শৈশবের দুরন্ত মেধাবী কমল থেকে রাষ্ট্রপতি জিয়া ,একটি নক্ষত্রের সমাধি।

0

১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বাংলাদেশের বগুড়া জেলার বাগবাড়ী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন শহীদ রাষষ্ট্রপতি জিয়াউররহমান। শৈশবে তাঁকে আদর করে ডাকা হত কমল নামে। কে জানত সেই ছোট্র কমলই হবেন বাংলাদেশের স¦াধীনতার ঘোষক, কে জানত সেই ছোট্র কমলই হবেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের চাকরী জীবনের শুরু থেকে তাঁরজীবনের শেষ দিনটি আগ পর্যন্ত ছোট সময়টির স্বরণে আমার আজকের এই  সংক্ষিপ্ত লেখাটি।

১. সাহসি  জিয়া: প্রাথমিক জীবনের ইতি টেনে জিয়াউর রহমান যখন পেশাগত জীবনে প্রবেশ করেন তখন থেকেই তাঁর মধ্যেলক্ষ করা যায় মেধা আর সাহসের। ১৯৫৩ সালে মিলিটারি একাডেমীতে ক্যাডেট হিসাবে যোগ দেওয়ার মাত্র দুই বছরের মাথায়অর্থাৎ ১৯৫৫ সালই কমিশনড প্রাপ্ত হন। অল্প দিনেই তিনি সামরিক বাহিনীতে সবার নজর কাড়তে শুরু করুন। পরিচিতি লাভকরেন একজন সুদক্ষ প্যারাট্র্রপার ও কমান্ডো হিসেবে। করাচীতে জিয়াকে বেশীদিন থাকতে হয়নি।  ১৯৫৭ সালেই বদলি হয়েআসেন পুর্বপাকিস্থানে। নিজের মাতৃভূমি যেন তাঁকে আমন্ত্রন জানাতে শুরু করল। তখন থেকেই জিয়াউর রহামনের নেতৃত্ব ওবীরত্বের এক অভূতপূর্ব  বহিঃপ্রকাশ ঘটতে শুরু করে।  ১৯৬৫ সালে খেমখারান রনাঙ্গনে পাক-ভারত যুদ্ধে এক নজীরবিহীনবীরত্বের প্রমাণ দেন জিয়াউর রহমান। তাঁর এই অসীম বীরত্বের পুরস্কার হিসেবে তাঁকে হিলাল-ই-জুরাত খেতাবে ভুষিত করা হয়।  পরে ধাপে ধাপে কর্ম এবং বিশেষ প্রশিক্ষনের মাধ্যমে ১৯৭০ সালে তিনি একজন মেজর হিসেবে পদ উন্নতি করেন। এবং অষ্টমইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের  সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুতেই যখন পাকিস্তানী আর্মিরা ২৫শে মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের উপর হামলা চালায় এবং  শেখমুজিবুর রহমানকে বন্দী করে নিয়ে যায় তখন অন্যান্য নেতারাও ভয়ে চলে যান আতœগোপনে। পুর্বপাকিস্তান তখন নেতৃত্ব শুন্য।তখনই জিয়া অনুভব করলেন মাতৃভুমির প্রতি তাঁর নাড়ীর টান । সাথে সাথে বিদ্রোহ ঘোষনা করলেন পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর  সাথে। সারা দেশের মানুষ তখন অসহায় । দিশেহারা হয়ে পড়েছিল সবাই।

তখন জিয়াউর রহমানই ছিলেন একমাত্র ভরসা।  এক মুহুর্তই নষ্ট করতে চাননি জিয়া । অসীম সাহকিতা বুকে নিয়ে নিজেরমাতৃভূমির স্বাধীনতা ঘোষনার সিদ্ধান্ত নেন। ২৬ মার্চ সেখান থেকে মারচ করে ২৭ শে মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বজ্রকন্ঠেপাঠ করেন স্বাধীনতার ঘোষনা। দেশের জনগন শুনতে পায় আমি মেজর জিয়া বলছি…………………………..। 

