নো কিট, নো টেস্ট, নো করোনা : রিজভী

0

মহামারি করোনাভাইরাস নিয়ে বর্তমান সরকারের পলিসি জনগণের কাছে একদম পরিষ্কার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, নো কিট, নো করোনা। নো টেস্ট, নো করোনা। নো পেশেন্ট, নো করোনা। যে পলিসি করে ইরান ও ইতালি সরকার তাদের দেশের সর্বনাশ করেছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে গোটা বিশ্ব থেকে। আমরাও সেই লুকানোর পলিসি দিয়েই সবকিছু ম্যানেজ করতে চলেছি।

তিনি আরও বলেন, উল্টা প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে সরকারের এই লুকানো পলিসি যাতে কেউ প্রকাশ না করতে পারে, সেজন্য নানা রকমের অপচেষ্টা চলছে। এই লুকানোর পলিসির নাম দিয়েছে গুজব।

সোমবার (৩০ মার্চ) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী আহমেদ।

রিজভী বলেন, আজ এমন এক অকল্পনীয় ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি যখন করোনাভাইরাসের মহাদুর্যোগের কারণে সামনে বসে সরাসরি কথা বলার মতো পরিবেশ নেই। কোভিড-১৯ ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নিয়েছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, দুই মাস সময় পেলেও সরকার সমস্যার দিকে কোনো মনোযোগ দেয়নি। উপদ্রুত দেশগুলো থেকে দেশে প্রত্যাবর্তনকারী প্রবাসী ভাইবোনদের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসরণে কোয়ারেন্টাইন করার সরকারি ব্যর্থতা প্রমাণ করে যে, সমন্বয়হীনতা ও প্রস্তুতির অভাব দেশকে কত বড় বিপদে ফেলতে পারে।

তিনি বলেন, মহাবিপদ মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি নেই, সমন্বয় নেই, আক্রান্ত রোগী শনাক্তকরণের পর্যাপ্ত উপকরণ ও ব্যবস্থাপনা দেশে নেই। নেই চিকিৎসকদের রক্ষার ব্যবস্থা, নেই যথেষ্ট মাস্ক, স্যানিটাইজার ও ভেন্টিলেটর। পরীক্ষার ব্যবস্থা ছাড়া সরকার আক্রান্ত সংখ্যার যে তথ্য দিচ্ছে তা বিশ্বাসযোগ্যতা পাচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে টানা দুইদিন বলা হচ্ছে, দেশে নতুন করে করোনা আক্রান্ত নেই। অথচ পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশনসহ মিডিয়া প্রতিদিন সর্দি, জ্বর, কাশিতে মারা যাওয়ার খবর দিচ্ছে। করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ২৪ ঘণ্টায় পাঁচজনের মৃত্যুর সংবাদ ছাপা হয়েছে আজকের খবরের কাগজে।

বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, জাতির মহাবিপদের মুহূর্তে দুর্যোগ মোকাবিলার কোনো সমন্বিত উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো বাস্তবতা অস্বীকার করে, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বলে সরকারের মিথ্যা সাফল্যের বন্দনায় মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের ব্যস্ততা এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য জনগণকে গভীরভাবে চিন্তিত, ক্ষুব্ধ ও হতাশ করেছে।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সংক্রমিত রোগীদের সংস্পর্শে আসা সবাইকে চিহ্নিত করে পরীক্ষার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। বিদেশ থেকে আসা সবার পরীক্ষাও হয়নি। এই অচিহ্নিত লোকগুলোই ভাইরাসটি সমাজে জ্যামিতিক হারে ছড়িয়ে দেয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে।

বিদেশ থেকে দেশে ফেরা মানুষের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন পথে ছয় লাখ ৬৫ হাজার ১৩ জন দেশে প্রবেশ করেছেন। শেষ দুই সপ্তাহে এসেছেন পৌনে দুই লাখ মানুষ। এছাড়া এ পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আইইডিসিআরের হট নম্বরগুলোয় সহায়তা চেয়ে ফোনকল এসেছে ৮ লাখ ২ হাজার ৫৮০ জনের। এ পর্যন্ত পরীক্ষা করা হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৭৬ জনের। বাকি লোকদের ভেতর কতজন আক্রান্ত তা কেউ বলতে পারছে না।

রিজভীর ভাষ্য, দীর্ঘদিন সময় পেয়েও জেলা পর্যায়ে করোনা পরীক্ষা-নিরীক্ষার সরঞ্জমাদি সরবরাহ করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ছিল সরকারের। সে দায়িত্ব পালনে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।’

বিএনপির এই মুখপাত্র আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে ২০ শতাংশ অর্থাৎ তিন কোটি ৪০ লাখ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এর মধ্যে প্রায় দুই কোটি মানুষের অবস্থান অতি দারিদ্র্যসীমার নিচে। তাদের কাছে খাদ্য সাহায্য পৌঁছে দিতে হবে। কিন্তু সরকারের পর্যাপ্ত উদ্যোগ ও আন্তরিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন দেশের ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে, এই সরকার দরিদ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য কিছুই করছে না।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com