প্রধানমন্ত্রীর প্যাকেজে ‘দিন আনে দিন খায়’ মানুষগুলোও অবহেলিত: বিএনপি

0

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজকে ‘ঋণের প্যাকেজ’ অভিহিত করে এতে ‘দিন আনে দিন খায়’ মানুষজনকে অবহেলা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

(৫ এপ্রিল) সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের পর বিকালে উত্তরার বাসায় এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে দলের পক্ষে বিএনপি মহাসচিব এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী রেন্সপনড করেছে। এটা পজিটিভ তখনই বলতে পারতাম যদি আমরা দেখতাম যে, আসল সমস্যার সমাধান করার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের, খেটে খাওয়া মানুষের, ইনফরমাল সেক্টারের কৃষকদের, তাদের কোনো কথা এখানে (প্রণোদনা প্যাকেজ) নেই।’

‘এখানে আমার কাছে যেটা মনে হয়ে যে, ৭২ হাজার কোটি টাকা..। এই কোটি টাকা তো এমনি একটা জনগণ মধ্যে বলবে যে, ৭২ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। দিয়েছে তো ঋণ, পুরোটাই ঋণ। এখানে অনুদান বলতে কিছু নেই। সব ঋণের প্যাকেজ।’

খেটে খাওয়া মানুষের কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সাধারণ ‘দিন আনে দিন খায়’ গরীব মানুষের জন্য আমরা সরকারকে ১৫ হাজার কোটি টাকা দেয়ার কথা বলেছিলাম। সুনির্দিষ্টভাবে বলেছিলাম এটা অনুদান দিতে হবে। আমরা বলেছি, ভাতা বাড়াতে, চিকিৎসক-নার্স, চিকিৎসাকর্মীদের প্রণোদনা দিতে হবে, স্বাস্থ্যখাতে প্রণোদনা বাড়াতে হবে।’

‘শুধুমাত্র ঋণ নয়। আপনাকে এভাবে তাদেরকে অনুদান, ভাতা, বেতন বাড়িয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। যে বিষয়গুলো অত্যন্ত জরুরি, সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সেইভাবে কথা বলেননি। ‘দিন আনে দিন খায়’-এই শ্রেনীর মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। আনফুরচুনেটলি সেই সেক্টারের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে মধ্যে কোথাও, তার প্যাকেজের মধ্যে কোথাও সেই ধরনের কিছু আমরা দেখতে পাই নাই। রেমিট্যান্স যারা পাঠান তাদের কোনো কথা এই প্রণোদনা প্যাকেজে নেই।’

গার্মেন্টস খাতের প্রণোদনা শ্রমিকদের কাছে যাবে কিনা তা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেন ফখরুল।

স্বাস্থ্যখাতের বিষয়ে প্যাকেজে কোনো কথা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হেলফ সেক্টারটা একেবারেই নেগলেটেড, কোনো কথাই বলা হয়নি এখানে। আপনার যেটা দরকার ‘পরীক্ষা, পরীক্ষার কথা ডাব্লিউএইচও প্রধান বলছেন। অথচ বাংলাদেশে এখন পরীক্ষা নেই, পরীক্ষা নেই, পরীক্ষা নেই অবস্থা দাঁড়িয়ে গেছে। যেখানে যাবেন বলবে যে, এখানে হবে না। ভেন্টিলেটর কত আছে আপনারা জানেন। আরো বেশি সেটা তৈরি করার কোনো কথা এখানে(প্রণোদনা প্যাকেজে) নেই।’

‘সব চেয়ে বড় দুর্বলতা দেখুন। হেলথ ডিপার্টমেন্টের মধ্যে পারস্পরিক যে সমন্বয় থাকা দরকার সেটাও ঠিক নেই। ডিজি হেলথ এক কথা বলছেন, আইইডিসিআর ডিজি আরেক কথা বলছেন আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী তো আরও ভীষন কথা বলছেন। যেসব কথা শুনলে মনে হবে না দেশে কোনো ভাইরাস নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। প্রশ্নগুলো এখানে হাউ উই লুকিং টু দি থিংকস। আপনি কি বুঝতে পারছেন যে, সারা পৃথিবী ভয়ংকর মহামারীর মধ্যে পড়েছে, আপনারা কী বুঝতে পারছেন যে, সারা পৃথিবী গ্রেট ডিপরেশনের দিকে যাচ্ছে। সেই বিষয়গুলো সরকারের যদি দায়িত্ববোধ না থাকে তাহলে এই রাষ্ট্র কিভাবে টিকে থাকবে এটা আমাদের বোধগম্য নয়।’

নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় রবিবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় মোট ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্য্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যা জিডিপির ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।

এর আগে দিন শনিবার (৪ এপ্রিল) গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব দলের পক্ষ থেকে ২৭ দফার প্যাকেজ প্রস্তাবনা দেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেখানে সরকারের কাছে ৮৭ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছেন।

