খালেদা জিয়ার মুক্তিতে লাভবান দুই পক্ষই

0

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিতে দেশের রাজনীতিতে স্বস্তি ফিরে এসেছে। রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে, মরণব্যাধি করোনায় সৃষ্ট সঙ্কটকালে খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়েছেন। এতে প্রকৃতপক্ষে রাজনীতিতে কোনো পক্ষই হারেনি। দুই পক্ষই রাজনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে। ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিবাচক ধারা সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন তারা।

‘মানবিক বিবেচনায়’ খালেদা জিয়ার মুক্তিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক চাওয়া পূরণ হয়েছে বলে মনে করছেন ওই দলের নীতিনির্ধারকরা। দুই শর্তে মুক্তি পেলেও বিএনপি বলছে, রাজনৈতিকভাবে তারাও লাভবান হয়েছে। মুক্তির সময়টি সরকারি দলের জন্য সুবিধাজনক হলেও বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এবং বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তার প্যারোলে মুক্তি নেয়ার সুযোগ থাকলেও তা তিনি নেননি। সরকারই সাজা স্থগিত করে তাকে মুক্তি দিয়েছে।

কয়েক মাস ধরে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সাথে খালেদা জিয়ার পরিবারের পর্দার অন্তরালে কয়েক দফা আলোচনা হলেও সবাই একবিন্দুতে পৌঁছাতে পারেনি। কিন্তু বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশে প্রায় অর্ধশত আক্রান্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা নমনীয় হন। এতে বিএনপি ও বেগম জিয়ার চাওয়াও পূরণ হয়েছে। সরকার ও আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কেউ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত আঁচ করতে পারেননি। খুবই গোপনীয়তা বজায় রেখে সরকারপ্রধান তার সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন।

আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, খালেদা জিয়ার এই মুক্তিতে বিএনপি ও তাদের নেতাকর্মীদের কোনো কৃতিত্ব নেই। কারণ আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করতে তাদের দল ব্যর্থ হয়েছে। শেখ হাসিনার উদারতায় খালেদা জিয়ার মুক্তি হয়েছে। এ ছাড়া এমন সময় তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে যখন করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের চলাচল সীমিত এবং জনসমাগমের ওপর বিধিনিষেধ আছে; যে কারণে বিএনপি এই মুক্তি উদযাপন করতে পারেনি।

তবে বিএনপি বলছে, প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে সরকার রাজি থাকলেও তাতে সাড়া দেননি খালেদা জিয়া। প্যারোলে মুক্তিতে তিনি কঠিন শর্তে বেড়াজালে পড়তেন। এখনকার শর্ত অনেকটাই শিথিল। এতে তার রাজনীতি করতে বাধা থাকবে না। যদিও এখন করোনা পরিস্থিতির কারণে সেভাবে তার রাজনীতি করার সুযোগ তৈরি হবে না।
এ মুক্তিতে দুই দলের অবস্থা বিশ্লেষণ করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে সরকার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।

তার মতে, খালেদা জিয়া মুক্তি পাওয়ায় সরকার, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কেউই কম-বেশি লাভবান হয়নি। দুই দলই উপকৃত হয়েছে, দেশে স্বস্তি ফিরেছে।

ডা: জাফরুল্লাহ মনে করেন, খালেদা জিয়া মুক্ত হওয়ার পর করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সর্বদলীয় জাতীয় ঐক্য হওয়া উচিত। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি একান্তই মানবিক কারণে। তার পরিবারের সদস্যের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাহী ক্ষমতাবলে তিনি মুক্তি পেয়েছেন। এ ধরনের মানবিক ও সাহসী সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর মতো সরকারপ্রধানের পক্ষেই নেয়া সম্ভব।

খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের উদ্যোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের পরিচয় দিয়ে মানবিক বিবেচনায় তার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বয়স ও অসুস্থতা খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে সরকারপ্রধান তাকে মুক্তি দিয়েছেন। আশা করি বিএনপি এ বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে আমাদের সবার অভিন্ন শত্রু করোনা মোকাবেলায় সরকারের সর্বাত্মক ও সম্মিলিত উদ্যোগে সহযোগিতা করবে।

বিএনপির সিনিয়র নেতারা অনেকে মুক্তির বিষয়টি নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন। তারা মনে করেন এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য রয়েছে। আলোচনার আড়ালেও আলোচনা থাকে। সেই আলোচনায় তৃতীয় পক্ষও থাকে। তৃতীয় কোনো পক্ষের মধ্যস্থতায় মুক্তি হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়া মুক্ত হয়েছেন। তিনি মারাত্মক অসুস্থ। এখন আমাদের সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার তার চিকিৎসা। রাজনৈতিক বিশ্লেষণ দলীয় ফোরামে করা হবে। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তিতে সবার মাঝে একটা স্বস্তি এসেছে। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, রাজনীতি, গণতন্ত্র, বিধিবিধান, আইনের শাসনের অভাব আদালতের ভূমিকা যেখানে গৌণ, সেখানে আমাদের ব্যর্থতার দায়ও আছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com