ঘরে খাবার নেই, বাধ্য হয়ে রাস্তায় কাজের খোঁজে এসেছি
গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার মাওনা চৌরাস্তার উড়াল সড়কের পাশে প্রতিদিনই ভোর থেকে শ্রম বিক্রির জন্য জটলা শুরু হয় কয়েকশ শ্রমিকের।
সকাল ৮টার আগেই দরদাম শেষে বিভিন্ন জনের সঙ্গে কাজে চলে যান তারা। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে অঘোষিত লকডাউনে ভিন্ন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে তাদের। শ্রম বিক্রির হাটে শ্রম বিক্রি করতে আসা শ্রমিকদের দেখা মিললেও ক্রেতার দেখা নেই সপ্তাহ খানেক ধরে।
লকডাউনে থাকায় গত কয়েকদিন ধরে এখন আর কেউ শ্রমিক কিনতে আসে না। কাজ নেই, তো খাবার নেই। এমন পরিবারের জন্য করোনা কত যে কষ্টের তা না দেখে বোঝার উপায় নেই। ক্ষুধার জ্বালায় করোনার ভয় তুচ্ছ করে কাজের সন্ধানে তারা এখনও প্রতিদিন হাটে আসেন। তবে আশায় আশায় দিন কাটিয়ে শূন্য হাতেই ফিরতে হয় তাদের।
আরজিনা আক্তারের (৪৫) বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইলে। স্বামী মারা যাওয়ার পর তিন বছর আগে দুই সন্তানকে তার ভাইয়ের বাড়িতে রেখে চলে আসেন গাজীপুরের শ্রীপুরে। প্রতিদিন তিনশ টাকায় নির্মাণশ্রমিকের কাজ করছিলেন তিনি। সকালে উড়াল সড়কের নিচে এলেই মিলে যেত কাজ। করোনায় লকডাউন দেয়ায় গত কয়েকদিন ধরে তিনিসহ শতাধিক শ্রমিক সকাল থেকে বসে থাকলেও কেউ নিতে আসে না।
প্রতি সপ্তাহে আরজিনাকে বাড়িতে সন্তানদের জন্য টাকা পাঠাতে হয়। এখন কাজ না থাকায় টাকা পাঠাতে পারছেন না তিনি। অনাহারে দিন কাটছে তার। গত কয়েকদিনেও তার খোঁজ নেয়নি কেউ।
৫০ বছরের বৃদ্ধ আজিজুল হক বলেন, শিল্পসমৃদ্ধ গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় হাজারো দিনমজুর কাজ করেন। যাদের অধিকাংশই ময়মনসিংহ জেলার বাসিন্দা। বিভিন্ন স্থানে ভাড়া থেকে তারা শ্রম বিক্রি করেন। হঠাৎ করে জীবনের ছন্দপতন ঘটেছে আমাদের। কাজ নেই, তো ঘরে খাবার নেই অবস্থা সবার। ঘরে খাবার নেই। তাই সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাস্তায় কাজের খোঁজে এসেছি ভাই।কাজ না থাকায় সবচেয়ে করুণ অবস্থা আমাদের।
দিনমজুর মুমিনা খাতুন বলেন, করোনার কারণে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সবাই যার যার মতো দেশে চলে গেছেন। সবকিছু হারিয়ে কাজের জন্য এখানে আসলাম। এখন কোথায় যাব?। ঘরে খাবার নেই, গতকাল ত্রাণের খবরে বিভিন্ন জায়গায় ছুটলাম। কিন্তু স্থানীয় নই; বলে সবাই ফিরিয়ে দিয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে করোনা ছাড়াই মারা যাব আমরা।
কাজ না পেয়ে হতাশা নিয়ে দিনমজুর নাজিম উদ্দিন বলেন, সবাই সবার খবর রাখলেও আমাদের ছিন্নমূল মানুষের কেউ খবর রাখে না। এখন এক বেলা খেয়ে বাঁচতে হয় আমাদের। কেউ পেটে-ভাতে নিলেও তার লগে চলে যেতাম। এই সুযোগও মিলছে না ভাই।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ শামসুল আরেফিন বলেন, সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত খাদ্যসামগ্রী বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে। তারা তাদের নিজেদের এলাকায় বণ্টন করে থাকেন। ছিন্নমূল মানুষ খাদ্যসামগ্রী পেতে জনপ্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।