পুলিশ ছাড়াই যেভাবে পরিচালিত হবে মিনিয়াপোলিস

0

বিক্ষোভকারীদের দেওয়া অন্যতম স্লোগান, ‘পুলিশের তহবিল বন্ধ কর’। কারও কারও কাছে এর মানে পুলিশ বাহিনীর বিলোপ। বিক্ষোভকারীরা চাইছে পুলিশের বরাদ্দ কাটছাঁট করে সে অর্থ দারিদ্র্য, মানসিক স্বাস্থ্য ও আসক্তিজনিত সমস্যা মোকাবিলায় খরচ করা হোক।

ফ্লয়েড পুলিশি হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার পর মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম শহর মিনিয়াপোলিস সিটি কাউন্সিলের ১২ জন সদস্যের মধ্যে ৯ জনই স্থানীয় পুলিশ বিভাগ ভেঙে দেওয়ার পক্ষে সম্মতি দিয়েছেন। জনগণের নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য পুলিশ বিভাগের বদলে একটি নতুন কমিউনিটিভিত্তিক ব্যবস্থা চালুর জন্য সুপারিশ করেছেন তারা। এরইমধ্যে কাউন্সিল সদস্য জেরেমিয়াহ এলিসন টুইটার পোস্টে জানিয়েছেন, মিনিয়াপোলিসের পুলিশ বাহিনী ভেঙে দিচ্ছে সিটি কাউন্সিল।

এখন কী করা হবে?

পুলিশ বাহিনী ভেঙে দেওয়ার পর নতুন আইন প্রয়োগকারী ব্যবস্থা কেমন হবে তা নিয়ে বিস্তারিত জানায়নি মিনিয়াপোলিস কর্তৃপক্ষ। সিটি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট লিসা বেন্ডার জানিয়েছেন, ভেঙে দেওয়ার পরও সংক্ষিপ্ত পরিসরে একটি পুলিশ বাহিনী থাকবে। যেহেতু ৯১১ ফোন কলের বেশিরভাগই জরুরি চিকিৎসা সহায়তা ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সংক্রান্ত, সে কারণে তহবিল বরাদ্দের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

শহর কর্তৃপক্ষ পুলিশের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের বড় একটা অংশ এখন মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক কাউন্সেলর ও মাদকাসক্তি নিয়ন্ত্রণকারী বিশেষজ্ঞদের জন্য খরচ করবে। আর পুলিশ বাহিনীর যে ছোট অংশটি থেকে যাবে, তারা কোনও সংকটের মুখে  কমিউনিটির সঙ্গে কর্তৃপক্ষীয় ভূমিকায় হাজির থাকতে পারবে না।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ১ কোটি মানুষ গ্রেফতার হয়। শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গরা অনেক বেশি সহিংস-গ্রেফতারের শিকার হয়ে থাকেন। জাল টাকার ব্যবহারসহ ছোটখাটো অভিযোগেই বেশিরভাগ গ্রেফতার ঘটে। ফ্লয়েডের বিরুদ্ধেও জাল টাকা রাখার অভিযোগ তোলা হয়েছিল।

গার্ডিয়ান আভাস দিয়েছে, নতুন মডেলের আওতায় ব্যাপকতর সমাজসেবার পাশাপাশি কমিউনিটিভিত্তিক পুলিশ ব্যবস্থা রাখা হতে পারে। কোনও ইস্যু অপরাধে পরিণত হওয়ার আগেই যেন তা মোকাবিলা করা যায় সে ব্যাপারে তারা কাজ করবে।

পুলিশের বেসামরিকরণ করা হতে পারে, তাদের জন্য সাজোঁয়া যান, ভারী অস্ত্র ও টিয়ার গ্যাসের ব্যবহার নিষিদ্ধ হতে পারে। সহিংস না হয়েও কিভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায় সে ব্যাপারে পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতে পারে। গ্রেফতারের সময় ঘাড় চেপে ধরাসহ বিভিন্ন আগ্রাসী পদ্ধতি বেআইনি ঘোষণা করা হতে পারে।

কিছু কিছু শহর এরইমধ্যে এ পথে হাঁটা শুরু করেছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র এরিক গারসেট্টি জানিয়েছেন, পুলিশের জন্য বরাদ্দকৃত তহবিল থেকে ১৫ কোটি ডলার কাটছাঁট করবেন তিনি। নিউ ইয়র্কের মেয়র বিল দে ব্লাসিও জানিয়েছেন, পুলিশের জনৗ্য বরাদ্দের একটা অংশ তরুণদের জন্য নেওয়া উদ্যোগ ও সমাজসেবায় ব্যয় করা হবে।

অবশ্য, নিউ ইয়র্কের কাউন্সিল সদস্যরা পুলিশকে নিয়ে আরও গভীরভাবে ভাবার জন্য চাপ দিচ্ছেন। স্থানীয় পুলিশ বাহিনীর তহবিল থেকে ১০০ কোটি ডলার সরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করেছেন তারা।

এর আগে ২০১৩ সালে নিউ জার্সির ক্যামডেন শহরে স্থানীয় পুলিশ বাহিনী ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে চালু হয় কমিউনিটিভিত্তিক পুলিশ ব্যবস্থা। উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে তা নিয়ে কমিউনিটি পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, শক্তির ব্যবহার নিয়ে কঠোর বিধি আরোপ করা হয়েছে। একেবারে নিরুপায় না হলে শক্তি প্রয়োগ সেখানে নিষিদ্ধ। এর ফলও পাওয়া গেছে। ২০১৪ সাল থেকে ক্যামডেনে পুলিশের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োগজনিত অভিযোগ ৯৫ শতাংশ কমে গেছে।

২০২০ সালের ২৫ মে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম শহর মিনিয়াপোলিসে পুলিশি হেফাজতে হত্যার শিকার হন জর্জ ফ্লয়েড। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা ১০ মিনিটের ভিডিওতে দেখা গেছে, হাঁটু দিয়ে নিরস্ত্র ফ্লয়েডের গলা চেপে ধরে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে ডেরেক চাওভিন নামের এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ সদস্য। এই হত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ চলছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com