শোকাচ্ছন্ন সহকর্মীরা
গতকাল ভোররাতে মুম্বাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বাংলার অন্যতম রোমান্টিক হিরো তাপস পাল। তার বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। অভিনেতার এ প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমেছে টলিউডে। তার মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, চিরঞ্জিৎ, দেব, ইন্দ্রাণী দত্ত, রচনা ব্যানার্জি, দেবশ্রী রায়ের মতো জনপ্রিয় তারকারা।
রঞ্জিত মল্লিক
খবরটা শুনে খুব খারাপ লাগছে। আমরা অনেক সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি। সব দর্শকনন্দিত। এর মধ্যে ‘গুরুদক্ষিণা’র মতো সিনেমাও রয়েছে। খবরটা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল। দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে কাজ করেছি তো। তার আত্মার শান্তি কামনা করি।
দেবশ্রী রায়
আমিই বোধহয় তাপসের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক সিনেমার নায়িকা। আমরা ভালো বন্ধু। এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না তাপস নেই। আমাদের সম্পর্ক ছিল পারিবারিক। তাপস দা বাঙালি দর্শকের কাছে এমন একজন নায়ক, যার ফুটপ্রিন্ট তত দিন থাকবে, যত দিন বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থাকবে।
চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী
তাপসের শেষ জীবনটা অত্যন্ত খারাপ গেল, অত উজ্জ্বল ছেলের এই পরিণতি মানা যায় না। এক ভাইকে হারালাম। পরপর ভালো অনেক সিনেমা করেছে ও। ‘দাদার কীর্তি’ ও ‘সাহেব’র মতো সিনেমাগুলো ভোলা যায় না। তার প্রথম সিনেমা ‘দাদার কীর্তি’তে যে চরিত্র তাপস করেছিল, সেই চরিত্রের অফার এলে আমি কখনো রাজি হতাম না। কিন্তু সেই সাহস ও দেখিয়েছিল। কিন্তু শেষের দিকে ও হারিয়ে গেল। রাজনৈতিক একটা বক্তব্যের জন্য আড়ালে চলে গেল। দেহ চলে গেলেও ওর আত্মা থেকে যাবে। খুব খারাপ লাগছে আমার।
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
সেই হাসিটা বারবার মনে পড়ছে। বাঙালি দর্শকের কাছে অভিনেতা বা নায়ক হিসেবে তার অবদান থাকবে। জানি না, কেন ঈশ্বর তাকে এত তাড়াতাড়ি নিয়ে নিলেন। তার মতো অভিনেতা বাংলা সিনেমার ইতিহাসে কমই হতে পারে।
বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত
‘উত্তরা’, ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’সহ আমার পরিচালনায় বেশ কিছু সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন। রাজনৈতিক মতামতের বাইরে সবাই অভিনেতা তাপসের গুণমুগ্ধ। অসম্ভব বড়মাপের অভিনেতা ছিলেন তিনি, তার তুল্য অভিনেতা বর্তমান টালিগঞ্জে প্রায় নেই। তবে তার যথার্থ মূল্যায়ন হয়নি।
হরনাথ চক্রবর্তী
তাপসের সঙ্গে আমার সম্পর্ক শুধু নায়ক-পরিচালকের নয়। গুরুদক্ষিণা, সংঘর্ষ, আজকের সন্তানের মতো আমার বহু সিনেমায় সে কাজ করেছে। খেতে খুব ভালোবাসত তাপস। একজন ভালো অভিনেতাকে হারাল টালিগঞ্জ।
রচনা ব্যানার্জি
সব থেকে খারাপ মুহূর্ত এই দিন। প্রায়ই বলতেন বাড়ি আয় গল্প করি। দাদার সঙ্গে প্রায় ১৫-২০টা সিনেমা করেছি। ভীষণ ভালো মানুষ, অনবদ্য অভিনেতা। যার কোনো দিন বিকল্প হবে না।
ইন্দ্রাণী দত্ত
শুধু সহশিল্পী নয়, আমার প্রতিবেশী ছিলেন তাপস পাল। যেতে-আসতে নিয়মিত দেখা হতো তার সঙ্গে। শেষ ১৫ বছর ধরে আমরা প্রতিবেশী। ইন্ডাস্ট্রির সবাই যখন তাকে এড়িয়ে যেত, তখনো আমি তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছি। তার বাড়ির পুজোতেও যেতাম নিয়মিত। ভাবতেই পারছি না যে কাল থেকে তাকে আর বাড়ির সামনের রাস্তায় দেখতে পাব না।
দেব
টালিগঞ্জ থেকে লোকসভা, সবখানে এই মানুষটার সহায়তা পেয়েছি। ‘চ্যালেঞ্জ ২’ এবং ‘মন মানে না’ সিনেমায় তার সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। তাপস পাল এমনই একজন অভিনেতা, যিনি বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের সিনেমাতেও কাজ করেছেন, আবার মূল ধারার বাণিজ্যিক সিনেমায়ও দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। তাপস পালের অভিনয় দেখেই আমি বড় হয়েছি। অভিনয় জগতের বাইরে একজন অসম্ভব ভালো মানুষ ছিলেন।