স্বল্প মেয়াদী খাতে ৬১ হাজার কোটি টাকা, মধ্য মেয়াদী খাতে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অতিরিক্ত আরো ৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্ধ রাখার প্রস্তাব করেছেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা (করোনা ভাইরাস) মানবসভ্যতার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জটা মোকাবিলা করার জন্য আমরা সবাই হাত বাড়িয়ে আছি, আমরা সবাই উদ্যোগী আছি। তারপরেও তারা বলছেন যে আমরা নাকী এমন এমন কথা বলছি যে, দায়িত্বজ্ঞানহীন-কান্ডজ্ঞানহীনের মতো কথা বলছি। কোথায় দেখালেন তারা এসব?’

‘আমরা তো ২৭ টা দফা দিয়েছি। তার বর্ণনা দিয়েছি। প্রত্যেকটা বিষয় যুক্তসঙ্গতভাবে বলেছি। আজকে সরকার দুর্ভাগ্যজনকভাবে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে এই করোনা ভাইরাসকে মোকাবিলার জন্যে। যেই মানসিকতার দরকার ছিলো, আমি প্রস্তুতি বলব না, যে মানসিকতা সেটাকে তৈরি করবার জন্য তারা ব্যর্থ হয়েছে বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।’

‘পূর্ণ লকডাউন দরকার’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমি তো মনে করি যে, পরিপূর্ণ লকডাউন করা উচিত। দ্যাট ইজ দ্যা অনলি এনসার। যে ভয়াবহতা আসছে, এখনো রিয়েলাইজ করতে পারছে না তারা। ২৭ দিন হয়ে গেছে। অলরেডি কিন্তু গতকালের চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুন হয়েছে।’

‘এটা জ্যামিতিক হারে বাড়বেই। ওই জিনিসটা যদি আমরা উপলব্ধি পারি, আমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে এদেশ স্বাধীন করেছি, আমরা ওইভাবে পরাজিত করবো, পরাজিত তো অবশ্যই করবো তবে তার জন্যে যে অস্ত্র দরকার, যে উইপেন্স দরকার, সেই উইপেন্সগুলো তো আমরা পাচ্ছি না।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আজকে একটা পত্রিকায় রিপোর্ট বেরিয়েছে যে, ৮৭% হাসপাতালে সাধারণ চিকিতসা নেই। যেমন আপনার এপেনডিসাইটিজ হলো, আপনি চাইবেন যে, ডাক্তারের কাছে গিয়ে আলট্রাসোনোগ্রাম করা হোক, সেটা আপনি পাবেন না। আপনার হার্ট এ্যাটাক হলো হাসপাতালে গেলে চিকিতসা পাবেন না। জাস্ট ফ্যাক্ট।’

‘এই বিষয়গুলো সরকার নজর দিচ্ছে বলে আমরা দৃশ্যমান কিছু দেখছি না। অন্যদিকে সমন্বয় কোনোখানেই নেই। এই বিষয়গুলো জনগণের মধ্যে অনাস্থা তৈরি করেছে এবং প্রথম দিক থেকে প্রত্যেকটা ইস্যুতে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের আস্থা এই সরকারের ওপর থেকে প্রায় চলে গেছে।’

‘করোনা মোকাবিলায় বিএনপি নেতারা ঘরে বসে শুধু অভিযোগ করছে, করোনা মোকাবিলায় তাদের ভুমিকা নেই’ আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, ‘এই ধরনের বক্তব্যের একটাই প্রতিক্রিয়া হলো- দায়িত্ব সম্পূর্ণ সরকারের।’

‘ইতিমধ্যে আমাদের নেতা-কর্মীদের যতটুকু নিরাপত্তার মধ্যে রেখে নেতা-কর্মীরা কর্মজীবী দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তারা খাবার দিচ্ছেন, তারা মাস্ক দিচ্ছেন। সিলেটে মেয়র জানেন যে, তিনি বৃহত আকারে খাবার নিয়ে মানুষের পাশে যাচ্ছেন, প্রত্যেকটা জেলা, প্রত্যেকটা উপজেলা, প্রত্যেকটা ইউনিয়নে আমাদের নেতা-কর্মীরা কাজ করছে। ফলে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য সঠিক নয়, এসব অলিক অভিযোগ। এখন কী অভিযোগ করা সঠিক?’

তিনি বলেন, ‘গতকাল আমরা করোনার মহাদুযোর্গ মোকাবিলায় অর্থনৈতিক কিছু আবেদন রেখেছি। তার প্রতি উত্তরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পা্দক সাহেব যে বক্তব্য দিয়েছেন, যে মন্তব্যগুলো করেছেন যে, এটা আশা করি নাই যে, তার মতো একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব উনি এই ধরনের মন্তব্য রাখবেন।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com