ভিডিও কনফারেন্স—

0

সোমবার, এপ্রিল ৬, ২০২০ রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী‌‌ আহমেদ এর ভিডিও কনফারেন্সের পূর্ণ বক্তব্য।

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আসসালামু আলাইকুম।
সবাইকে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক উষ্ণ শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।

আপনারা জানেন, করোনাভাইরাসে বিধ্বস্ত বিশ্ব থেকে যতটা না সুসংবাদ আসছে তার চেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে দুঃসংবাদ। একটি দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমছে, তো বাড়ছে অন্য কয়েকটি দেশে। ফলে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা শেষ পর্যাপ্ত বাড়ছেই। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা অতিক্রম করছে লাখের ওপর। যেমুহুর্তে আপনাদের সামনে কথা বলছি তখন গোটা বিশ্বে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ লাখের কাছাকাছি। মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েছেন ৭০ হাজার মানুষ। আমাদের দেশে গত দুই দিন ধরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। যা ভীতিকর পরিস্থিতির ঈঙ্গিত দিচ্ছে। শুধু বাংলাদেশ ই নয় সারাবিশ্ব এক অকল্পনীয় কঠিন সংকটের মুখোমুখি। আমরা আমাদের জীবদ্দশায়,এমনকি বিশ্বের হাতেগোনা সৌভাগ্যবান শতায়ু মানুষেরাও তাদের জীবদ্দশায় আর কখনোই এমন ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি হননি।

বর্তমান পরিস্থিতিকে তুলনা করা হচ্ছে বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও ভয়ঙ্কর হিসেবে। এমনও ঘোরতর সংকটেও বাংলাদেশ সরকারের হেয়ালি দেশের জনগণকে অসহায় করে তুলেছে। সরকার বিষয়টি নিয়ে জনগণের সঙ্গে কেন এতো লুকোচুরি করছে এটি বোধগম্য নয়। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, উন্নত কিংবা অনুন্নত দেশ যারাই করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিকে গুরুত্ব না দিয়ে কথার ফুলঝুরি ছড়িয়েছে তাদেরকে এখন ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এখানেই আমাদের ভয়, দেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের নেতামন্ত্রীরা প্রতিদিন যেভাবে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অযথা বাক্যবাণ নিক্ষেপ কিংবা পরিস্থিতি সম্পর্কে স্ববিরোধী বক্তব্য মন্তব্য করছেন, তাতে মনে হয় সরকার এখনো পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলদ্ধি করতে পারছেনা। আপনারা দেখছেন, এখানে সেখানে মানুষের মরদেহ পড়ে থাকার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। এটি শুভলক্ষণ নয়।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
দল হিসেবে আমরা শুরু থেকেই বলেছি, এই সংকটটি আমরা দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করতে চাইনা। কারণ, এই মরণঘাতী করোনা ভাইরাস বেছেবেছে মানুষকেই টার্গেট করছেনা কিংবা করবেনা। বরং একাধারে চলমান এই বৈশ্বিক ও জাতীয় রাষ্ট্রীয় সংকট বাংলাদেশে তো বটেই সারাবিশ্বে এটি এখন খোদ মানবজাতির অস্তিত্বের সংকট। এ কারণে আপনারা দেখেছেন, শুনেছেন, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত ২৪ মার্চ তার বক্তব্যে স্পস্ট করেই বলে দিয়েছেন ‘দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে অবশ্যই বর্তমান সরকারের বৈধতার সংকট রয়েছে, কিন্তু চলমান করোনা ভাইরাস সংকট অত্যন্ত ভয়াবহ এবং বিপর্যয়কর। বর্তমান সংকট মানুষের বাঁচা-মরার সঙ্গে জড়িত। তাই এই সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিএনপি সরকারকে প্রয়োজনীয়ও সহায়তা দিতে প্রস্তুত। কারণ বিএনপি বিশ্বাস করে, ‘দেশ ও মানুষের কল্যাণের জন্যই রাজনীতি’।

