বিএনপি’র ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ
বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ (১ সেপ্টেম্বর)। ১৯৭৮ সালের এই দিনে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশ ও জাতির ঐতিহাসিক প্রয়োজনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি নামে এই রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন।
যে দলের অনুসারীরা হবেন বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, ধর্মীয় মূল্যবোধের ধারক-বাহক, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত সৎ ব্যক্তিত্ব ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ধারণায় অনুপ্রাণিত।
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রাজনীতিতে আসার আগেও জিয়াউর রহমানের একটি ঘটনাবহুল জীবন রয়েছে। সৈনিক জীবন থেকে শুরু করে স্বাধীনতার ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধ, রাষ্ট্র পরিচালনা সবত্রই তাঁর একটি সমুজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে, যা জাতি কোনোদিন ভুলতে পারবে না।
বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
জিয়াউর রহমানের শাহাদত বরণের পর দলের বর্তমান চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও এক যুগসন্ধিক্ষণে দলের দায়িত্ব নিয়ে একের পর এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। স্বৈরাচারী এরশাদের আমলে তিনি আন্দোলন করে আপসহীন নেত্রী উপাধি পান। তাঁর নেতৃত্বে বিএনপি তিনবার ক্ষমতায় আসীন হয়।
বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে যে বিএনপির প্রচেষ্টা দীর্ঘ ৪৪ বছর পরও তা অব্যাহত আছে। তাদের দাবি দেশের অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারী উন্নয়ন, কৃষি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ সব সাফল্য বিএনপি সরকারের আমলেই হয়েছে। জিয়াউর রহমান সংবিধানে বিসমিল্লাহ সংযোজনসহ ইসলামী মূল্যবোধকে জাগ্রত করেছেন।
বিএনপির ঘোষণাপত্র: প্রায় ২৮টি বিষয়কে জাতীয় উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য নির্ধারণ করে বিএনপি তার ঘোষণাপত্র আজ থেকে ৪৪ বছর আগে নির্ধারণ করে; যা আমাদের ধারাবাহিক উন্নয়নে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্ববহ। এগুলো হচ্ছে
১. বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে অনুপ্রাণিত ও সংহত ইস্পাত কঠিন ঐক্য, ২. উৎপাদনের রাজনীতি, ৩. জনগণের গণতন্ত্র ও রাজনীতি, ৪. রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা, ৫. সামাজিক অন্যায় ও বৈষম্য দূরীকরণ, ৬. সার্বভৌমত্ব, সামাজিক ন্যায় বিচার ও দ্রুত উন্নয়ন, ৭. মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগ ও আইনের শাসন, ৮. বিলুপ্ত মানবিক মূল্যবোধের পুনরুজ্জীবন, ৯. স্থানীয় সরকার ও বিকেন্দ্রীভূত রাজনৈতিক ক্ষমতা, ১০. সামাজিক ন্যায় বিচারের অর্থনীতি, ১১. জনসম্পদের সার্বিক উন্নয়ন ও সদ্ব্যবহার, ১২. নারীর সার্বিক মুক্তি ও প্রগতি, ১৩. জাতিগঠন সমাজসেবা ও যুবশক্তির ব্যবহার, ১৪. পল্লী উন্নয়ন, ১৫. গণমুখী কৃষিনীতি, ১৬. সমবায় ভিত্তিতে জাতীয় উন্নয়ন, ১৭. সৃজনশীল, উৎপাদনমুখী এবং গণতান্ত্রিক শ্রমনীতি, ১৮. জীবনমান উন্নয়নভিত্তিক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম, ১৯. গণমুখী ও জীবননির্ভর শিক্ষা কার্যক্রম, ২০. উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, ২১. প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার, ২২. অনুন্নত এলাকা ও জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন, ২৩. সার্বভৌমত্ব সুনিশ্চিত রক্ষাকবচ হবে সশস্ত্রবাহিনী, ২৪. জাতীয় প্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনে মুক্তিযোদ্ধা, ২৫. বাংলা ভাষা, সাহিত্যের সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও প্রসার, ২৬. বাংলাদেশি সাহিত্য সংস্কৃতি ও ক্রীড়ার বিকাশ, ২৭. ধর্মীয় শিক্ষা, ২৮. জাতীয় পররাষ্ট্রনীতি হবে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সমৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক প্রীতি ও সখ্য।
১৯৮৩: ওই বছরের ১ এপ্রিল বিএনপির বর্ধিত সাধারণ সভা থেকে খালেদা জিয়াকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মনোনীত করা হয়।
আগস্ট ১৯৮৪: বেগম খালেদা জিয়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন এবং বিএনপিতে নতুন প্রাণের সৃষ্টি হয়। নেতাকর্মীরা নতুন আশার আলোয় আবারো রাজপথে নেমে আসেন। এরপর খালেদা জিয়ার ওপর নানাবিধ হুমকি আসতে থাকে, চক্রান্ত চলতে থাকে তাকে ব্যর্থ করে দেওয়ার। কিন্তু অকুতোভয়, সাহসী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও গণতন্ত্রের পথে পথ চলতে আপসহীন ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি।
১৯৯০ স্বৈরাচারের পতন: স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে একলা এগিয়ে চলেন খালেদা জিয়া। এ সময় আন্দোলন করে অসহনীয় জুলুম নির্যাতন সহ্য করেন এবং ‘গণআন্দোলন’ সংগঠিত করেন। ১৯৯০ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতনের একদফা আন্দোলনের ডাকে দেশের মানুষ রাজপথে নেমে আসে। ফলে এরশাদ ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। খালেদা জিয়ার গণআন্দোলন সফল হয়, দেশে ফিরে আসে গণতন্ত্র। সে সময় খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বের কারণে দেশবাসীর মাঝে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা তৈরি হয় এবং তিনি ‘দেশনেত্রী’ আখ্যায়িত হন।
১৯৯১ সাধারণ নির্বাচন: খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বে গণতন্ত্রের বিজয়ের ফলে ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে এককভাবে সরকার গঠন করে। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি: বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে বিএনপির সব কার্যালয়ে ভোর ৬ টায় দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
দুপুর ১২টায় দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের (বীর উত্তম) শেরেবাংলা নগরস্থ মাজারে বিএনপির জাতীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ফাতেহা পাঠ ও পুস্পার্ঘ অর্পণ করবেন।
বিকেল ৩ টায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের হবে। র্যালিতে বিএনপির জাতীয় নেতারাসহ সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন। দিবসটি উপলক্ষে ইতোমধ্যে পোষ্টার প্রকাশিত হয়েছে এবং আজ বিভিন্ন সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে।
এছাড়া ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলিস্থানস্থ মহানগর নাট্যমঞ্চে দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে জাতীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারাসহ দেশবরেণ্য ব্যক্তিরা অংশ নেবেন।
অনুরূপভাবে দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরসহ সব ইউনিট বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করবে। স্থানীয় সুবিধানুযায়ী আলোচনা সভা, র্যালি ইত্যাদি কর্মসূচি পালনে তারা উদ্যোগ নেবেন।