‘এইভাবে চলতে থাকলে না খাইয়া মরতে অইবো’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের বিপরীত দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে পান-সিগারেট বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা আলেয়া বেগম।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে গত বেশ কয়েকদিন ধরে টানা সরকারি ছুটির কারণে রাজধানী ঢাকা এখন প্রায় জনমানবশূন্য। বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া জনসাধারণকে বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। আর এতেই কপাল পুড়েছে আলেয়ার।
সহায় সম্বলহীন আলেয়া বেগম পান-সিগারেটের দোকান চালিয়ে কোনোরকমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। বর্তমানে ঘরের বাইর লোকজন না আসায় বিশেষ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ নিষেধ থাকায় তার বেচাকেনা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।
গত দুদিন ধরে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হলেও আলেয়া বেগমের ভাগ্যে তা জোটেনি।
বুধবার (১ এপ্রিল) বিকেলে আলেয়া বেগম কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘সাহায্য দিলে কী অইবো, ভাঙা পাও লইয়া আমিতো দৌড়াইতে পারি না। একই লোক বারবার দৌড়াইয়া প্যাকেট লইয়া লইতেছে। কয়দিন আগেও শরীরটা আমার মোটা আছিল, না খাইয়া কয় দিনে শুকাইয়া গেছে। এইভাবে চলতে থাকলে না খাইয়া মরতে অইবো।’
আলেয়া বেগমের কান্না যেন থামতেই চাইছে না। এ প্রতিবেদককে অনুরোধ করে নিয়ে যান তার বন্ধ থাকা পান-সিগারেটের দোকানের কাছে। গত কয়েকদিন ধরে দোকান (বাক্স) বন্ধ থাকায় ধুলাবালি পড়েছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে আলেয়া বেগম বলেন, ঢাকা শহরে চাল চুলা কিছুই নেই। ফুটপাতে নিত্যদিন কাটে তার। পান-সিগারেট বিক্রি করে কোনোরকমে জীবন ধারণ করলেও বর্তমান করানাভাইরাসের এ পরিস্থিতিতে তার বেঁচে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে।
কথা বলে চলে আসার সময় দুর্যোগ পরিস্থিতির শিকার অসহায় বৃদ্ধা ক্ষীণকণ্ঠে বললেন, ‘করোনাভাইরাসে কী মরুম, অহন তো না না খাইয়া মইরা যামু মনে হইতাছে।’