মাদার অব ডেমোক্রেসি খালেদা জিয়া কোনো অপরাধে নয়, শেখ হাসিনার নির্দেশেই বন্দী: রিজভী

0
বিএনপি যদি বেড়ি বাড়াবাড়ি করে তবে খালেদা জিয়াকে আবারও কারাগারে পাঠিয়ে দেব- প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘রাষ্ট্রের প্রতি বিভাগে আওয়ামী চেতনা সংক্রমিত হয়েছে। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ তার নিয়ন্ত্রণে। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের বক্তব্য আবারো প্রমাণ করে মাদার অব ডেমোক্রেসি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কোনো অপরাধে নয়, শেখ হাসিনার নির্দেশেই বন্দী। তার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই বিচারের নামে প্রহসন মঞ্চস্থ করে দেশনেত্রীকে আটকে রাখা হয়েছে।’

 

শুক্রবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আইন-আদালত, প্রশাসন সবকিছু তার হুকুমের গোলাম, কেউ স্বতন্ত্রভাবে তাদের কাজকর্ম করতে পারে না। ১৪ বছর আগে ১৫টি মামলা মাথায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ১৫ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির সেই মামলাগুলো আজ কোথায়? মামলাগুলো উনি চিবিয়ে খেয়েছেন। আর চার বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দুই কোটি টাকার মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ করে এখন হুংকার দিচ্ছেন আবারো জেলে পাঠাবেন।’

 

রক্তের চেয়ে চালের দাম বেশি উল্লেখ করে বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, আপনার আমলে দেশ থেকে সরকারী হিসেবে ১১ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। কোন ব্যাংকে ডলার নেই। এক ব্যাগ রক্তের দামের চেয়ে এক কেজি চালের দাম এখন অনেক বেশি। শেখ হাসিনার উন্নয়নের সরকার মূলত বাঁশবান্ধব সরকার। কারণ অধিকাংশ মেগা প্রকল্পে বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে।

 

তিনি বলেন, কয়দিন আগে প্রধানমন্ত্রী আত্মস্বীকৃতি দিয়েছেন যে বাড়াবাড়ি করলেন ‘হেফাজতের মতো বিএনপিকে দমন করা হবে’। এই হুমকিই প্রমাণ করে তিনি আবারো ৫ মে শাপলা চত্বরের মতো ইতিহাসের রক্তাক্ত হত্যাযজ্ঞ চালাবার পাঁয়তারা করছেন। রাতের অন্ধকারে কিশোর মাদরাসা ছাত্রদের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালানোর কথা স্বীকার করেছেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কথা স্বীকার করেছেন। এখন বাকি আছে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের স্বীকারাক্তি। তার এই স্বীকারাক্তিগুলো কলঙ্কিত ইতিহাস হয়ে থাকবে- বিশ্ব ইতিহাসে। জনগণের কাঠগড়ায় আপনাকে দাঁড়াতেই হবে।

 

রিজভী বলেন, ‘রাতের জবরদস্তি সরকার বুঝে গেছে এবার আর তাদের রেহাই নেই। গুম-খুন, মামলা-হামলা, লুটপাট, টাকা পাচার আর মহাদুর্নীতির কালযাত্রা যবনিকাপাত ঘটতে চলেছে। পতন তাদের অনিবার্য। পতনের সময় ঘনিয়ে এসেছে। জীবনধারণের সব অবলম্বন হারিয়ে সারাদেশের সর্বহারা মানুষ চাল, ডাল, চিড়া, মুড়ি, হাঁড়ি-পাতিল, কাপড়, পোটলা নিয়ে শেখ হাসিনার পতন ঘটানোর দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে রাজপথে নেমেছে; এগিয়ে আসছে বিএনপির সমাবেশস্থলের দিকে। বন্দুকের নল, কোনো রক্তচক্ষু বাধা-বিপত্তি তাদেরকে প্রতিহত করতে পারবে না। ক্ষোভের লেলিহান শিখা জ্বলছে প্রতিটি মানুষের চোখে-মুখে, অন্তরে-গহীনে।

 

বিএনপির মুক্তির গণসমাবেশে মানুষ আসছে বন্যার স্রোতের মতো। গাড়ি আটকে দিলে আসছে নৌপথে। নৌপথে বাধা দিলে হেটে রওনা দিচ্ছে। সাঁতরে পার হচ্ছে নদী। রাস্তা বন্ধ করে দিলে বিল মাঠ পেরিয়ে আসছে, হোটেল রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিলে না খেয়ে থাকছে। সারারাত সমাবেশের মাঠ দখল করে ফ্যাসিবাদীদের থেকে নিজেদের আদায়কৃত জায়গা রক্ষা করছে। তাদের শ্লোগান শুধু শ্লোগান নয় যেন ১৮ কোটি মানুষের দীর্ঘশ্বাস। এ রকম বাংলাদেশ কখনো কেউ দেখেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 

রিজভী বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী করেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণী ডা. জোবাইদা রহমানের নামে সাজানো মামলায় ক্যাঙ্গারু কোর্টের গ্রেফতারি পরোয়ানা দিয়েছেন। আপনি এসব করে মনে করছেন যে আপনার তক্তেতাউস অটল থাকবে। আসলে অজানা ভয় থেকেই জনগণের এ মুহূর্তে আশা-আকাঙ্খার প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দেশনায়ক তারেক রহমানকে হয়রারি করছেন। কিন্তু আপনি এখনো মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। আপনার দমননীতিকে অগ্রাহ্য করে বিএনপির গণসমাবেশে জনতার ঢলে যে অপরাজেয় জীবনীশক্তির স্ফুরণ ঘটেছে তা দেখে আপনি আরও বেশি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠেছেন।

 

রিজভী বলেন, ‘ক্ষমতার নেশায় আচ্ছন্ন আওয়ামী সরকার একটি অপরাধপ্রবণ সরকার। এরা গুম-খুন-অপহরণ করে গোপন বন্দীশালা আয়নাঘর বানিয়েছে। রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রেখে শেখ হাসিনা বেপরোয়া দুর্নীতি, লুটপাট আর লাখ কোটি টাকা পাচার করে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছেন। এত দিন মেকি উন্নয়নের গালগল্প শোনালেও এখন দেখা যাচ্ছে আওয়ামী বাচালতা ছাড়া দেশে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীরা চাপাবাজির রাজনীতিকরণে ব্যস্ত। দেশে বিরাজ করছে সরব দুর্ভিক্ষ। চারিদিকে শুধু অভাব আর অভাব।

 

তিনি অভিযোগ করে বলেন, গতকাল নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় ছাত্রদলের মশাল মিছিলে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র গুন্ডারা। হামলা থেকে বাঁচতে গাড়িচাপায় মারা যায় রুপগঞ্জ থানার কাঞ্চন পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ইমন হাসান অনীক। এটি যুবলীগ-ছাত্রলীগ কর্তৃক সরাসরি হত্যাকাণ্ড। আহত হয়েছে ছাত্রদল নেতা আবু হানিফ, আপু মিয়া, আমির হোসেন প্রমুখ। আমি এই হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অনীকের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com