বর্তমান সংকটে আমরা আমাদের অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরার পরও আপনারা দেখছেন, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কিংবা হাসান মাহমুদ সাহেব কারণে অকারণে বিএনপির বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক কথা বলা তাদের অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন। এ কারণে আওয়ামী লীগের কথার জবাব দিয়ে বিএনপি সময় নষ্ট করতে চায়না। আমরা বরং সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলতে চাই, যেহেতু রাষ্ট্রীয় অর্থ, রাষ্ট্রীয় যন্ত্র আপনাদের হাতে সেহেতু এই মুহূর্তে দেশের জনগণের পাশে দাঁড়ানো আপনাদের দায়িত্ব।

সচেতন বন্ধুরা,
দেশের হাজার হাজার গার্মেন্টস শ্রমিকদের সঙ্গে সরকার যে আচরণটি করেছে, এটি কোনো সভ্য রাষ্ট্র কিংবা সভ্য সরকারের আচরণ হতে পারেনা। শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অবস্থানগত পার্থক্য সর্বোপরি সমন্বয়হীনতা সংশ্লিষ্ট সবাইকে মর্মাহত করেছে। সরকারের পাশাপাশি এই খাতের উদ্যোক্তাদের নেতৃত্বও চরম দুর্বলতার পরিচয় দিয়েছে। কারখানা খোলা ও বন্ধ রাখা নিয়ে লুকোচুরি খেলা খুবই ন্যক্কারজনক। চাকুরি হারানোর ভয়ের কাছে মৃত্যু ভয়কেও হার মানিয়েছে পোশাক শ্রমিকসহ নিন্ম আয়ের মানুষজনকে। ফলে এরা সরকারের বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে রাস্তায় নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিরতে শুরু করে কর্মস্থলে। গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় হাজার হাজার শ্রমিক ট্রাকে, আবার কেউবা হেঁটে মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার কর্মস্থলে গেলেন। যে পরিমাণে জনসমাগম হলো, তা সত্যিই আতঙ্কের। আমাদের মনে ভয় জাগছে। জানিনা আমরা ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি কিনা।

বন্ধুরা,
গার্মেন্টস শ্রমিকরা ছাড়াও, ভ্যান চালক, কুলি, মজুর, কায়িক শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষসহ বিভিন্ন পেশার লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘরবন্দি। দু’মুঠো খাবারের জন্য তাদের হাহাকার আর আহাজারির খবর আসছে। ত্রানের আশায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে মানুষ। প্রতিটি মোড়ে , অলিগলিতে নিরন্ন বুভুক্ষ মানুষের সারি। এতোদিন মন্ত্রীদের ভাষায়-আমাদের দেশ তো সিঙ্গাপুর- ব্যাংকক ছিলো! বিশ্বের রোল মডেল ছিলো। দেশে কুলখানির দাওয়াত দেয়ার জন্য নাকি ভিক্ষুক খুঁজে পাওয়া যেতো না। রাস্তায় বের হলে আমাদের মন্ত্রীরা ভিক্ষুক খুঁজে পেতেন না। মন্ত্রীরা আশ্বাস দিয়ে বলতেন,এই তো আর কিছুদিন পর আমরা কানাডায় রুপান্তরির হবো। কিন্তু এখন শুনি ডাক্তারের পিপিই নাই। ভেন্টিলেটরতো সোনার হরিণ। গতকালও আইইডিসিআরের ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যের ডিজি সামর্থ্যবানদের সহায়তা চেয়েছেন। ঢাকার বাইরে করোনা পরীক্ষার কীট নাই। মধ্যবিত্তের পকেটে টাকা নাই। গরীবের পেটে ভাত নাই। চারদিকে কেবল নাই,নাই ,নাই! এইসব মানুষদের মধ্যে ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করতে সরকার সারাদেশে যেসব চাল বরাদ্দ করেছে ইতোমধ্যেই এইসব চাল বিতরণের জন্য তৈরী করা তালিকা নিয়ে দলীয়করণের অভিযোগ উঠেছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা বেছে বেছে নিজস্ব লোকজনের মধ্যে চাল বিতরণ করছেন বলে গণমাধ্যমেও খবর বেরিয়েছে। অন্যেিদক গরীব মানুষের মধ্যে ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে। ত্রাণের চাল চুরি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর সতর্কবার্তা থাকলেও থেমে নেই অপকর্ম । প্রত্যহিক সংবাদপত্রে আওয়ামী লীগের স্থানীয় অনেক নেতাদের বিরুদ্ধে ত্রাণের চাল চুরি ও লুটপাটের খবর প্রকাশিত হচ্ছে। কারো কারো গুদামে অভিযান চালিয়ে বিক্রয় নিষিদ্ধ ভিজিডি’র চাল, ত্রানের চাল উদ্ধার করা হচ্ছে। এতদিন হয়েছিল সরাসরি টাকা লোপাট, এখন হচ্ছে রিলিফ লোপাট।

