একাত্তরে হানাদার বাহিনীর হিংস্রতা ও দুঃশাসন হুবহু নকল করছে আওয়ামী সরকার: রিজভী

0

একাত্তরে হানাদার বাহিনীর হিংস্রতা ও দুঃশাসন হুবহু নকল করছে আওয়ামী সরকার। উদ্ভট গায়েবি মামলার নতুন নতুন মডেল দেখতে পারছি মন্তব্য করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রশ্ন রেখেছেন, জেলে থেকে কীভাবে পেট্রোলবোমা মারছেন বিএনপি নেতারা?

তিনি বলেন, ‘জেলে থেকে নাকি ট্রাকে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করেছেন বিএনপি নেতা। আপনারা দেখবেন সংবাদপত্রে কিন্তু এই বিষয়গুলো আসছে। এই তাজ্জব কাহিনী, এই তামাশার কথা-বার্তার কথা আমরা প্রায় শুনি, এসব সংবাদ গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। এসব হাস্যকর মামলা দিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের জুলুম, নির্যাতন ও হয়রানির ভয়ংকর আবর্তের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।’

দেশকে ‘বিএনপিশূন্য’ করতে সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে অভিযোগ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘গ্রেফতার থামছে না। দেশের জাতীয় নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত, ইউনিয়ন পর্যন্ত গ্রেফতারের যে হিড়িক চলছে, যে ধারা চলছে সেটা ভাষায় বলা যাবে না। এর সঙ্গে আক্রমণে আক্রান্ত হয়ে নিহত হওয়ার ঘটনাও কিন্তু থামছে না।’

শনিবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭৬ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় ৫৭৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে এই পর্যন্ত ৭ হাজার ৭১৩ জন গ্রেফতার, মোট মামলা ৫০৬টির অধিক, মোট আসামি ৩৮ হাজার ৫৬০ জন, মারা গেছেন ১০ জন এবং আহত ৫ হাজার ৭৮০ জন।’

বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী থাকার যে কী স্বাদ, সেইটা তো তিনি পেয়েছেন। সেই স্বাদের কারণে তিনি (শেখ হাসিনা) অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে চান না।’

‘বিদেশি এক সংবাদমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগনই নাকি তার মূল শক্তি। তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিচ্ছেন না কেন? জনগণ সঙ্গে থাকলে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে ভয় পাচ্ছেন কেন?’

এসময় রিজভী অভিযোগ করেন, ‘বিএনপিকে বল প্রয়োগে উৎখাতের পরিকল্পনা নিয়েছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে এখন একাত্তরের ভয়াল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একাত্তরে হানাদার বাহিনীর হিংস্রতা ও দুঃশাসন হুবহু নকল করছে আওয়ামী সরকার। তাদের শান্তি কমিটির মতো এখন আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করছে।’

তিনি বলেন, ‘হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের না পেলে তাদের পরিবারের লোকদের ধরে নিয়ে যেত। আওয়ামী পুলিশ সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করছে। একজনকে না পেলে তার ভাইকে, ভাইকে না পেলে তার বাবাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। সারা দেশ থেকে এই অমানবিক মনুষ্যত্বহীন সংবাদ প্রতিনিয়ত আমাদেরকে শুনতে হচ্ছে।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, ‘উদ্ভট গায়েবি মামলার নতুন নতুন মডেল দেখতে পারছি। ঢাকায় গ্রেফতার যুবদল নেতা মামুনের বিরুদ্ধে বরিশালে ককটেল নিক্ষেপের মামলা হয়েছে। যখন তিনি ঢাকায় গ্রেফতার হয়েছেন তার বেশ কিছুদিন পরে মামলা দিয়েছে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে। জেলে থেকে নাকি ট্রাকে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করেছেন বিএনপি নেতা কাঁকন।’

রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য সংঘাতময় পরিস্থিতি উসকে দিচ্ছে। মন্ত্রীরা জাতিসংঘ, গণতান্ত্রিক দেশগুলোর আহ্বান ও মানবাধিকার সংস্থার আহ্বান আমলে নেওয়া দূরে থাক, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ২৮ অক্টোবরে ফুটেজ যেগুলো প্রকাশ পেয়েছে তার প্রতিটাতে দেখা যায় পুলিশের পাশে লাঠিসোঁটা নিয়ে আওয়ামী লীগের লোকেরা আছে। বিএনপির ডাকা হরতাল-অবরোধে পুলিশ, ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগ একযোগে মোকাবিলা করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী ক্যাডাররা একে অপরের পরিপূরক।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা কারাগারে। জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সঙ্গে প্রচণ্ড অসদাচরণ করা হচ্ছে। তাকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। তার উচ্চমাত্রার ডায়াবেটিস, তিনি উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত। গ্রেফতারের পর তাকে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। সেখানে তাকে কোনো ওষুধ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com