বরিশালে বিএনপির সমাবেশ: ‘শত বাধা তবুও লাখ-লাখ মানুষের সমাগম’
বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের অংশ হিসেবে শনিবার (৫ নভেম্বর) বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে দলটির পঞ্চম বিভাগীয় গণ সমাবেশ। সশাবেশে যোগ দিতে বিএনপির নেতা কর্মীদের নানাভাবে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে।
নানা বাধা আর ধর্মঘটকে উপেক্ষা করে সমাবেশগুলোতে লাখ-লাখ মানুষের সমাগম হচ্ছে বলে দাবি করে আসছে বিএনপি। তাই বরিশাল সমাবেশে যোগ দিতে আগে থেকেই বঙ্গবন্ধু উদ্যানে অবস্থান করছে বিএনপির হাজারও নেতা-কর্মী। উদ্যানে নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়েছেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ পথে আছেন, পৌঁছে যাবেন মূল সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই। শনিবার বেলা ২টার দিকে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ শুরু হচ্ছে। এতে যোগ দেবেন ওইসব নেতা-কর্মী।
সকাল থেকে সমাবেশস্থলে শুরু হয়েছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। মাঠে ঘুমিয়ে থাকা অনেকে তখনও ঘুম থেকে উঠছিলেন। সমাবেশের মাঠে আসছিলেন কেউ। মঞ্চে চলছে প্রস্তুতি।
নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, যারা সমাবেশে যোগ দেবেন তাদের অধিকাংশই বরিশালে পৌঁছে গেছেন। কেউ মাঠে কেউ বা আশপাশে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন। কেউ কেউ এখনও বরিশালের পথে আছেন।
বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় এই গণসমাবেশের আগেই নানা কারণ দেখিয়ে জেলায় গণপরিবহনগুলো বন্ধ হয়ে গেছে শুক্রবার (৪ নভেস্বর) থেকে। তবে নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন বুধবার (৩ নভেম্বর) থেকেই। শুক্রবার যারা এসেছেন, তাদের মধ্যে কেউ সাইকেলে, কেউ মোটরসাইকেলে, কেউ আবার হেঁটেও এসেছেন।
নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, বুধবার থেকেই এই উদ্যানে রাতযাপন করেছেন বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতা-কর্মীরা। শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ এখানেই আদায় করেছেন তারা। রাতও কাটিয়েছেন এখানে।
মূলত শুক্রবার রাত ৮টার পর থেকে সমাবেশস্থলে ঢল নামতে থাকে, মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা সেখানে আসতে থাকেন। এর আগে বিকেলে বরিশাল পৌঁছান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা নগরীর বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান নিয়েছেন।
রাত ১০টার দিকে সমাবেশস্থল ও মঞ্চ ঘুরে দেখে গেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী সোহেল ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহামুদ চৌধুরী।
সমাবেশস্থলে শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। কোথাও আড্ডা, কোথাও রান্নার আয়োজন। রাতে থেমে থেমে নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন নেতা-কর্মীরা। কেউ কেই দলীয় গানও করেছেন।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চরমাইক্কা ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রহিম সরদার বলেন, ‘সব কিছু বন্ধ থাকায় বৃহস্পতিবারই সমাবেশস্থলে এসেছি। ট্রলার নিয়ে চরফ্যাশন থেকে আমরা ২০০ নেতা-কর্মী বরিশালে এসে এখানেই থাকছি। নিরাপত্তার জন্য তাঁবু টানিয়ে ছিলাম রাতে। সমাবেশ সফল করেই বাড়ি ফিরব।’
বরগুনার বেতাগী থেকে এসেছেন স্বেচ্ছাসেবক দলকর্মী আলাউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কোনো বাধাই আটকে রাখতে পারবে না আমাদের। অনেক নেতা-কর্মী সাইকেল চালিয়ে ও হেঁটেও আসছে। আমরা রাতে এখানে থাকছি সমাবেশ সফল করার জন্য। শীত উপেক্ষা করেও আমরা দেশকে স্বৈরশাসকের হাত থেকে মুক্ত করতে আন্দোলন সফলে থাকছি।’
কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, ‘আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মী সমাবেশস্থলে অবস্থান নিয়েছেন। সরকারের কোনো বাধাই কাজে আসেনি।’
সমাবেশের মঞ্চ প্রস্তুত কমিটির যুগ্ম আহবায়ক খন্দকার আবুল হোসেন লিমন বলেন, ‘৫০ ফুট দীর্ঘ ও ২৫ ফুট চওড়া মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। ব্যানারও লাগানো শেষ হয়েছে। সমাবেশস্থলসহ আশেপাশে ১২০টি মাইক লাগানো হয়েছে।’
উচ্ছ্বসিত কিছু বিএনপি কর্মী সাংবাদিকদের জন্য তৈরি করা মঞ্চে বারবার ওঠা-নামা করছিলেন। এক পর্যায়ে সেটি ভেঙে পড়লে আহত হন সময় টিভির বরিশালের ভিডিওগ্রাফার সুজয় দাস। সেই মঞ্চটি আবার ঠিকঠাক করা হয় রাতেই।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সিদ্ধান্তে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, কয়েকটি জায়গায় নেতা-কর্মীকে হত্যার অভিযোগ, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং দেশব্যাপী দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা-মামলার প্রতিবাদে বিভাগীয় গণসমাবেশ করছে বিএনপি।
এরই ধারাবাহিকতায় সমাবেশে হয়েছে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরে। শনিবার বরিশালে বিএনপির পঞ্চম বিভাগীয় সমাবেশ।