প্রস্তাবিত বাজেট জনগণের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না: জামায়াত
প্রস্তাবিত বাজেট জনগণের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। বাজেটে করের চাপ, রাজস্ব আদায়ের যে টার্গেট তাও অবাস্তব। কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ বাজেটে রাখা হয়েছে তা নৈতিক ও অর্থনৈতিক কোনো দিক থেকেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই বাজেট সামাজিক ন্যায্যতার দিক থেকে বৈষম্যমূলক।
সোমবার (১০ মে) বিকেলে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেছে দলটি।
আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে আজ অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জামায়াত। দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বাজেটের সমালোচনা করে নানা দিক তুলে বক্তব্য দেন।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, অর্থমন্ত্রী গত ৬ জুন জাতীয় সংসদে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন। ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার’ শীর্ষক বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী তথ্য-উপাত্ত পেশ করে যেসব আশার বাণী শুনিয়েছেন, তার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।
তিনি বলেন, সুখী-সমৃদ্ধ বলতে অর্থমন্ত্রী যে বাংলাদেশের কথা বলেছেন, তা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। মানুষ দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় ঊর্ধ্বগতি, পানি-গ্যাসের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি এবং ব্যাংক লুটপাটসহ শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, বিদেশে অর্থপাচার ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় লাগামহীন দুর্নীতির কারণে চরম কষ্টকর জীবনযাপন করছেন। এটাকে সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ বলা যায় না।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেটে সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বড় অঙ্কের ব্যয় মেটাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ৪ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। এটি অর্জন করতে চলতি সংশোধিত বাজেট থেকে ৬৬ হাজার কোটি টাকা বেশি আহরণ করতে হবে। যা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
তিনি বলেন, বাজেটে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণের কোনো কৌশল রাখা হয়নি। প্রস্তাবিত বাজেটে ঋণ খেলাপি ও হুন্ডির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো কথা বলা হয়নি। বাজেটে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন অর্থমন্ত্রী। ৬ মাসের মধ্যে নাকি মূল্যস্ফীতি কমানো হবে। অথচ ১৫ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা নেই। আছে কিছু বাস্তবতা বর্জিত উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যমাত্রা।
বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার সমালোচনা করে গোলাম পরওয়ার বলেন, এ সিদ্ধান্ত নৈতিক ও অর্থনৈতিক কোনো দিক থেকেই গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থমন্ত্রীর এই পদক্ষেপ সামাজিক ন্যায্যতার দিক থেকে বৈষম্যমূলক। বাজেটে সর্বোচ্চ কর হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ শতাংশ। কিন্তু ১৫ শতাংশ কর দিয়েই কালো টাকা বৈধ করা যাবে, এ পদক্ষেপের মাধ্যমে কর ফাঁকিবাজদের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বাজেটে ব্যক্তি কর বৃদ্ধির পাশাপাশি আয়সীমা বাড়ানো উচিত ছিল। এক্ষেত্রে আয়সীমা সাড়ে ৪ লাখ টাকা হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।
‘প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ নিয়ে ব্যাপক প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ধারাবাহিকভাবেই জিডিপিতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমছে। যদিও শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ বেশি দেখিয়ে অনেকটা শুভঙ্করের ফাঁকির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।’
জামায়াতের এ নেতা বলেন, কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির কোনো নিশ্চয়তা নেই বাজেটে। সার, বীজ ও কীটনাশক প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কৃষকদের সুবিধা দেওয়ার কোনো দিকনির্দেশনা বাজেটে নেই। বাজেটে শিল্পের উন্নয়ন, বিকাশ এবং নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনে কোনো দিকনির্দেশনা রাখা হয়নি।
গোলাম পরওয়ার বলেন, বাজেটে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য বাস্তব কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বিশেষায়িত বিশেষ শুল্ক ছাড়ে চিকিৎসা যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির সুযোগ পাওয়া যেত। এক্ষেত্রে আমদানির শুল্ক হার ছিল ১ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটে ২০০টিরও বেশি চিকিৎসা যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে ১ শতাংশের শুল্ক বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করেছেন। এতে চিকিৎসাসেবার মূল্য অনেক বেড়ে যেতে পারে। জনগণ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবে।
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো বর্তমানে লুটপাটের কারখানায় পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, গ্রাহকরা ব্যাংকে টাকা রাখতে ভরসা পাচ্ছেন না। ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের নামে বিশেষ গোষ্ঠী জনগণের আমানতের টাকা আত্মসাৎ করার যে অপকৌশল গ্রহণ করেছে, তা রোধ করার জন্য বাজেটে কোনো দিকনির্দেশনা নেই।
‘সরকার ও সরকারের মদদপুষ্টদের আখের গোছানোর জন্যই এ বাজেট পেশ করা হয়েছে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হওয়ায় জনগণের প্রতি এ সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই।’