আওয়ামী লীগকে নিলামে বাজারে তুললেও কোনো দাম পাওয়া যাবে না: গয়েশ্বর

0

আওয়ামী লীগকে নিলামে বাজারে তুললেও কোনো দাম পাওয়া যাবে না জানিয়ে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দাম দিন দিন কমছে।

গয়েশ্বর বলেন, ‘সরকার লুটপাট করে দেশে সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। লুটপাটের জন্য তারা কুইক রেন্টাল সিস্টেম করল। সেখানে লুটপাট করে একের পর এক বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে তেলের দাম বাড়িয়েছে। তেলের দাম যেহেতু বাড়িয়েছে এখন বিদ্যুতের দাম আবার বাড়াবে। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেল লাগে। তেলের দাম যদি বাড়ে তাহলে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বাড়ে।

বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় বিএনপি আয়োজিত কিশোরগঞ্জে বন্যাদুর্গত মানুষের চিকিৎসার্থে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প ও বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় তিনি ক্ষমতাসীন দলকে উপলক্ষ করে বলেন, ‘সব জিনিসের দাম বাড়লেও একটা জিনিসের দাম কমছে প্রতিদিনই। প্রতিদিনই আওয়ামী লীগের দাম কমছে। ওরা এখন শূন্যের কোটায় আছে। ওদেরকে নিলামে বাজারে তুললেও কোনো দাম পাওয়া যাবে না। ওদেরকে কেনার কোনো লোক নেই।’

বিএনপি রাজনীতি করে মানুষের জন্য উল্লেখ করে গয়েশ্বর বলেন, আমরা যে লড়াইটা করছি, সেটি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়। মানুষের অধিকার, জনগণের মুক্তি, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য।’

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘তেঁতুল আর দুধ যখন একসাথে থাকে তখন দুধ আর দুধ থাকে না। ঠিক তেমনি আওয়ামী লীগ যেখানে থাকে সেখানে গণতন্ত্র আর গণতন্ত্র থাকে না। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হলে আওয়ামী লীগকে বিতাড়িত করতে হবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে। কারণ তারা জনগণের ভোটে আসেনি।’

গয়েশ্বর রায় এ সময় খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘আজকে আমাদের নেত্রী গৃহবন্দী। জনগণের নেত্রী যদি গৃহবন্দী থাকে, জনগণ তো মুক্ত থাকতে পারে না। জনগণের দুর্ভোগ কে দেখবে! যিনি এটা দেখছেন, বা আমাদের সাথে কাজ করছেন, তিনি (তারেক রহমান) আমাদের কাছে নাই। তিনি অনেক দূরে। এই মাতৃভূমি, যেখানে তার জন্ম সেখানে তিনি থাকতে পারছেন না। তিনি আছেন এখন লন্ডন শহরে। তিনি শখ করে সেখানে যান নাই। মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে তাকে চিকিৎসার জন্য সেখানে যেতে হয়েছে। ওয়ান ইলেভেন সরকার তার উপর নিদারুণ নির্যাতন চালিয়েছিল। সেটা আপনারা জানেন।’

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এ সময় যোগ করেন, ‘সেই নিদারুণ নির্যাতনের চিত্র এখনো আছে। সাম্প্রতিককালে একটি সংবাদমাধ্যম অনুসন্ধান করে আবিষ্কার করেছে, কোথায় সরকারের টর্চার সেল আছে। গয়েশ্বর বলেন, আওয়ামী লীগের ষান্ডা-পান্ডা-গুন্ডাদেরও টর্চার সেল আছে, থানায় থানায়, জেলায় জেলায়। সেগুলো কিন্তু পত্রপত্রিকায় আসছে। কিন্তু সরকার পরিচালিত যে আছে টর্চার সেল সেটি সম্পর্কে দেশের গণমাধ্যম নীরব।’

সে টর্চার সেলে তারেক রহমান নির্যাতিত হয়েছিলেন এমন তথ্য দিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরো বলেন, ‘তাকে (তারেক রহমানকে) সেখানে উপর থেকে ফেলে দেয়া হয়েছিল। তার কোমড় ভেঙ্গে দিয়েছিল। সেটা এখনো আছে। অনেক অজানা মানুষ এখানে আটক আছে আপনারা জানেন না। মাঝে মাঝে দুয়েকজন ছাড়া পায়। তারা কথা বলে না, চুপ করে দেশ থেকে বাইরে চলে যায়।’

গয়েশ্বর অভিযোগ করে বলেন, ‘সে টর্চার সেলের সাথে ভিনদেশীরাও যুক্ত। ভিনদেশীরাও আমাদের দেশ থেকে লোক তুলে নিয়ে যায়। আমাদের ইলিয়াস আলীকে কারা তুলে নিয়ে গিয়েছে, কোথায় নিয়েছে, আজ পর্যন্ত কেউ জানে না।’

গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘এই গুম, এই যে খুন, এই নির্যাতন, নারী-শিশু নির্যাতন, আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকুক আর না থাকুক নারী ধর্ষণ, শিশু নির্যাতনের চেতনায় তারা অত্যন্ত শাণিত। এত চেতনা তাদের, তারা পাঁচ-ছয় বছরের শিশুকেও রেহাই দেয় না। এই ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিনা বিচারে এইভাবে মানুষ মারা, সারা বিশ্ব এটা এখন জানে। এতদিন আমরা চিৎকার করেছি, দেশের পত্রপত্রিকা লিখতে গেলেও লেখে না, কিছু তো দালালিই করে। আর যারাও লিখতে চায়, তারাও লিখতে পারে না। কারণ তাদেরকেও চোখ বেঁধে নিয়ে যায়। সাংবাদিকদেরকে। এ রকম অবস্থাতে সংবাদপত্র বন্ধই তো বলা চলে, শুধু কাগজ কিনি আমরা আর কিছুই না। আর বিজ্ঞাপন ছেপে সাংবাদিকদের কোনোরকমে কিছু বেতন হয়। সেভাবে কিছু হয় না। সেই দেশে আমরা এখন বাস করি।’

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘যেই দেশ আমরা স্বাধীন করেছি যুদ্ধ করে। এবং সেই দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। সেই দেশকে এভাবে থাকতে দেয়া যায় না। দেশটা কিন্তু বক্তৃতায়-ভাষণে স্বাধীন হয় নাই। আমরা স্বপ্ন দেখি নাই, আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। দেশের এখন করুণ অবস্থা।’

এ সময় দেশে বিএনপির চলমান সামাজিক কার্যক্রমের কথাও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় তার বক্তৃতায় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি, মিটিং-মিছিল করি। আমরা হরতাল করবো অবরোধ করবো, এটাই তো কাজ আমাদের। কিন্তু এই করোনাকালীন সময়ে বিএনপি যে পরিমাণ মেডিক্যাল সাপোর্ট দিয়েছে জনগণকে, প্রত্যেকটা অঞ্চলে, এটা কিশোরগঞ্জ বা ঢাকা শহরে নয়, প্রতিটি অঞ্চলে, প্রতিটি থানায় থানায়, ইউনিয়নে বিএনপি মেডিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে গেছে। বন্যার্ত মানুষের জন্য আমরা দিনরাত পরিশ্রম করছি। আমাদের মামলার টাকা জোগাতে খুব কষ্ট হয়। আমাদের প্রতিদিনই মামলার হাজিরা দিতে হয়। এর মধ্যেও আমরা জনগণের জন্য কাজ করছি। অথচ যারা লাখ লাখ কোটি টাকা লুটপাট করল তারা কিছুই করছে না।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com