এই সাহসিকতা যদি জিয়াউর রহামানের না থাকত তাহলে দেশের মানুষের পক্ষে স্বাধীনতার স্বাদ আজ উপভোগ করা সম্ভবকতটুকু হত তা ছিল অনিশ্চিত।

২. মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ যোদ্ধা জিয়া: জিয়াউর রহমান শুধু স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েই আরাম আয়েশে ঘরে বসে থাকেননি। ববংতিনি ছিলেন রনাঙ্গনে পাকবাহিনীর আতংক । তিনি সামনের সারিতে থেকে তাঁর বাহিনী নিয়ে স্বদর্পে বীরত্বের সাথে যুদ্ধপরিচালনা করেন। মাত্র অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই হঠিয়ে দিয়েছিলেন হানাদার বাহিনীকে -দখল করে নিয়েছিলেন চট্রগ্রাম ওনোয়াখালী অঞ্চল। সংগঠিত করেছিলেন ছাত্র,যুব , সেনা সবাইকে । এঁদের নিয়ে এবং ১ম,৩য়,  ও অষ্টম ইস্ট বেঙ্গলরেজিমেন্টএর সমন্বয়ে গঠন করেন মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রনে সশস্ত্র ব্রিগেড জেড ফোর্স। জেড ফোর্সে অধিনায়ক হিসেবে জিয়াসম্মুখ সমরে রয়েছেন পাক হানাদার বাহিনী আতœসমর্পন এর আগপর্যন্ত। সম্মুখ যুদ্ধে জিয়াউর রহমানের -সাহসীকতা, সাংগঠনিক ক্ষমতা, যুদ্ধপরিচালনা এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ছিল অনবদ্য ভূমিকা যা বাঙ্গালী জাতি কোন দিল ভূলতে পারবেনা। তাই তিনি পেয়েছিলেন বীর উত্তম খেতাব।

৩. স্বাধীনাত পরবর্তীতে দেশ গঠনে জিয়া: যুদ্ধ পরবর্তী সময় জিয়াউর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে কর্মস্থলে আবার ফিরে যানপদউন্নতি সমেত। তারপর শুরু হয় আরেক অধ্যায়। সদ্য স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করাহয় ১৫ আগষ্ট ১৯৭৫ সালে। ১৯৭৫ সালের আগে জিয়াউর রহমানের সেনাবাহিনীতে পদউন্নতি হয়েছিল।  শেখ মুজিবুররহমানের মৃত্যর ঠিক ১০ দিন পর তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন। তারপর চলে আসে নভেম্বর ১৯৭৫ । ঘটে যায় অনেককিছু । জিয়ার বিরুদ্ধে সকল চক্রান্তের অবসা ঘটিয়ে সৃষ্ট হয় ৭ই নভেম্বরের। যার ইতিহাস সবারই জানা। 

