ফ্যাসিস্ট সরকার শেষ সময়ে এসে চরম মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছে: রিজভী
ফ্যাসিস্ট সরকার শেষ সময়ে এসে চরম মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছে জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, গতকাল চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার বক্তব্যে তিনি লজ্জা না পেলেও গোটা জাতি লজ্জা পেয়েছে। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার শেষ সময়ে এসে চরম মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছে। একদিকে চলছে গায়েবী এবং মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতারের হিড়িক। অন্যদিকে অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতাদের গোয়েবলেসীয় মিথ্যাচারকেও হার মানিয়েছে। গতকাল চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার বক্তব্যে তিনি লজ্জা না পেলেও গোটা জাতি লজ্জা পেয়েছে।
সোমবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফৎ আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দীন আলম উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসতে চায়, বিএনপি’র আমলের দুর্নীতি ও খুনের রাজনীতে দেশ ফিরে যাবে না ‘গণতন্ত্র আছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে রিজভী বলেন,‘প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই ২০১৪ এর বিনা ভোটের সরকার এবং ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাতের ভোটের ইতিহাস সারাবিশ্বে নজিরবিহীন এক ঘটনা। শেখ হাসিনার এহেন ভোট চুরির ঘটনায় সারাবিশ্বের মানুষ বিস্ময়ে হতবাক। এখন গণতন্ত্রের ছিটেফোটাও বাংলাদেশে নেই। মানুষের ভোটের অধিকার নেই, নেই কথা বলার অধিকার।’
রিজভী বলেন, বিচার বিভাগ এবং প্রশাসন চলছে এক ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর। দেশে দুর্নীতি ও লুটপাটের প্রতিযোগিতা এখন সীমাহীন। আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কুইক রেন্টাল, পর্দা ও বালিশের নামে দুর্নীতির নতুন নতুন মহাকাব্যের কথা না হয় বাদই রাখলাম, ফরিদপুরের জেলা পর্যায়ের ছাত্রলীগের এক নেতার দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের কথা কি শেখ হাসিনা জানতেন না? এটা তো ছোট্ট একটি ঘটনা, এর চেয়েও অনেক বড় দুর্নীতির মহাযজ্ঞ চলছে শেখ হাসিনার আমলে।
‘প্রধানমন্ত্রী গতকাল বিএনপিকে নিয়ে খুনের কথা বলছেন, উনি তো চট্টগ্রামে একটা মারলে দশটা মারার নির্দেশ দিয়েছিলেন ছাত্রলীগ-যুবলীগকে। এটা তো প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘‘আজ ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, ‘বিএনপির সমাবেশ নিয়ে মানুষ আতঙ্কে আছে’। আমি কাদের সাহেবকে পরিস্কার বলতে চাই, আপনারা গণবিচ্ছিন্ন, তাই মানুষের উপস্থিতি দেখলেই ভয় পান। সে জন্য মিথ্যার বুলি কপচিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার শেষ চেষ্টা করছেন। আওয়ামী নেতাদের মিথ্যা কথা চেঁচানোর রেওয়াজ দীর্ঘদিনের।’’
‘গণতন্ত্রের ধ্বংসস্তুপের ওপর বসে অপপ্রচার করা ছাড়া আপনাদের গত্যন্তর নেই। বিএনপির সবগুলো সমাবেশে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি লাখ লাখ সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ দেখে আপনাদের অবৈধ মসনদ কেঁপে উঠেছে। এ মুহূর্তে দেশের মানুষের দাবি একটাই -এই সরকারের পদত্যাগ।’
তিনি বলেন, ‘জনসভা আয়োজনের নামে ভোট চাওয়া আওয়ামী লীগের যে কৌশল তা স্রেফ নাটক। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে হয়নি। জনগণ যাতে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে না পারে সেজন্যই তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নানাবিধ সুবিধা দিয়েছিল এবং বিরোধী নেতাকর্মীদেরকে কারাগারে পাঠিয়ে মাঠশুন্য করা হয়েছিল।’
‘‘সুতরাং অবৈধ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এবং শেখ হাসিনার মিথ্যার বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে কেউ যাতে প্রতিবাদ না করতে পারে সেজন্য ‘গণতন্ত্রের মা’ আপোষহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় বন্দী করে রাখা হয়েছে।’’
রিজভী বলেন, ‘হামলা-মামলা-গ্রেফতার করে জনগণের আন্দোলনকে দমানো যাবে না। দেশের মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্র ফেরাতে বিএনপিসহ গোটা জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। যেকোন ত্যাগের বিনিময়ে হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার শপথ নিয়েছে তৃণমূল। কোন বাধাই বিএনপির কর্মসূচি ঠেকাতে পারবে না।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, গতকাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের নেতৃত্বে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের লিফলেট বিতরণকালে বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। এতে মহানগর দক্ষিণ বিএনপি সদস্য সাব্বির আহমেদ আরিফ, সূত্রাপুর থানা বিএনপির আব্দুল আজিজ, থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রকি, ৩৯ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা জনি, ইশরাক ও তার একান্ত সচিব (পিএস) আরিফুল ইসলামসহ ২০’র অধিক নেতাকর্মী আহত হন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।