জমি দখল করতে এক নারীর বিরুদ্ধে ৮ মামলা

0

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় জমি দখল করতে এক নারীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন ও মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের ওই জমি হাতিয়ে নেয়ার জন্য একের পর এক মামলা দেয়ায় ভুক্তভোগী আশা বেগম (৪৪) এখন ৮ মামলার আসামি। তার বাড়ি সরাইল উপজেলার নিজসরাইল গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত সবুর উদ্দিনের মেয়ে। বর্তমানে তিনি স্বামী-সন্তান নিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে বসবাস করেন।

সরাইল উপজেলা সদরের সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই সড়কের পাশে নিজসরাইল মৌজায় ১২১ শতক আয়তনের ওই জমিটির অবস্থান । প্রতি শতক জমির মূল্য প্রায় ৮ লাখ টাকা।

অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই এই জমি হাতিয়ে নিতে আশা বেগমের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন সরাইল উপজেলা সদরের দেওয়ানপাড়া এলাকার বাসিন্দা জুরু মিয়া।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশা বেগমের বাবা ও তিন চাচা ওই জমির মালিক। জমির একাংশ একই এলাকার প্রয়াত মাজম খাঁর কাছে বিক্রি করেছিলেন আশার পূর্ব পুরুষরা। তার কাছ থেকে কয়েক বছর আগে ওই অংশ কিনে নেন বড় দেওয়ানপাড়ার জুরু মিয়া। এরপর পুরো জমি দখল করে নিতে জুরু নানাভাবে আশাকে হয়রানি-নির্যাতন শুরু করেন। গত ১৮ মাসে বিভিন্ন লোককে বাদী করে থানা ও আদালতে আশা ও তার আত্মীয়-স্বজনদের বিরুদ্ধে আটটি মামলা দায়ের করান। তবে এসব মামলার বাদীরাও আশাকে চিনেন না। এমনকি আশাও বাদীদের কাউকে চিনেন না।

আশা বেগম অভিযোগ করে বলেন, জুরু মিয়ার মালিকানাধীন একটি ভাড়া ভবনে সরাইল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারের কার্যালয়। এই শক্তি কাজে লাগিয়ে একের পর এক তাকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি লিভারের সমস্যায় হাসপাতালে ছিলেন গত বছরের ১৭ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কিন্তু ১৮ ফেব্রুয়ারি সরাইলের বড় দেওয়ানপাড়ার জাবেদ মিয়া নামে এক ব্যক্তির আঙ্গুল ভেঙে ফেলেছেন অভিযোগে মামলা দেয়া হয় তার বিরুদ্ধে।

২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি জাবেদ মিয়ার বাদী হয়ে করা এই মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান সরাইল থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. এনামুল হক। তিনি ওই বছরের ১৫ জুলাই দীর্ঘ তদন্ত শেষে ও সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনাটি মিথ্যা ও সাজানো উল্লেখ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রতিবেদন দেন। জুরু সরাইল সার্কেলের তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান ফকিরকে দিয়ে ওই এসআইকে বদলি করে দেন। এরপর থেকেই একে একে আরও সাতটি মামলায় আশাকে জড়ানো হয়। সবগুলো মামলার ঘটনা সুষ্ঠু তদন্ত করার দাবি নিয়ে তিনি একাধিকবার তৎকালীন ওসি মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়ার কাছে গেলেও তাকে পাত্তা দেননি। জাবেদ মিয়ার দায়ের করা মামলায় গত ৫ মার্চ থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত কারাভোগ করেন আশা।

এরপর ১৩ মার্চ জামিনে বের হয়ে পরদিন ১৪ মার্চ রাত সোয়া ৯টার দিকে সরাইলের বড্ডাপাড়া এলাকায় বোনের বাড়ি থেকে ফেরার পথে জুরুসহ তার কয়েকজন সহযোগী তাকে ও তার মেয়ে রুমাকে ক্ষুর দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন বলে অভিযোগ করেন আশা। মারাত্মক আহত অবস্থায় তাদেরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আশার বিরুদ্ধে আদালতে দায়ের হওয়া সাত ধারার একটি মামলায় কোনো ধরণের দাঙ্গা-হাঙ্গামায় না জড়ানোর অঙ্গীকারও করেছিলেন জুরু।

তবে জুরু মিয়া জানান, ১০৪ শতক জমি তার ক্রয় করা। ১৫/২০ বছর আগে মাজম খাঁ ও আবদুল বারীর কাছ থেকে তিনি এই জমি কিনেছেন। উল্টো আশা তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। জেল থেকে বের হয়ে আশা তার বিরুদ্ধে নাটক সাজিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন জুরু।

সরাইল থানার তৎকালীন ওসি মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, জুরু মিয়া ও আশা বেগমের মধ্যে জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়টি আমি জানতাম। তবে আশার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কারণ আমি থানা থেকে ছুটিতে গেলে ওই সময়ের মধ্যে জুরু থানায় কর্মরত অন্য কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে মামলা করতেন। এ ব্যাপারে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com