ভারত-চীন সীমান্ত সংঘর্ষ: মোদি সরকারের সমালোচনায় সোচ্চার বিরোধীরা

0

ভারত ও চীনা সেনাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় ভারতের বিভিন্ন বিরোধীদল নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছে। অন্যদিকে, হিমাচল প্রদেশে চীন সীমান্ত লাগোয়া জেলাগুলোতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। 

গত (সোমবার) রাতে লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত এবং চীনা সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষে কমান্ডিং অফিসার পদের কর্নেলসহ কমপক্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছে। 

এ ব্যাপারে ভারতের প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা, সাবেক অর্থ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পি চিদাম্বরম প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেছেন, ‘৫ মে’র পর থেকে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে নীরব। বিদেশি সেনা ভূখণ্ড দখল করে বসে রয়েছে, অথচ দেশের প্রধান চুপ, অন্য কোনও দেশে এমন হতো বলে ভাবা যায়?’

গতকাল (মঙ্গলবার) কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিং সূর্যেওয়ালা বলেন, ‘গতরাতে আমাদের সেনারা নিহত হলেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিল দুপুর ১২টা ৫২ মিনিটে। কিছুক্ষণ পরেই সেটি পরিবর্তন হল। এ সব কেন হল, জবাব চাই।’

কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সূর্যেওয়ালা

কংগ্রেস বলেছে, ‘গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় সেনাদের শহীদ হওয়ার সংবাদ প্রতিটি দেশবাসীকে কষ্ট দিচ্ছে। কিন্তু এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নীরবতা বরদাস্ত যোগ্য নয়। প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী দেশবাসীর সামনে জবাবদিহি থেকে পালাচ্ছেন। মোদি সরকার সীমান্ত বিরোধ ইস্যুতে নীরব ছিল এবং দেশের মানুষকে অন্ধকারে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু আমাদের সেনাদের শহীদ হওয়ার বিষয়ে মোদি সরকারকে জবাব দিতে হবে। যদি সীমান্তে সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, তবে কোন পরিস্থিতিতে সেনাদের শহীদ হতে হয়েছিল? আমাদের সেনাদের শহীদ হওয়া নিয়ে বিভ্রান্তি কেন? মোদী সরকার কী সীমান্তে অচলাবস্থা লুকানোর চেষ্টা করছিল? ২০২০ সালের এপ্রিল/মে মাসে আমাদের এলাকার কত অংশ চীনা সেনারা দখল করেছে, দেশবাসীকে প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে তা অবশ্যই অবহিত করতে হবে। এই বিষয়ে নীরব থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী লুকোতে পারবেন না।’

কংগ্রেস বলেছে, ‘নেপাল তার মানচিত্র পরিবর্তন করে ভারতের অঞ্চল নিজেদের অধীনে দেখাচ্ছে, চীন ভারতের সীমান্ত দখলে ব্যস্ত, পাকিস্তান ভারতে সন্ত্রাসবাদ ছড়াচ্ছে। এতকিছু হওয়ার পরেও প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী কখন তার নীরবতা ভঙ্গ করবেন?’

কংগ্রেসের প্রশ্ন, ‘লকডাউন চলাকালীন অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতি সরকারের উদাসীন মনোভাব বা ভারত সীমান্তে চলমান অচলাবস্থার সময় প্রতিটি ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা দেশবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকের মতো বলে মনে হচ্ছে। এ সব বিষয় কতদিন প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন এড়িয়ে যাবেন?’

অন্যদিকে, সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, ‘সরকারের উচিত, ঠিক কী হয়েছে সে ব্যাপারে আরও দায়িত্বপূর্ণ বিবৃতি দেওয়া।’

জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির টুইটার হ্যান্ডেলে তাঁর মেয়ে ইলতিজা বলেন, চীনের সামনে ভারতের ‘ঘর মে ঘুসকে মারেঙ্গে’ (ঘরে ঢুকে মারা) রণনীতি কোথায় গেল? কেন প্রত্যাঘাতের কোনও কথা বলা হচ্ছে না, সেটা সবাই জানতে চায়।

ইলতিজা মুফতি ও মেহবুবা মুফতি

পিডিপি’র সচিব বেদ মহাজন বলেন, ‘পাল্টা মার দরকার। এটা ১৯৬২ সাল নয়,  এটা ২০২০ সাল। ওই আগের কথা বলে কোনও লাভ নেই।‘

জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেন, সেনা কমানোর সময় যদি এরকম ঝামেলা হয়, তাহলে আসলে ঠিক কতটা গণ্ডগোল রয়েছে, সেটা ভাবুন।

জম্মু-কাশ্মীরের কংগ্রেস প্রধান গুলাম আহমেদ মীর বলেন, রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা যেকোনও সরকারের কর্তব্য। সরকারের উচিত কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করা। অন্যথায় সেনাকে নির্দেশ দেওয়া হোক আমাদের ভূমি সুরক্ষিত করার জন্য।

এদিকে, সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমে প্রকাশ, ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে সীমান্তের পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণের।

অন্যদিকে, গত সোমবার লাদাখ সীমান্তে তীব্র সংঘর্ষের পরে বস্তুত চীনের অবস্থান আরও কঠোর  হয়েছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কার্যত হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, ভারত যেন একতরফা কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভুল না করে। চীন শান্তি চায়। তবে চীন ভয় পায় না।

পাল্টা জবাবে ভারত বলেছে, চীন চাইলে এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না। ভারত সর্বদা নিজের সার্বভৌম ভূখণ্ডেই সীমাবদ্ধ থাকে। আমরা আশা করি, চীনও সেই নীতিই মেনে চলবে।

এদিকে, লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষের জেরে ভারতের হিমাচল প্রদেশে অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। নিরাপত্তা এজেন্সিগুলো সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। চীন সীমান্ত লাগোয়া কিন্নৌর, লাহৌল-স্পিতিতে সতর্কতা জারি  করেছে প্রশাসন। পুলিশ সদর দফতর থেকে উভয় জেলার পুলিশ সুপারকে অতিরিক্ত সাবধানতা ও সতর্কতা অবলম্বনের জন্য নির্দেশ জারি করা হয়েছে।

হিমাচল ও চীনের মধ্যে প্রায় ৫০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। সীমান্তে  নজরদারি ও সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে। লাহৌল-স্পিতি’র পুলিশ সুপার রাজেশ ধর্মানি জানান, জেলার থানা ও ফাঁড়ির চৌকিকে সতর্ক করা হয়েছে এবং টহলদারি বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে।

হিমাচল পুলিশের মুখপাত্র কুশল শর্মা বলেন, লাদাখ সেক্টরে ভারত ও চীনা সেনার মধ্যে সাম্প্রতিকতম সংঘর্ষের কথা মাথায় রেখে কিন্নৌর ও লাহৌল-স্পিতিতে অ্যালার্টসহ সতর্কতামূলক নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। একদিকে, স্থানীয়দের নিরাপত্তার বিষয়টি যেমন মাথায় রাখা হচ্ছে, অন্যদিকে ভবিষ্যতের জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, উভয় জেলার জনবহুল সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে বিশেষ পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও সজাগ থাকতে এবং প্রতিটি ছোট তথ্যও সদর দফতরে জানাতে বলা হয়েছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com