‘খাইতে পাই না, বাসা ভাড়া কেমনে দিমু- আল্লাহ্ই জানেন’
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার সবাইকে ঘরে থাকার জন্য বললেও নিম্নআয়ের মানুষরা ত্রাণের জন্য বাধ্য হয়েই বের হচ্ছেন। আবার কিছু কিছু রিকশাচালক, দিনমজুররাও সংসার চালাতে পেটের দায়ে ঘর থেকে বের হতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে অরক্ষিত অবস্থায় বের হয়ে এবং স্বাস্থ্যবিধি না মেনে তারা নিজের এবং অন্যদের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছেন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্থানীয় উচ্চবিত্ত ও সরকার ঘোষিত ত্রাণ সহায়তা নেয়ার জন্য রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় সকাল থেকেই এইসব নিম্নআয়ের মানুষদের চাতকের মতো অপেক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে। রাস্তায়, ফুটপাতে, মোড়ে মোড়ে ত্রাণের আশায় দল বেঁধে বসে আছেন সমাজের দিনমুজুর শ্রেণির এইসব মানুষেরা।
গুলিস্তানে ত্রাণের জন্য বসে থাকা ৪-৫ মহিলা বলেন, ‘সারা দিন ধরে বসে আছি। এখনও কিছুই পাই নাই। ত্রাণ দিচ্ছে, তবে কেউ পাচ্ছে আবার কেউ পাচ্ছে না।’
সেগুনবাগিচা এলাকায় থাকেন মর্জিনা। তিনি বলেন, ‘ফজরের নামাজ পড়ে বের হয়েছি। মৌচাক, মালিবাগ দিয়ে ঘুরে ঘুরে প্রেসক্লাবের সামনে আসলাম। কোথাও কোনও ত্রাণ পাই নাই। এই কয়েকদিনের মধ্যে শুধু একদিন এক টুপলা পেয়েছিলাম। কিন্তু আমার পরিবারেতো ৭ জন সদস্য, একদিনেই শেষ হয়ে গেছে।’
প্রেসক্লাবের সামনে ত্রাণের অপেক্ষায় বসে থাকা তেমনই এক মহিলা বলেন, ‘আমিও সারাদিন ঘুরেছি, কিছুই পাই নাই। এদিকে আবার বাড়ির মালিক বাসা ভাড়া চেয়েছেন। বাসা ভাড়া দিতে না পারলে নাকি ঠ্যাং বাড়িয়ে ভাঙবে। একবেলা খাইতে পারি না। বাসা ভাড়া যে কেমনে দিমু, আল্লাহই ভাল জানেন।’
ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে থাকেন হৃদয়। গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে। তিনি বলেন, ‘সরকার ঘরে থাকতে বলছে। প্রথম অবস্থায় ঘরেই ছিলাম। পরে দেখি না খেয়ে মরতে হবে। কোনও ত্রাণও পাই না। পেটের দায়ে রিকশা নিয়ে বের হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘এযাবত একদিনও ত্রাণ পায় নাই। অনেক জায়গায় ত্রাণ দিচ্ছে। কিন্তু লাইনে দাঁড়ায়ে থাকলেও পাওয়া যায় না। ১০-১২ জনকে দিয়ে আর দেয় না। তাই ভেবেছি বাঁচতে হলে খেতে হবে, খাওয়া জোগাড় করতে কামেও বের হতে হবে।’
‘পাঁচজনের সংসারে একা কামাই করি, এমনিতেই চলতে কষ্ট হয় । তার মধ্যে সরকার ঘরে থাকতে বলছে। না খেয়ে কেমনে ঘরে থাকবো বলেন’- কথাগুলো বলতে বলতে দুনিয়ার সব অসহায়ত্ব ঝরে পড়ে রিকশাচালক হৃদয়ের কণ্ঠে।
রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন, পুলিশে কিছু বলে না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুলিশ এসে সরে যেতে বলে, সরে যাই। তাই আর কিছু বলে না। আবার যারা অটোরিকশা চালায় তাদেরকেও সরতে বলে। আমরা পা দিয়ে রিসশা চালাই, আমাদের তেমন একটা কিছু বলে না।’
জুরাইনের আরেক রিকশাচালক রফিক। গ্রামের বাড়ি রংপুরে। দেশের এই অঘোষিত লকডাউনে তারও পেটের দায় মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এ সময় রিকশা নিয়ে বের হয়েছি । রাতের খাবারটা তো জোগাড় করতে হবে। না হলে তো না খেয়ে থাকতে হবে।’ ঠিক এসময় তার মোবাইল ফোনে একটা কল আসে । এপাশ থেকে তাকে বলতে শোনা যায়- ‘এখন টাকা দিতে পারবো না । রাতের জন্য চাল কিনবো, সে টাকাই পকেটে নাই । আপনার টাকা পরে দেবো। সুদ ধরলে ধরেন।’ কীসের টাকা জানতে চাইলে বলেন, ‘এক হাজার টাকা ধার নিয়েছিলাম, সেই টাকা চায় । কেমনে দিমু কন। আবার কাল টাকা না দিতে পারলে নাকি সুদ দিতে হবে।’