২৬ শিশুকে জীবন্ত কবর দেয়া ছিনতাইকারীর প্যারোলে মুক্তি দাবি!
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতে ২৬ শিশুকে জীবন্ত করব দেয়া এক ছিনতাইকারী প্যারোলে মুক্তি চেয়েছেন আদালতের কাছে। ১৯৭৬ সালে এই নৃশংস কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন ফ্রেডেরিক উড ও তার দুই ভাই। শাস্তিস্বরূপ তাদের সবাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় সেদেশের আদালত। ৬৭ বছর বয়স্ক উড মঙ্গলবার ক্যালিফোর্নিয়ার আদালতে প্যারোলে মুক্তির জন্য আবেদন করেছেন। খবর হেরাল্ড সান এর।
‘ডার্টি হ্যারি’ নামক ১৯৭১ সালে মুক্তি পাওয়া একটি সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে উড এই জঘন্য কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন বলে জানা যায়। তাকে সেসময় এ কাজে সহযোগিতা করেছিলেন তার ভাই রিচার্ড ও জেমস স্কনফেল্ড। তারা সিনেমার কাহিনীকে অনুকরণ করে প্রথমে ক্যালিফোর্নিয়ার ডেইরিল্যান্ড ইলিমেন্টারি স্কুলের একটি বাস ছিনতাই করেন। বাসটিতে সেদিন ৫ থেকে ১৪ বছর বয়স্ক ২৬ জন শিশু তাদের স্কুল থেকে ফিরছিল। ছিনতাইকারীরা প্রায় ১১ ঘন্টা যাবত বাসটি চালিয়ে চৌচিলা নামক একটি স্থানে নিয়ে যান। এতে বাসে থাকা অবস্থায়ই শিশুরা আতঙ্কে ফ্যাকাশে হয়ে যায়। কিশোর বয়সের শিক্ষার্থীরা ভয়ে চিৎকার করতে থাকে। এরপরও অপরাধীদের মন গলেনি। বাসের চালক ফ্র্যাংক রে ও ২৬ জন শিশুসহ পুরো বাসটিকে তারা মাটির ৪ মিটার নিচে দাফন করে দেন। এর আগে তারা শিশুদের কাছ থেকে সবার নাম,ঠিকানা ও তাদের এক টুকরা করে কাপড় নিয়ে নেন। উড ও তার ভাইয়েরা পরিকল্পনা করেন, তারা ওই ২৬ জনের পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ মার্কিন ডলার মুক্তিপণ আদায় করবেন। এরপর তারা বাসটিকে মাটিচাপা দিয়ে তার উপর ৪৫ কিলোগ্রাম ওজনের দুটি ব্যাটারি রেখে সেখান থেকে চলে যান।
মাটির নিচে প্রায় ১৬ ঘন্টা বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা চালায় বাসের সবাই। ছেলেমেয়েগুলো বাঁচার জন্য বাসের সিটগুলো ছিঁড়ে সেগুলোর কাঠ ভেঙে ফেলে। ওই কাঠের টুকরাগুলো দিয়ে তারা বাসের ছাদ ভাঙার চেষ্টা করতে থাকে বেরিয়ে আসার জন্য। অবশেষে ১৬ ঘন্টা পর তারা বাসের ছাদ ভেঙে মাটি সরিয়ে উপরে উঠে আসতে সক্ষম হয়। পরে তারা পুলিশ স্টেশনে গিয়ে অভিযোগ জানায়।
এ ঘটনার পর উড কানাডায় পালিয়ে যান। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পায়, যে ট্রেলারটি দিয়ে বাসটি গর্তে নামিয়েছিল খুনিরা সেটা উড ও তার ভাইদের নামে রেজিস্টার করা। পরে পুলিশ তাকে কানাডা থেকে গ্রেফতার করে। তার অন্য দুই সহযোগীকে ক্যালিফোর্নিয়া থেকেই গ্রেফতার করা হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার আদালত তাদের তিনজনকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়। রিচার্ডকে ২০১২ সালে প্যারোলে মুক্তি দেয় আদালত এবং জেমসকে ২০১৫ সালে মুক্তি দেয়া হয়।
সেই বাসের চালক ফ্র্যাংক রে ২০১২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী মৃত্যুবরণ করেন। দিনটিকে চৌচিলা শহরে রে ডে হিসেবে পালন করা হয়। অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া ওই ২৬ শিশুর অনেককেই এখনও সেই ছিনতাইয়ের ঘটনা বিভীষিকা হয়ে তাড়া করে ফেরে।
মূল অপরাধী ফ্রেডেরিক উড নিজের সেই অপরাধের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন আদালতে। এর আগেও আদালত তার প্যারোলের আবেদন ১৮ বার খারিজ করে দিয়েছে।