ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে ব্যাপক টেস্টের ব্যবস্থা করুন
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, করোনাভাইরাসের ভয়াবহ পরিণতি থেকে দেশ ও মানুষকে বাঁচাতে এ মুহূর্তে সারা দেশে ব্যাপকভাবে এই ভাইরাস টেস্টের (পরীক্ষার) ব্যবস্থা করতে হবে। আর দেরি না করে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় এ টেস্টের ব্যবস্থা করে-আক্রান্তদের প্রাথমিক স্তরেই চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় জনগণকে শুধু ঘরের ভিতরে ঢুকিয়ে রেখে জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে না। ঘরের ভিতরেই মানুষ এখন বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। অথচ এই ভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় কেউ জানতেও পারছে না যে, তারা কী জন্য মারা যাচ্ছেন! করোনাভাইরাসসহ দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানান। তিনি করোনাভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজটির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেন।
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্যাকেজে স্রেফ একটা ব্যাংক লোনের ব্যবস্থার কথা বলেছেন। এটাকে তিনি জাতীয় পর্যায়ের জিডিপির ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ বলে উল্লেখ করেছেন। আসলে ব্যাংক লোনের যে ব্যবস্থা করবেন, আর সেটার যে সুদ আসবে তার ৫% সুদও যদি সরকার পরিশোধ করে-তাহলেও সব মিলে জিডিপির ০ দশমিক ০১%-ও হবে না। প্রধানমন্ত্রী স্রেফ একটা ব্যাংক লোনের বিষয়কে প্রণোদনা প্যাকেজ বলে চালিয়ে দিলেন! এটা আসলে কোনো প্রণোদনা প্যাকেজ নয়। এটা জাস্ট শুভঙ্করের ফাঁকি।করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করে আমীর খসরু বলেন, এ হার কমাতে হলে আর দেরি না করে সারা দেশে ব্যাপকহারে টেস্টের ব্যবস্থা করতে হবে। আর টেস্টের রিপোর্ট দেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে সাধারণ চিকিৎসাও অব্যাহত রাখতে হবে। সারা দিনে ১০০-২০০ মানুষের টেস্ট করে সংবাদ সম্মেলন করে তার রিপোর্ট প্রচারে এ ভাইরাসের পরিণতি ঠেকানো যাবে না। তিনি বলেন, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন প্রায় ভেঙে গেছে। ডাক্তার, নার্স কিংবা স্বাস্থ্যকর্মীদের কোনো সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা কাজ করছেন। এ অবস্থার মধ্যেও তাদের জন্য পিপিইর ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। কয়েকদিন আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গেছে, ডাক্তারদের জন্য নাকি এখনো পিপিইর কোনো প্রয়োজনই নেই। আমীর খসরু বলেন, লকডাউন ঘোষণা করে মানুষকে ঘরের ভিতরে রাখার চেষ্টা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু দিনমজুর, রিকশাওয়ালা, হকারের মতো যারা ‘দিন আনে দিন খায়’ এমন শ্রমজীবী মানুষ, কিংবা যাদের ঘরে কোনো খাবার সঞ্চয় নেই- তারা কী করে ঘরে বসে থাকবে? তাদের জন্য তো খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে রাষ্ট্রেরই। পৃথিবীর সব রাষ্ট্রই তা করছে। কেউ নগদ অর্থের ব্যবস্থা করছে। কেউ বাসায় গিয়ে খাদ্যপণ্য দিয়ে আসছে। আবার কোনো কোনো দেশে নির্দিষ্ট স্থানে খাদ্যপণ্য কিংবা পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী সাজিয়ে রাখা হচ্ছে- যাদের প্রয়োজন তারা গিয়ে সেসব সামগ্রী নিজ দায়িত্বে নিয়ে আসছেন। আমাদের দেশে হতদরিদ্র গরিব মানুষের জন্য কোনো বরাদ্দ বা ব্যবস্থা রাখা হয়নি। রাস্তায় গাড়ি দেখলেই ক্ষুধার্ত শিশু থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত খাবার বা ত্রাণের জন্য ছুটে যায় ভয়ভীতি উপেক্ষা করে। আমরা আমাদের দলের দেওয়া প্যাকেজ প্রণোদনা প্রস্তাবে এসব দরিদ্র মানুষের জন্য ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু তা রাখা হয়নি। এসব মানুষের এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরার উপক্রম হচ্ছে। মানুষের পেটে যখন ভাত না থাকে, পরিবারের সদস্যরা যখন ক্ষুধার্ত থাকে- তখন আর সেসব মানুষের ক্ষেত্রে কোনো ভাইরাসের ভয় বা লকডাউন কাজ করে না। এমনকি মৃত্যু ভয়ও তখন কাজ করে না। সেজন্য লকডাউন ঘোষণার পাশাপাশি এই ক্ষুধার্ত মানুষগুলোর জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব।