শহরের সকল মানুষকে লজ্জাজনক মানসিক অবস্থায় ফেলে দিয়েছে।
সিটি করপোরেশনের সেবা সংক্রান্ত যেকোনো অভিযোগ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমাধানের কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়েছেন ইশরাক হোসেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির এই প্রার্থী ১৬ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।
ইশরাক বলছেন, যাবতীয় সেবা প্রাপ্তির লক্ষ্যে এবং সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ কর্তৃপক্ষকে সরাসরি অবহিত করার সুযোগ থাকবে। এ লক্ষ্যে মহানগর ও আঞ্চলিক কার্যালয়ের হটলাইনে চালু করা হবে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ইশরাক হোসেন তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। ইশতেহারে তিনি জনগণের কাছে ১৫৭টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ইশরাক হোসেন জানান, মেয়র নির্বাচিত হলে প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে অগ্রাধিকার বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করে সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সর্বস্তরে দুর্নীতিমুক্ত সেবা নিশ্চিত করবেন।
ইশরাক হোসেন বলেন, তাঁর বাবাকে হারানোর শোক এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এই পরিস্থিতিতে দলের সিদ্ধান্ত ও জনগণের প্রত্যাশার কথা ভেবে তিনি রাজধানীবাসীর সেবা করার প্রত্যাশায় নির্বাচনে অংশ নেন।
নগরবাসীর উদ্দেশে বিএনপির মেয়র প্রার্থী বলেন, নাগরিক সেবায় অব্যবস্থাপনা সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের ধস, দুর্নীতি, ওষুধ, খাদ্যদ্রব্য সহ সকল প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ভেজালের মহামারি, চলাচল অনুপযোগী রাস্তাঘাট, অপরিচ্ছন্নতা ও মশার উপদ্রব, অলিগলি পর্যন্ত মাদক ও নেশা দ্রব্যের অঢেল বিস্তার, নানা অপসংস্কৃতি আমাদের নগর জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে।
ইশরাক হোসেন বলেন, বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহরের পাশাপাশি যোগ হয়েছে বিশ্ব তালিকায় বসবাসের অনুপযোগী শহরের শীর্ষে উঠে আসার দুর্নামও। বিশ্বায়নের এই সময়ে এমন দুর্নাম এই শহরের সকল মানুষকে লজ্জাজনক মানসিক অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। নৈতিক সামাজিক অবক্ষয় আমাদের তরুণ সমাজকে হতাশার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ফলে আমরা হারাতে বসেছি আমাদের গর্বিত ঐতিহ্য।
আমরা নাকি উন্নয়নের মহাসড়কে উঠে গেছি। কিছু ইট সুরকির সমাহার আর ফ্লাইওভার কি কোনো দেশের উন্নয়নের মাপকাঠি? একবিংশ শতাব্দীতে এসে উন্নয়ন বলতে কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নকে বোঝায় না। উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে মানুষ। যদি মানুষ অধিকারহীন, মর্যাদাহীন ও আত্মবিশ্বাসহীন হয়ে পড়ে তাহলে তথাকথিত উন্নয়ন অর্থহীন হয়ে পড়ে। যে দেশে মানুষ স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা হারায় সে দেশে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের বুলি নির্মম পরিহাসে মনে হয়। যে উন্নয়ন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করে না, ধনী-গরিবের বৈষম্য দূর করে না এবং আঞ্চলিক বৈষম্য প্রকট করে তোলে, সে উন্নয়নকে উন্নয়নের রোল মডেল বলে আত্মতৃপ্তি লাভ নিষ্ঠুর পরিহাসের মতোই শোনায়।
নগরবাসীকে দেওয়া ইশরাকের প্রতিশ্রুতির মধ্যে আছে, কম দামে বিষমুক্ত ও ভেজালমুক্ত তাজা খাবারের ব্যবস্থা করে দিতে বিশেষ বিশেষ স্থানে কৃষক মার্কেট ও নাইট মার্কেট স্থাপন করা। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মাতৃদুগ্ধ কক্ষ স্থাপন করা হবে।
নগরীতে ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু, মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক, অন্ধ, প্রতিবন্ধী, নারী, শিশু এবং সুবিধা বঞ্চিতদের জন্য বিশেষ সেবা নিশ্চিত করা হবে।
মোটরসাইকেল এবং সাইকেলের জন্য পৃথক লেন এর ব্যবস্থা করা হবে।
ডেঙ্গু–চিকুনগুনিয়া সহ মশার সংক্রমণ থেকে নগরবাসীকে বাঁচাতে নিয়মিত মশক নিধনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
ইশতেহার ঘোষণার সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রমুখ।