প্রিয় পাঠক ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বরের পরেই কিন্তুু রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুর সুচনা হয় জিয়াউর রহমানে জীবনে। তিনিঅগোছালো বাংলাদেশকে নিয়ে প্রবলভাবে চিন্তা করতে শুরু করেন। এর আগে রাজনীতি করা দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার কোন রকমইচ্ছা বা চিন্তা শক্তি কাজ করেনি তাঁর মাঝে। ১৯৭৭ সালে বিচার পতি সায়েমের উত্তরসুরী হিসেবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেয়ার পরতিনি পুরো দেশ গড়ার কাজে নেমে পড়ে। তখন তাঁর চিন্তা চেতনায় শুধুই চিল দেশকে এগিয়ে নেয়া যায় কিভাবে। গনতন্ত্রউন্নয়নের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ সমুহ নিতে শুরু করেন এবং প্রথমেই উদ্যেগ নেন বহুদলীয় গনতন্ত্র চালু করার। সায়েম এর উত্তর সুরীহিসেবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব থেকে নিজেক গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অর্থাৎ জনগনের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার জন্য তিনিপ্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের ডাক দেন এবং ১৯৭৮ সালের ৩রা জুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচনে জয়লাভ করেন। তাঁর মধ্যেগনতান্ত্রিক চর্চাটা সবচেয়ে বশী কাজ করত। দেশের গনতান্ত্রিক পক্রিয়ার কথা চিন্তা করে দেশের জনগনের জন্য জিয়াউররহমান প্রণয়ন করেছিলেন ১৯ দফার। ঘোষনা করেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। ভিন্ন ভাষা ,গোষ্ঠী বা বর্ণে ভিত্তিতে নয় বরংভাষা বা সংস্কৃতির ভিত্তিেিক এড়িয়ে ভু-খন্ডের ভিত্তিতে কিভাবে জাতীয়তাবাদকে গ্রহন করা যা তা শিখিয়ে ছিলেন জিয়াউররহমান। দেশের আইন শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য দেশের পুলিশ বাহিনীকে পশিক্ষনের মাধ্যমে শক্তিশালী করেন। একই ভাবেসশস্ত্র বাহিনীর মধ্যেও পেশাগত শৃঙ্খলা ফিরিয়ে উন্নতির জন্য ধারাবাহিক পদক্ষেপ গ্রহন করেন। তাঁকে এই প্রচেষ্টার মধ্যেও বেশকয়েকবার সেনা বিদ্রোহ ও সামরিক অভ্যূথানের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবে দেশের স্বার্থে ঐসব অভ্যূথান তিনি কঠোর হস্তে দমনকরতে সফল হন। 

অবাধে রাজনৈতিক কর্ম কান্ড চালানোর জন্য জিয়াউর রহমান

 গনতন্ত্রয়ানের ব্যবস্থা করেন এবং সবগুলো রাজনৈতিক দল গুলো অবাধে রাজনীতি অনুশীলনের জন্য পুনঃজ্জীবিত হয়।সাথেই সাথেই জিয়াউর রহমান দেশের সকল সংাবাদপত্রকে স্বাধীন করে দেন। প্রত্যাহার করেন নিষেধাজ্ঞা,অবাধে তথ্য প্রবাহচালু হয় সংবাদপত্রের। 

দেশও জাতির উন্নয়নের কথা চিন্তা করেই নিজে যোগ দেন রাজনীতিতে। ১৯৭৮ সালে গঠন করেন জাগদল যার প্রধান ছিলেনআব্দুস সাত্তার। তখন ৬টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ফ্রন্টের মনোনিত প্রার্থী হিসেবে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতিনির্বাচন করেন এবং প্রায় ৭৬ ভাগ ভোট বেশী পেয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

ক্ষণজন্মা এই মানুষটি রাষ্ট্রের কল্যানে বাম,ডান ও মধ্যপন্থী লোকজনকে নিয়ে ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্ব গঠন করলেন নতুনএকটি রাজনৈতিক দল যার না বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলের মুলনীতি হিসাবে ঘোষিত হল (ক) সর্ব শক্তিমানআল্লাহর উপর বিশ্বাস । (খ) বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। (গ) গণতন্ত্র।(ঘ) সমাজতন্ত্র (অর্থনৈতিক ও ন্যায় বিচারের অর্থে)।

ধর্মভিত্তিক রাজনীতির দৃষ্টিভঙ্গিতে জিয়া ছিলেন অনবদ্য প্রতিভার উজ্জল দৃষ্টান্ত। ধর্ম ভিত্তক রাজনৈতিক আদর্শকে কেন্দ্র করেএকটি কর্মশালায় জিয়া বলে ছিলেন- কোন রাজনৈতিক আদর্শ ধর্মকে ভিত্তি করে হতে পারে না। একটা অবদান থাকতে পারে।কিন্তু ধর্মকে কেন্দ্র করে কখনওই রাজনীতি করা যেতে পারে না। অতীতে আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে যে ধর্মকে কেন্দ্র করেপাকিস্তান সময়ে যখনই রাজনীতি করা হয়েছিল সেটা বিফল হয়েছে। কারণ ধর্ম ধর্মই। আমাদের অনেকে আছে যারা আমাদেরদেশে যে বিভিন্ন ধর্ম রয়েছে, সেগুলোকে কেন্দ্র করে রাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টি করতে চেষ্টা করেন। রাজনীতির রূপরেখা বানাতেচেষ্টা করেন, আমরা বারবার দেখেছি তারা বিফল হয়েছে। ধর্মের অবদান থাকতে পারে রাজনীতিতে, কিন্তু রাজনৈতিক দল ধর্মকেকেন্দ্র করে হতে পারে না। এটা মনে রাখবেন, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

