‘ঋণ দেয়াই ব্যাংকের ব্যবসা, এটা প্রণোদনা হতে পারে না’
করোনা মোকাবিলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
মান্না বলেন, প্রধানমন্ত্রী আজ (রোববার) সকালে করোনা মোকাবিলায় যে আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন সেটা আমাদের প্রচণ্ড হতাশ করেছে। এতে অতি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ যেমন নেয়া হয়নি, তেমনি প্রকৃত সত্য আড়াল করে প্রণোদনার পরিমাণকে অনেক বড় করে দেখানো হয়েছে।
তিনি বলেন, বৃহৎ শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরে ৩০ হাজার কোটি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দেশের শিল্প এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেকোনো সময়েই ব্যাংকের ঋণ পাবে, ঋণ দেয়াই ব্যাংকের ব্যবসা। এটা কোনোভাবেই প্রণোদনা হতে পারে না।
মান্না বলেন, বৃহৎ শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরে ঋণের সুদের ৯ শতাংশ এর ৪.৫ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ঋণের সুদের ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে ব্যাংকগুলোকে দেবে। প্রণোদনা বললে এইটুকুকেই শুধু বলা যেতে পারে। প্রথমত এই ঋণের পুরোটাও প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পৌঁছাবে কিনা তা অনিশ্চিত, এমনকি সেটা পুরোটা পৌঁছালেও এর পরিমাণ দাঁড়াবে ২৫০০ কোটি টাকারও কম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫ হাজার কোটি টাকার টাকার নতুন ঋণ সুবিধার কথা বলা হয়েছে যাতে সুদের হার হবে ৭ শতাংশ। বাজারে প্রচলিত সুদের চাইতে যে হার ২ শতাংশ কম। এই ২ শতাংশ কম সুদই প্রণোদনা। পুরো ঋণ যদি বিতরণ করা হয়, তাহলে এই ক্ষেত্রে প্রণোদনার পরিমাণ দাঁড়াবে ১০০ কোটি টাকা।
মান্না আরও বলেন, এই ভাষণের সবচেয়ে হতাশাজনক দিক হচ্ছে বর্তমানে অঘোষিত লকডাউনের কারণে ‘দিন আনে দিন খায়’ এমন মানুষ তো বটেই নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্তসহ ৮ থেকে ১০ কোটি মানুষের জন্য ন্যূনতম কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেই। এর মধ্যেই মিডিয়ায় প্রকাশিত হচ্ছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে অভাবী মানুষেরা বসে আছে একটু খাবার পাবে এই আশায়।
তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বের কথা বাদ দিলেও এই দক্ষিণ এশিয়াতে করোনা মোকাবিলায় সরকারগুলো যে ফান্ডের ঘোষণা করেছে সেগুলোতে এরকম প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে নগদ অর্থ সাহায্য এবং বিনামূল্যে কিংবা নামমাত্র মূল্যে খাদ্য সাহায্য দেয়া, কয়েক মাসের জন্য বিদ্যুৎ পানি গ্যাসসহ ইউটিলিটি বিল মওকুফ করা কিংবা রেয়াত দেয়া, প্রধান খাদ্যদ্রব্যে ভর্তুকি দেয়াসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
মান্না বলেন, করোনা বিস্তার ঠেকানোর সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো না নিয়ে সরকার এই দেশের কোটি কোটি মানুষকে জীবন হারানোর মতো ভয়াবহ বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে। ওদিকে এই মানুষগুলোর ভরণপোষণের দায়িত্ব না নেয়ায় রোগে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যাবে না, তারা আছে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে এবং অনেকেই মারা যাবে না খেয়ে।