লকডাউনেও কাজের খোঁজে রাস্তায় খেটে খাওয়া মানুষ
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকার সারাদেশ লকডাউন ঘোষণা করার পর থেকেই খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট বেড়েছে বহুগুণে।
বিশেষ করে যারা দিন আনে দিন খায়- এমন লোকদের কষ্টের শেষ নেই। এই বিচ্ছিন্ন অবস্থাতেও কাজের খোঁজে বের হয়েছেন অনেকেই। কিন্তু কোথাও কাজ না পেয়ে অনেকেই তিনবেলার জায়গায় একবেলা খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় দিনাজপুর শহরের ষষ্ঠীতলায় বেশ কয়েকজন নারী -পুরুষের কাজ খোঁজার দৃশ্য চোখে পড়ে। পরিবার ও সন্তানদের পেটে খাবার তুলে দিতেই করোনাভাইরাস প্রতিরোধের যে নিয়ম-কানুন সেগুলোর কোনো গুরুত্ব নেই এই অসহায় মানুষদের কাছে।
সরকারিভাবে যে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে সেই বরাদ্দও পাচ্ছেন না এসব কর্মহীন মানুষরা। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, কাউন্সিলরা নাম লিখছে কিন্তু খাদ্য দিচ্ছে না।
মরিয়ম বেগন (৪৬) রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। তিনি ছাদ ঢালাইয়ের কাজ খুঁজতে দিনাজপুর শহরের ষষ্ঠীতলায় অন্যদের মতো নিজের শ্রমকে বিক্রি করতে এসেছেন। কিন্তু শ্রম কেনার কোনো মালিক নেই। সকাল থেকে দুই ঘণ্টা বসে থেকেও কেউ কাজে ডাকতে আসেনি।
তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী নেই। কাজ বন্ধ। খাব কী? কাজ না করলে খাওয়ার কোনো উপায় নেই। তাই বাধ্য হয়েই কাজে বেরিয়েছি কিন্তু কেউ কাজে ডাকছে না।’
মোহসেনা বেগমের (৫০) প্রতিদিন তিন কেজি করে চাল লাগে পরিবারে। এই নারীরও স্বামী নেই। তিনি ও তার ছেলে মিলে সংসার চালান। বর্তমানে কাজ না থাকায় পড়েছেন চরম বিপাকে।
এই নারী বলেন, ‘ঘরত চাউল নাই তাই কামত বেরাইছি কিন্তু কাহো হামাক কামত ডাকে না! সরকারিভাবে চাউল হামরা এখনো পাই নাই। খালি নাম লেখি নেছে কিন্তু চাউল তো দেছে না!’
শহরের ষষ্ঠীতলায় একত্রিত হওয়া এসব কাজ খোঁজা নারী-পুরুষের মধ্যে করোনাভাইরাস সম্পর্কে তেমন কোনো সচেতননাও দেখা যায়নি। কেউ কেউ মাস্ক পড়ে থাকলেও সামাজিক দূরত্ব সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই এসব শ্রমজীবী মানুষের।
মো. তোফাজ্জল হোসেন (৩৬) বলেন, ‘আমি রাজমিস্ত্রীর কাজ করি। কয়েকদিন ধরে সকালে এখানে কাজের জন্য দাঁড়িয়ে থাকি কিন্তু কাজ পাই না। আজকে হঠাৎ করেই একজন মালিক কাজের জন্য ডেকেছেন। কাজ না করলে আমাদের দিন চলে না। তাই কাজে বেরিয়েছি।’
এদিকে দিনাজপুরে করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারিভাবে ৫৭৬ মেট্রিকটন চাল ও ১৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
এসব বরাদ্দ বিভিন্ন উপজেলায় ইউএনওদের মাধ্যমে কর্মহীন মানুষের তালিকা করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি সকল দিনমজুর ও কর্মহীন মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিতে। আমরা আজকেও (বৃহস্পতিবার) ৫০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি।
তিনি বলেন, সরকারি বরাদ্দ উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওদের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। যাদের নাম তালিকায় আসছে না তারা যেন ইউএনও বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করে বরাদ্দের তালিকায় নাম লেখায়। অথবা জেলা প্রশাসক বরাবর কেউ আবেদন করলেও আমরা খাদ্যসামগ্রী তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেব।’