সরকার লুকানোর পলিসির নাম দিয়েছে ‘গুজব’: রিজভী

0

মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস নিয়ে সরকারের পলিসি জনগণের কাছে একদম পরিষ্কার হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, নো কিট, নো করোনা। নো টেস্ট, নো করোনা। নো পেসেন্ট, নো করোনা। যে পলিসি করে ইরান ও ইতালি সরকার তাদের দেশের সর্বনাশ করেছে, বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে গোটা বিশ্ব থেকে। অথচ আমরাও সেই লুকানোর পলিসি দিয়েই সবকিছু ম্যানেজ করতে চলেছি! উল্টো প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে সরকারের এই লুকানো পলিসি যাতে কেউ প্রকাশ না করতে পারে তার জন্য নানা রকমের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এই লুকানোর পলিসির নাম দিয়েছে ‘গুজব’।

সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, আজ এমন এক অকল্পনীয় ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আপনাদের সমীপে উপস্থিত হয়েছি, যখন করোনা ভাইরাসের মহাদুর্যোগের কারণে সামনে বসে সরাসরি কথা বলার মতো পরিবেশ নেই।

কোভিড-১৯ ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নিয়েছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, দুই মাস সময় পেলেও সরকার সমস্যার দিকে কোনও মনোযোগ দেয়নি। উপদ্রুত দেশগুলো থেকে দেশে প্রত্যাবর্তনকারী প্রবাসী ভাই-বোনদের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসরণে কোয়ারেন্টাইন করার সরকারি ব্যর্থতা প্রমাণ করে যে, সমন্বয়হীনতা ও প্রস্তুতির অভাব দেশকে কত বড় বিপদে ফেলতে পারে।

তিনি বলেন, মহাবিপদ মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি নেই, সমন্বয় নেই, আক্রান্ত রোগী শনাক্তকরণের পর্যাপ্ত উপকরণ ও ব্যবস্থাপনা দেশে নেই; নেই চিকিৎসকদের রক্ষার ব্যবস্থা, নেই যথেষ্ট মাস্ক, স্যানিটাইজার ও ভেন্টিলেটর! পরীক্ষার ব্যবস্থা ছাড়া সরকার আক্রান্ত সংখ্যার যে তথ্য দিচ্ছে তা বিশ্বাসযোগ্যতা পাচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে টানা দুদিন বলা হচ্ছে- দেশে নতুন করে করোনা আক্রান্ত নেই। অথচ পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশনসহ মিডিয়ায় প্রতিদিন সর্দি, জ্বর, কাশিতে মারা যাওয়ার খবর দিচ্ছে। ইলেকট্রনিকস, প্রিন্ট মিডিয়ার খবরের সঙ্গেও সরকারের ব্রিফিংয়ের আকাশ-পাতাল ব্যবধান।

তিনি বলেন, দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর তিন সপ্তাহ অতিবাহিত হয়েছে। এরই মধ্যে দেশে শুরু হয়েছে ভাইরাসটির সামাজিক সংক্রমণ (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন)। এ অবস্থাকে সরকার স্বল্প পরিসরে সামাজিক সংক্রমণ বলে উল্লেখ করেছে। এখন পর্যন্ত সংক্রমিত রোগীদের সংস্পর্শে আসা সবাইকে চিহ্নিত করে পরীক্ষার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এছাড়া বিদেশ থেকে আসা সবার পরীক্ষাও হয়নি। এই অচিহ্নিত লোকগুলোই ভাইরাসটি সমাজে জ্যামিতিক হারে ছড়িয়ে দেয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে।

রিজভী বলেন, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন পথে ৬ লাখ ৬৫ হাজার ১৩ জন দেশে প্রবেশ করেছেন। শেষ দুই সপ্তাহে এসেছেন পৌনে দুই লাখ মানুষ। এছাড়া এ পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআরের হট নম্বরগুলোয় সহায়তা চেয়ে ফোন কল এসেছে ৮ লাখ ২ হাজার ৫৮০ জনের। এ পর্যন্ত পরীক্ষা করা হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৭৬ জনের। বাকি লোকদের ভেতর কতজন আক্রান্ত তা কেউ বলতে পারছে না। শনাক্তের বাইরে থাকা লোকগুলো সমাজে মেলামেশা করছেন। নিজের অজান্তেই ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বারবার বলে আসছে, করোনা আক্রান্তদের শনাক্ত করতে যত বেশি সম্ভব পরীক্ষা করতে হবে। অথচ সরকারের পুরো ব্যবস্থাপনা হলো পানিতে হাল বিহীন নৌকার দুরবস্থা যেমন।

রিজভী বলেন, দীর্ঘদিন সময় পেয়েও জেলা পর্যায়ে করোনা পরীক্ষা-নিরীক্ষার সরঞ্জামাদি সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ছিল সরকারের। সে দায়িত্ব পালনে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। ‘দিন আনি দিন খাওয়া’ পরিবারগুলোর খাদ্য সংকট ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। সেই সংকট যেন বড় বিপদ না হয়ে ওঠে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে খেটে খাওয়া মানুষকে খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। প্রণোদনা বাড়াতে হবে। কিন্তু সরকারের পর্যাপ্ত উদ্যোগ ও আন্তরিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগের নেতা, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ধনিক শ্রেণির জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার কথা বলছে সরকার। তাতে সব চেয়ে দুরবস্থায় পতিত সাধারণ নাগরিকদের দুর্দশা লাঘব করবে কে?

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com