জিয়ার এই দেশে গঠনের কতিপয় ইচ্ছা ও প্রচেষ্টার কারনে অতি দ্রুত দেশের সাধারন মানুষের কাছে হয়ে উঠেছিলেন তুমুলজনপ্রিয়। দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত হতে চলল। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কথা। বিশ্ব নেতাদের কাছেহয়ে উঠেছিলেন অত্যন্ত সমাদৃত। দেশের অর্থনৈথিক চাকা সচল হতে শুরু করল। দেশের রাষ্ট্রপতি হলেও নিজের জীবন থেকেবিসর্জিত করেছিলেন সব ভোগ বিলাসিতা।  একজন লেখকে লেখা থেকে জেনেছিলাম জিয়াউর রহমানের সাদামাটাজীবনচিত্রের একটি উদাহরন-

ÔÔএকদিন সকাল পৌনে ৭টায় প্রেসিডেন্টের বাসভবনে গেলাম। তিনি আমাকে ভেতরে ডেকে নিলেন। এমন সময় তাঁর নাস্তাএলো

একটি ডিম আর তিন খন্ড রুটি। তিনি আমামে বার বার খেতে বলায় আমি ডিম ভাজা ও একখন্ড রুটি নিতে হল। ভেবেছিলামপ্রেসিডেন্টের জন্য আরও ডিম ও রুটি আসবে কিন্তু এলো না । তিনি অবলীলায় শুধু রুটি খেয়ে নিলেন। আমার জন্যপ্রেসিডেন্টের খাওয়া হল না ভেবে খুব লজ্জিত হলাম।

সূত্র : জিয়াকে যেমন দেখেছি-এস আব্দুল হাকিম, সাবেক মহাপরিচালক এন এস আই।ÔÔ

দেশ ও জনতার উন্নয়ন যে মানুষটির চিন্তা চেতনায় বিরাজ করত সেই মানুষটিকে অতি অল্প সময়ের মধ্যে চলে যেতে হল পৃথিবীছেড়ে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে গভীর রাতে চট্রগ্রাম সার্কিট হাউসে কতিপয় বিশ্বাস ঘাতক সেনা অফিসারদের হাতে নির্মমভাবেশহীদ হন এই ক্ষনজন্মা এই বীর পুরুষ।  জিয়া বাংলাদেশে একটি মানচিত্রের নাম। জিয়া মানেই বাংলাদেশ। বাংলাদেশেমানুষের অন্তর থেকে কোন দিন মুছে যাবে না জিয়াউর রহমানের না।১৯৮১ সালের সমাধি হয়েছিল এই নক্ষত্রের।  আসছেআগামী ৩০শে মে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৯তম মৃত্য বার্ষিকী। সালাম জানাই নিভে যাওয়া এই নক্ষত্রকে-যে নক্ষত্রবাংলার আকাশে উদিত না হলে হয়ত আমরা শুনতে পেতাম না স্বাধীনতার ঘোষনা। তিনি নেই আমাদের মাঝে কিন্তুু তাঁরআদর্শ রয়ে গেছে পৃথিবীতে । তাঁর আদর্শে গড়ে উঠেছে কোটি কোটি জিয়া বাংলার ঘরে ঘরে। সবার দোয়া আল্লাহ্র কাছেএকটাই।আল্লাহ্ পাক যেন তাঁকে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন বেহেশতে জায়গা করে দেন।।

লেখক: আরিফ মাহফুজ,

যুক্তরাজ্য থেকে।

লেখক ও কলামিস্ট

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com