‘হকের চাকরি চাই’ এখনও ধরনায় বাংলার চাকরিপ্রত্যাশীরা, তদন্ত নিয়ে অসন্তুষ্ট বিচারপতি
‘হকের চাকরি চাই’ এ দাবিতে কলকাতার গান্ধী মুর্তির পায়ের তলায় বসে টানা ৬০০ দিনের বেশি ধরনায় রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে শতাধিক নবম থেকে দ্বাদশের হবু শিক্ষক-শিক্ষিকা চাকরিপ্রত্যাশীরা। তাদের দাবি, পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) কর্তৃপক্ষের অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগের কারণে মেধা তালিকাভুক্ত সামনের দিকে থাকা যোগ্য প্রার্থীরা নিয়োগপত্র পাননি।
সোমবার (৭ নভেম্বর) তারা এই ধরনার ৬০৩ দিন পার করলো। তাদের ন্যায্য চাকরি ফিরে পেতে একই স্থানে বসে মরণপণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
চাকরির মামলা গড়িয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। আদালতের নির্দেশে তদন্ত চালাচ্ছে ভারতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিবিআই)। আদালতের নির্দেশে রাজ্যের নেতামন্ত্রী অনেকেই গারদের পেছনে। তা সত্বেও শিক্ষক দুর্নীতির মামলার তদন্ত ঠিক পথে যাচ্ছে না বলে সোমবার বেজায় অসন্তুষ্ট প্রকাশ করেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, তদন্তের নামে সিবিআইয়ের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) এর কয়েকজন সদস্য ঠিক মতো কাজ করছেন না। তদন্তপ্রক্রিয়া ঠিক মতো যেতে এরপর কী পদক্ষেপ করা হতে পারে তা নিয়েও এদিনের পর্যবেক্ষণে মন্তব্য করেন বিচারপতি। ইতোমধ্যে এসএসসি ও টেট নিয়োগ দুর্নীতির একাধিক মামলা উঠেছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। এ সংক্রান্ত সব মামলায় গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছেন তিনি। তার নির্দেশেই আদালত গঠিত সিবিআইয়ের বিশেষ ছয় সদস্যের তদন্তকারী দল নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত করছে।
সিবিআইয়ের বিশেষ তদন্তকারী দলে যে ছয়জন রয়েছেন তারা হলেন- এসপি ধরমবীর সিং, ডিএসপি সত্যেন্দ্র সিং, ডিএসপি কেসি ঋষিনামূল, ইন্সপেক্টর সোমনাথ বিশ্বাস, ইন্সপেক্টর মলয় দাস এবং ইন্সপেক্টর ইমরান আশিক। এদের মধ্যেই বেশ কয়েকজন যথাযথ কাজ করছেন না বলে মনে করছেন বিচারপতি। তার অভিমত, তদন্তে ঢিলেমি হচ্ছে।
অথচ এই আদালতের নির্দেশেই সিবিআই তদন্ত করতে গিয়ে জেলে মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শিক্ষা পর্ষদের কর্তা মানিক ভট্টাচার্য সহ এসএসসির শীর্ষ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তারা। এরপরও শিক্ষক নিয়োগ তদন্ত যথাযথভাবে এগোচ্ছে না বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এদিন আদালতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিমত, সিবিআইয়ের সিট-এর সদস্যদের অনেকেই ঠিকমতো করছেন করছে না। প্রয়োজনে সিট সদস্যদের কয়েকজনকে বদলের কথাও এদিন জানান বিচারপতি।
অপরদিকে, গান্ধী মূর্তির পাদদেশে আন্দোলন তুলে নেওয়ার জন্য প্রধান বিচারপতি দৃষ্টি আর্কষণ করেন সরকার পক্ষের আইনজীবী রমা প্রসাদ সরকার। তিনি বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দল এ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে।
দীর্ঘদিন ধরে যারা ধরনায় বসে আছেন তাদের উদ্দেশে আইজীবি বলেন, এভাবে চাকরি পাওয়া যায় না। তারা যদি সত্যি কারের প্রার্থী হয়ে থাকেন। তাহলে তারা আদালতে আসছেন না কেন?
তিনি আরও বলেন, এমন কি হয়েছে তাদের মধ্যে যে, কারণে তারা দীর্ঘদিন ধরে ধরনায় বসে রয়েছেন। কখনো মেয়র রোডে, কখনো বিকাশ ভবন, কখন হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট, কখনো ক্যামাক স্ট্রিট। সড়ক এভাবে বন্ধ রাখা যায় না। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যে পদ হোল্ড করেন তার চাকরি দেওয়ার দায়িত্ব নয়। এভাবে অনশন করে, আমরণ ধরনা দিয়ে, মঞ্চ তৈরি করে তারা যা করছেন, তাতে বিরোধী প্রার্থী এটির ফায়দা তুলছে। তাহলে বিরোধীরা তাদের চাকরি দিক।
আইনজীবী রমা প্রসাদ সরকার বিচারপতির কাছে আবেদন করেন, ধারার ১৪, ২১ এবং ৩০১(১) আইন অনুযায়ী, তারা শহর ভায়োলেট করছে। তাদের এই ধরনা মঞ্চ থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক। তাদেরকে বুঝিয়ে বলা হোক যে, এভাবে কখনো চাকরি পাওয়া যায় না। শহরের অধিকাংশ পথ এভাবে দখল করা যায় না।
তার বক্তব্য শুনে বিচারপতি জানান, তিনি বিষয়টি শুনে খুব মর্মাহত। পাশপাশি সিবিআইয়ের প্রতি অসেন্তোষ প্রকাশ করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।