সমালোচনা শুনলেই আ’লীগ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে : রিজভী
সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করা যাবেনা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। কিন্তু করোনা প্রতিরোধে সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে সমালোচনা করলেই আওয়ামী লীগ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভিডিও কনফারেন্সে রিজভী এসব কথা বলেন।
লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, মহামারী ‘নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)’ পুরো বিশ্বকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। দুর্যোগের কাছে মানুষের অর্থ, অস্ত্র, ক্ষমতা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। সামান্য উঁচু-নীচুর ব্যবধানেও যেখানে মানুষ মানুষকে প্রতিপক্ষ-প্রতিযোগী ভাবতো, আজ মৃত্যুর ভয় সবাইকে জড়োসড়ো করে ফেলেছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গের বিভেদহীন দূত হিসেবে প্রতিদিন শত শত মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে নতুন নতুন মানুষের দুয়ারে হাজির হচ্ছে প্রাণঘাতী করোনা। লাখ লাখ মানুষকে সংক্রমণ আর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু বিশ্বকে আজ এক কাতারে দাঁড় করিয়েছে।
তিনি বলেন, গতকাল বুধবার পর্যন্ত সারাদেশে ১৭৫৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫৪ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ধরা পড়েছে। বাংলাদেশে সামাজিক পর্যায়ে সংক্রমিত হচ্ছে বলে স্বীকার করলেও তা মৃদু মাত্রায় রয়েছে বলে দাবী করেছে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ। সরকার বলছে-সবকিছু নিয়ন্ত্রণে, পশ্চিমা মিডিয়া বলছে-আগামী দুই সপ্তাহ বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশের গণমাধ্যমও এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। মৃত্যু হানা দিচ্ছে দেশে দেশে। আর করোনা যদি এখনি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ না করা যায় তবে তা ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে। ইতোমধ্যে বিদেশী কুটনীতিকরা দলে দলে ঢাকা ছাড়ছেন।
আমরা মনে করি সরকারের নীতির কারণেই দেশের করোনা পরিস্থিতির আসল চিত্র ফুটে উঠছে না। ভেতরে ভেতরে সংক্রমণ হতে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে। আজকের পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, গতকাল ২৪ ঘন্টায় করোনার উপসর্গ জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন। আর সরকারী হিসাবে মারা গেছে একজন।
রিজভী বলেন, এক্ষেত্রে পরীক্ষা বাড়ানোর পাশাপাশি লকডাউন ও কোয়ারেন্টাইনকে গুরুত্ব দিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা-হঠাৎই বাড়তে পারে ভয়াবহতা। সেক্ষেত্রে লকডাউন চালিয়ে যাওয়া, আরো বেশি বেশি টেস্ট করে পজেটিভ রোগী খুঁজে আইসোলেশনে নিয়ে আসা কাজে আসতে পারে। সেনাবাহিনী আজ থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং হোম কোয়ারেন্টাইনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা মনে করি-সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া এ বিপদ ঠেকানো সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, তথ্য গোপন করে এই মহামারী এড়ানো যাবে না। তাই সঠিক তথ্য দিয়ে এই রোগের ভয়াবহতা বুঝিয়েই জনগণকে কোয়ারেন্টাইন মেনে চলতে অনুপ্রাণিত করতে হবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ, সুরক্ষা ও প্রতিকারে সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য দিয়ে মানুষের আস্থা তৈরি করা উচিত। সরকারের তথ্য গোপন পলিসির সমালোচনা করার কারনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গত কয়েকদিনে বিএনপির ১২ নেতাকর্মী ও চিকিৎসকদের গ্রেফতার করা হয়েছে। অবিলম্বে তাদের মুক্তি দিন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে রোগের পরীক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে দেশে পরীক্ষা নিয়ে নানা জটিলতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী কিংবা সরকারী পরিসংখ্যানের আপডেট এখন কেউ আর বিশ্বাস করছে না। অন্ধ হলেই কি বন্ধ হবে প্রলয়!
‘এই সংকটময় সময়ও বিএনপি জনগণের পাশে নাই। তারা সরকারের সমালোচনা করে এই সংকটময় পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার অপতৎপরতায় লিপ্ত।’ সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, আমি বলতে চাই- গণতন্ত্রকে যাদুঘরে পাঠিয়েছেন বলেই সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরাকে অপতৎপরতা হিসেবে অভিহিত করছেন। সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরে সমালোচনা করাকে প্রকৃত গণতন্ত্রে অপতৎপরতা হিসেবে গণ্য করে না। আপনাদের গণতান্ত্রিক মানস নেই বলেই সমালোচনা শুনলেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এই মহাদুর্যোগে যখন মানুষ জাতীয় ঐক্যের কথা বলছে তখন ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য বিভাজন ও বিভেদেরই প্রতিফলন। কি কারণে যেন আপনারা সমালোচনার শঙ্কায় অস্থির থাকেন। করোনা প্রতিরোধ বা মোকাবেলায় বাংলাদেশ যদি এতটাই সক্ষম হতো তাহলে ইউরোপিয়ান, আমেরিকান ও জাপানীরা দেশ ছেলে যাচ্ছেন কেনো?
তিনি বলেন, আমার প্রশ্ন তিনি কোয়ারেন্টাইনে থেকে কি বিএনপির সমালোচনা ছাড়া কিছুই বোঝেন না? যখন করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলো তখন আমরাই রাজপথে নেমেছি, সারাদেশের সর্বত্রইা প্রথম সচেতনতা শুরু করেছি। আমরা এবং আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই দুঃসময়ে দেশের সকল রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, শ্রেণী-পেশার সংগঠন অর্থাৎ সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে দুর্যোগ মোকাবিলা করার আহবান জানিয়েছেন। সামাজিক, রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক সকল ভেদাভেদ ভুলে এখন সকলের একজোট হওয়ার সময়। আমাদের দল ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সারাদেশে যে যেভাবে পারছেন দলের নির্দেশ অনুযায়ী জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। বিএনপিই একমাত্র দল যারা দেশের প্রতিটি দুঃসময়ে জনগণের পাশে থেকেছে এবং আছে।
রিজভী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বারবার যিনি গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করেছেন, তাকে দীর্ঘ ২৬ মাস বিনা দোষে কারাগারে আটকিয়ে রাখা হয়েছিল। তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়া হয়েছে। তিনি গুলশানস্থ নিজ বাসায় অবস্থান করছেন। এমতাবস্থায় তার নিরাপত্তার জন্য মাননীয় চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব আইজি বরাবরে আবেদন করলেও এ বিষয়ে এখনো পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। বিএনপির পক্ষ থেকে আমি অবিলম্বে বিএনপির মাননীয় চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পুলিশের আইজিপির কাছে অনুরোধ করছি।