আ.লীগ গান পাউডার দিয়ে মানুষকে পুড়িয়েছে, লগিবৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষকে হত্যা করেছে: বিএনপি

0

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্ষমতাসীনরা মধ্যযুগীয় অসভ্য বর্বর থেকেও খারাপ। এরা গান পাউডার দিয়ে মানুষকে পুড়িয়েছে, হাজার হাজার লোককে মেরেছে, লগিবৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষকে হত্যা করেছে। আর এখন তারা বলে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সভ্য দেশে নাই। আসলে এই সরকার সভ্য নয় বলেই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার দরকার আছে।

গতকাল এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ১০ দফা শুধু ১২ দল, বিএনপি কিংবা কোনো দলের ও জোটের নয়। আজকের আন্দোলন সংগ্রাম ১৮ কোটি মানুষের বেঁচে থাকার আন্দোলন-সংগ্রাম। তিনি বলেন, আমরা মাঠে নেমে পড়েছি। গত ২২ আগস্ট থেকে আমাদের ১৭ জন ভাই প্রাণ দিয়েছে। আমরা প্রতিদিন যুদ্ধ করছি, লড়াই করছি। আরো মানুষকে সম্পৃক্ত করুন এবং তাদের নিয়ে এই সরকারকে সরিয়ে আমরা একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন করি, যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পারব, একটা সরকার একটা পার্লামেন্ট গঠন করতে পারব।

‘সুপ্রিম কোর্টের ঘটনা : সরকার আছে কিনা সন্দেহ’ : মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের বলা হয় অফিসিয়ার্স অব দ্য কোর্ট। সেই বিচারালয়ে যারা কাজ করেন বা বিচার ব্যবস্থায় সহযোগিতা করেন তাদের যে বার্ষিক নির্বাচন হয়- এটা একটা ঐতিহ্য। এটাকে সবাই সম্মানের চোখে দেখেন। এটাকে জাতির বিবেক হিসেবেও দেখা হয়। সেই নির্বাচনে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে এটা জাতির জন্যে, এদেশের বিচার ব্যবস্থার জন্যে একটা জঘন্যতম কলঙ্কজনক ঘটনা। আমরা ইতোমধ্যে এই ঘটনার নিন্দা করেছি, আমরা ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, এই ঘটনা প্রমাণ করে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা কি? বাংলাদেশে বর্তমানে কোনো গণতন্ত্র তো নেই, কোনো আইনের শাসনও নেই এবং কোনো গভর্মেন্ট আছে কি না সেটাও আমার সন্দেহ হয়। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবীদের নির্বাচনে আমরা বরাবরই দেখেছি যে, এই নির্বাচনে হয় সুষ্ঠু নির্বাচন এবং এটা একটা আদর্শ যে যারা দায়িত্বে থাকেন তারা আইনজীবী হন, যারা নির্বাচন কমিশন পরিচালনা করেন তারাও আইনজীবী এবং সুষ্ঠু ও সৌহার্দ্য পরিবেশে নির্বাচন হয়।

এবার তারা (ক্ষমতাসীনরা) এই ব্যবস্থাটা ভেঙে দিয়েছেন। কিছুদিন আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছেন। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের এখন একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভগুলো সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দেয়া এবং তারা ভেঙে দিয়েছে। তাদের নিজস্ব বিধি, বিধান, সংবিধান তারা চালু করেছে।

‘যমুনা নদী প্রকল্প’ : মির্জা ফখরুল বলেন, যমুনা নদী আমাদের হাজার বছর ধরে প্রবাহমান নদী। নদীর সমস্যা থাকে বন্যা হয়, প্লাবন হয়, পলি পড়ে, খরা আসে। কিন্তু এই নদীকে ছোট করে দেয়ার চিন্তা- ১২ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট। এটাকে কি বলবেন আপনি? এর মধ্যে ৮শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়ে গেছে। একটা সীমা থাকে, চক্ষু লজ্জা থাকে- এদের কিচ্ছু নাই। এতো মোটা চামড়া তাদের হয়ে গেছে। সেই চামড়া যদি ভেদ করতে না পারেন তাহলে কেন আপনারা স্বাধীন আছেন।

বুদ্ধিজীবীদের সমালোচনা : মির্জা ফখরুল বলেন, আমার মাঝে মধ্যে খুব কষ্ট হয় যখন দেখি এদেশের কিছু বুদ্ধিজীবী আছেন, কিছু বিভিন্ন পেশার লোকেরা আছেন তারা বর্তমান ব্যবস্থাকে সমর্থন করে কথা বলে। এই নেত্রীকে সমর্থন করে কথা বলেন এবং চাটুকারিতার চরম শীর্ষে যায় । তিনি বলেন, এদেশ আমরা এমন চাইনি। পরিষ্কার করে, চিৎকার করে এটা বলতে পারি। এতে যদি কেউ আমাকে ফাঁসি দেন, ফাঁসি দিতে পারেন- আমি এই বাংলাদেশ চাইনি। আমি চেয়েছি সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, জনগণের বাংলাদেশ। যেখানে মানুষ কথা বলতে পারবে, যেখানে মানুষ সাম্য থাকবে, যেখানে মানুষের মানবিক মূল্যবোধ থাকবে, যেখানে সত্যিকার অর্থে মানুষের মর্যাদা নিয়ে চলতে পারবে। তিনি বলেন, আজকে মানুষ ভাত পায় না, চাল পায় না। লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। মা তার সন্তানকে ডিম দিতে পারে না। এগুলো কোনো মিথ্যা কথা? এগুলো বলতে গেলেই সরকারের একজন গোয়েবেলসকে হার মানায়। তথ্যমন্ত্রী সমানে বলতে থাকেন আমরা নাকি দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চাই, সমস্যা তৈরি করতে চাই, আগুন সন্ত্রাস করার জন্য নাকি আমরা তৈরি হচ্ছি। তিনি বলেন, আগুন সন্ত্রাস তো শুরু করেছে এই সরকার। লজ্জা করে না এদের, যখন এরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে। তারাই তো তত্ত্বাবধায়কের বিধান নিয়ে এসেছিলে ১৭৩ দিন হরতাল করে ।

১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে ও বিএলডিপির অতিরিক্ত মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্ররাহিম, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ এলডিপির আবদুল করিম আব্বাসী, শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, এনডিপির আবু তাহের, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুর রকীব, মাওলানা আবদুল করিম, ন্যাপ-ভাসানী আজহারুল ইসলাম, জাগপার রাশেদ প্রধান, ইকবাল হোসেন প্রধান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ১২ দলীয় জোটের উদ্যোগে ‘আগামী বাংলাদেশ বিনির্মাণে ২৭ দফা রূপরেখার গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com