সুহৃদ সাংবাদিকগণ,
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার পাঁচটি প্যাকেজে আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের মনে হয়েছে তার এই প্যাকেজগুলো মূলত সরকার সমর্থক শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের কম সুদে ব্যাংক থেকে ঋণের সুবিধা দেয়া। তবে ঋণ দেয়া তো ব্যাংকের স্বাভাবিক ব্যবসা। এটা তো প্রণোদনা নয়। সুদের হারের কমানো যে অংশটুকু সরকার ভর্তুকি দেবে, প্রণোদনা শুধু সে অংশটুকুই। কাজেই মোট ঋণের সাড়ে ৭২ হাজার কোটি টাকাকেই প্রণোদনা প্যাকেজ হিসেবে দেখানো আসলে মস্ত একটা শুভঙ্করের ফাঁকি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেড় কোটি মানুষ কর্মচ্যুত হতে যাচ্ছে। এসব মানুষ ও তাদের পরিবারকে খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থাৎ প্রতি পরিবারে ৪ জন করে হিসাব করা হলেও প্রায় ৫ কোটি মানুষকে খাবার সরবরাহ করতে হবে।সেটার কোন কার্যকর পরিকল্পনা নেই এই প্যাকেজে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বা এই সংকটের সবচেয়ে প্রকট ভুক্তভোগী দরিদ্র লোকেদের বাঁচাবার জন্য কিছু আছে কি এই প্যাকেজে? ক্ষুধা লকডাউন বোঝে না, কোয়ারেন্টিন বোঝে না, বোঝে না সামাজিক বা শারিরিক দূরত্ব। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ‘লকডাউন’ করা হয়েছে এই দিনমজুর শ্রেনীর খাবারের ব্যবস্থা করে। আর আমাদের দেশে প্রনোদনা প্যাকেজেও এই মানুষগুলোর জন্য কিছু নেই। এরা তাহলে কি করবে, কোথায় যাবে? এছাড়াও বিভিন্ন সেবামূলককাজে যারা জড়িত তাদের নিরাপত্তা ও ঝঁকিভাতার কথা কোথাও নেই। বিশেষ করে এতদিন ধরে গণমাধ্যমকে সহায়তার যে কথা বলা হয়েছিল তাও প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজে উল্লেখ নেই। অথচ জীবনের ঝঁকি নিয়ে গণমাধ্যমের কর্মীরা দায়িত্ব পালন করছে।

সাংবাদিক বন্ধুরা,
এ মহা দুর্যোগের আওয়ামী মন্ত্রী ও নেতারা মিথ্যা কথা বলা থেকে সরে আসতে পারেনি। গতকালও স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন বিএনপি জনগণের পাশে দাঁড়ায়নি। সাংবাদিক বন্ধুরা আপনারা দেখেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের নির্দেশে ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল এমনকি ওলামা দল দুস্থ মানুষকে চাল, ডালসহ খাদ্য সামগ্রি, সাবান, জীবাণুনাশক সরঞ্জামাদি সরবরাহ করছেন।

বন্ধুরা,
বিএনপির ভারপ্রাাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে ফেসবুক ফেক আইডি খুলে কিছু অসাধু ব্যক্তি নানা ধরনের অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। সেই ফেক আইডি থেকে গরীব মানুষদের সাহয্যের নামে বিভিন্নভাবে সহায়তা চাওয়া হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে জনাব তারেক রহমানের নামে কোন ফেসবুক আইডি নেই। তিনি কোন ফেসবুক আইডি পরিচালনা করেন না। মানুষকে প্রতারিত করার জন্য একটি চক্র জনাব তারেক রহমানের নামে ভূয়া ফেসবুক আইডি খুলে বিভ্রান্তি তৈরির অপচেষ্টা করছে। এ বিষয়ে দেশের জনগণ ও দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার আহবান জানাচ্ছি।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com