? উপজেলায় উপজেলায় শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাজ কি? অফিসে বসে সময় কাটানো আর মাস শেষে বেতন নেয়া? এমনটি হলেতো শিক্ষা কর্মকর্তার দরকার নেই। সরকার এসব কর্মকর্তা পোষে লাভ কি? শুধুমাত্র অর্থের অপচয়। এখানে আরেকটি প্রশ্ন? এগার বছর ফারজানা কেন চাকরি ছাড়েন নি? কেন জেনে শুনে ছুটি নিয়ে দেশের বাইরে চলে গেলেন? সংশ্লিষ্ট রিপোর্টার জাহাঙ্গীর আলমকে প্রশ্নটি করতেই ভয়াবহ তথ্য দিলেন তিনি। বললেন, এভাবে চাকরির সময়টুকু পার করতে পারলে মোটা অঙ্কের পেনশন পেতেন। এ ইচ্ছা থেকেই বিষয়টি গোপন রেখেছেন এত বছর। জাহাঙ্গীর আরো জানালেন ফারজানা ওই বিদ্যালয়ে যান আরেক শিক্ষিকাকে চরাঞ্চলে বদলি করে। এগার বছর পর কিভাবে জানলেন? বললেন, ঠাকুর ঘরে কেরে, আমি কলা খাইনির মতো অবস্থা। সেই বুড়ির গল্পের মতো। বাংলাদেশ- ভারত সীমান্তের খুব কাছাকাছি দিয়ে এক বুড়ি আপন মনে হেটে চলেছেন। হাতে তার একটি বড় মিষ্টিকুমড়া। পাশ দিয়ে দ্রুত বেগে বিজিবির একটি গাড়ি বুড়িকে পাশ কেটে এগিয়ে যায়। একটু সামনে গিয়েই জোড়ে ব্রেক কষে থেমে যায় গাড়িটি । পেছনের দিকে আসতে থাকে। বুড়ির কাছে এসে থেমে যায়। দু’ বিজিবি সদস্য নেমে আসে গাড়ি থেকে। মা’ আপনি কোথায় যাবেন? চলুন আপনাকে জায়গামতো নামিয়ে দেবে। বুড়ির ঝটপট উত্তর-না বাবা আমার মিষ্টি কুমড়ার মধ্যে কিছু নেই। বুড়ির উত্তর শুনে বিজিবি সদস্যের চরকগাছ। একি বলে বুড়ি। তাহলে নিশ্চয় মিষ্টিকুমড়ার মধ্যে কিছু আছে। দ্রুত মিষ্টিকুমড়া হাতে নিয়ে দেখতে পায়-এটি মাঝ দিয়ে কাটা। খুলে দেখা যায়-এর ভেতর ৪/৫টি ভারতীয় শাড়ি। বুড়ি সীমান্তের ওপার থেকে অভিনব কায়দায় শাড়ি নিয়ে এসেছে। বুড়ি হেটে যাচ্ছে দেখে বিজিবি সদস্যদের মনে দয়া জাগে। তারা একই দিকে যাচ্ছে। বুড়িকে জায়গামতো নামিয়ে দেবে। এটাই ছিল উদ্দেশ্য। গাড়িতে চড়ার কথা বলতেই বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা।
শেষ কথা হলো, ক্ষমতাবানদের ক্ষমতার অপব্যবহার যতো দিন বন্ধ না হবে, ততোদিন সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ- এই বদনাম থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেনা।