আ.লীগ পুলিশের বেস্টনী ছেড়ে রাজপথে আসলে পালানোর পথ খুঁজে পাবে না: রিজভী

0
আ.লীগের মুরোদ থাকলে পুলিশের বেস্টনী ছেড়ে রাজপথে আসুন পালানোর পথ পাবেন না জানিয়ে সম্প্রতি সময়ে সরকারি দলের নেতা-মন্ত্রীদের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, যদি মুরোদ থাকে পুলিশ লীগের বেস্টনী ছেড়ে রাজপথে আসুন। জনগণের উত্তাল প্রতিরোধে পালিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে পাবেন না। তবে দেশের দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। জনগণ রাজপথে নেমেছে। আপনাদের এহেন বক্তব্য পতনের পূর্বে আর্তচিৎকার। শ্রীলঙ্কার চাইতে পরিণতি করুন হবে আপনাদের।

 

রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, আগস্ট মাসটা যাইতে দেন তারপর টের পাবেন কত ধানে কত চাল। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, “আমরা রাজপথে এখনো নামিনি, আগামী মাসে পরিপূর্ণভাবে নামব। রাজপথে নামলে বিএনপি পালানোর জায়গা খুঁজে পাবেনা। তাদের কিভাবে গর্তে ঢুকাতে হয় সেই ওষুধ আমাদের জানা আছে। প্রয়োজনে প্রয়োগ করা হবে।”

 

তাদের এই বক্তব্যই প্রমাণ করে তারা কতটা হিংস্র শাপদীয় চরিত্রের। লগি বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা, গান পাউডার ছিটিয়ে বাসযাত্রী হত্যা গুম খুন যাদের অভ্যাস তাদের মুখেই কেবল এই ধরনের ফ্যাসিবাদী হুংকার শোনা যায়।

 

রবিবার (১৪ আগস্ট) সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

 

দেশ এক ভয়ংকর পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘প্রতিদিন চারদিকে অশনি সংকেত আর ঘনঘোর অন্ধকার নেমে আসছে। সর্বত্রই অস্বস্তি-অস্থিরতা। ক্ষমতাসীনদের বিশৃঙ্খলা ও অপকীর্তির শেষ নেই। নিশিরাতের অবৈধ সরকার পরিকল্পিতভাবে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা লুটপাট করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলো খালি হয়ে গেছে। রিজার্ভ তলানীতে ঠেকেছে।

 

রিজভী বলেন, ‘গত ১৩ বছরে বেপরোয়া দুর্নীতিযজ্ঞের কারণে দেশ এখন দেউলিয়া ঘোষণার অপেক্ষায়। কিছুদিন আগেও আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা দেশকে সিঙ্গাপুর-অস্ট্রেলিয়া- কানাডার সাথে তুলনা করে গলাবাজি করতো। দেশকে ঋণের ফাঁদে ডুবিয়ে এখন তারা ফুটো বেলুনের মতো চুপসে গেছে। ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৯ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার। এই বিপুল অঙ্কের ঋণ বাংলাদেশ পরিশোধ করার সামর্থ হারিয়েছে। জ্বালানি, বিদ্যুৎ সঙ্কট, ডলারের বিপরীতে গত তিন মাস যাবত টাকার মানের ক্রমাগত পতন এবং রেকর্ড পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতি-দেশের অর্থনৈতিক গতিপথ নিয়ে জনগণকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। মুদ্রামান হারাবার সাথে সাথে ডলার দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে দেশি মার্কেটে। এই লুটেরা সরকার দুর্নীতি রোধ করতে অতটা আগ্রহী নয়, যতটা না আগ্রহী বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা ও তহবিল হতে ঋণের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করতে। আওয়ামী লীগ এতদিন বলতো দেশ সিঙ্গাপুর হয়ে যাচ্ছে, মূলত: দেশে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি বিরাজমান।

 

সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘শুধুমাত্র লুটপাট এবং বিদেশে পাচারের জন্য সরকার গত সপ্তাহে মধ্যরাতে জ্বালানি তেলের দাম প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ বাড়িয়ে দেওয়ার পর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর দিনেই বেড়েছে অস্বাভাবিক পরিবহন ভাড়া। এর প্রভাব পড়ছে এখন বাজারে। হাটবাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি দ্রব্যের অগ্নিমূল্যে নাভিশ্বাস উঠছে ক্রেতাদের। পণ্যমূল্য নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের বাইরে চলে গেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের বেঁচে থাকা উপসংহারহীন পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাজারে ক্রেতারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। দাম বাড়ার প্রতিযোগিতা চলছে। চালের দাম গত এক সপ্তাহে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ১০০ টাকার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে ডিমের ডজন ১৫০ টাকা। এত বেশি লাগামহীন দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতি, শাসকগোষ্ঠীর লুটপাট আর দুর্নীতির পর জীবনযাত্রার খরচ ৫০ শতাংশ থেকে কোন কোন ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণের জীবন যাত্রা পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না।

 

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন স্থানে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি শুরু হয়েছে। ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে নিজের সন্তান বিক্রি করে দিচ্ছে মানুষ। খাগড়াছড়ির পারুল চাকমা তার একমাত্র সন্তানকে মাত্র ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করতে বাজারে তুলেছে। পৃথিবীতে মনে হয় এর চেয়ে সস্তা আর কিছুই হতে পারে না। এত সস্তা মানুষের জীবন তাও বিক্রি করতে পারছেনা। ইতিহাসের অমানবিক দাসপ্রথা বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে অবৈধ শাসকগোষ্ঠী। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট এমন ঘনীভুত হয়েছে যে, নিরুপায় হয়ে ছিনতাই করতে নেমে পড়েছে কেউ কেউ। ডিমের ট্রাকও ছিনতাই হচ্ছে। ভর্তা আর কাঁচা মরিচ দিয়ে ভাত খাওয়ার সামর্থ হারাচ্ছে মানুষ। বেঁচে থাকার জন্য মানুষ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। সব খরচ কমিয়ে দিয়েছে। পুঁজি ভেঙে ও ঋণ করে সংসার চালাচ্ছে। নিদারুণ কষ্টে মানুষ জীবনযাপন করছে।

 

মানুষের এই চরম দুরাবস্থার মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জনগণের সাথে ইয়ার্কি করছেন বলেও মন্তব্য করেন রিজভী।

 

প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিদিন কৃচ্ছতা সাধনের জন্য দেশবাসীকে উপদেশ বাণী দিচ্ছেন। তিনি বলছেন, বিলাসিতা নয়, আদর্শ ধারণ করাই প্রকৃত জীবন। আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে অপচয় বন্ধ করতে হবে।” অথচ জনগণের সামনে প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীদের বিলাসবহুল জীবনের চিত্র বিকটভাবে উন্মোচিত হচ্ছে। ১৮ই জুলাই সুইজারল্যান্ডের বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড সুইস তাদের দেশ সেরা বিলাসবহুল বাথ ও কীচেন সামগ্রী গণভবনের জন্য অর্ডার করায় শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিজ্ঞাপন ছাপিয়েছে। সেখানে কেবল একটি কমোডের দাম দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। গত শুক্রবার ছুটির দিনে গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাথে ছিল গাড়ীর বিশাল বহর। তিনি নিজেই আবার জ্বালানি সংকটে কৃচ্ছ্রসাধনে সরকারী গাড়ী কম ব্যবহারের পরামর্শ দেন। দেশে চলছে জ্বালানি সংকট, আর আপনি নিজেই এভাবে গাড়ির তেল পুড়িয়ে পৈতৃক ভিটা পরিদর্শন করছেন। গত মাসের ৩ তারিখও তিনি পৈতৃক ভিটা পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন এমন বহর নিয়ে। গরীব দেশের ক্ষমতাসীনরা বেহেশতেই আছেন, আসলে তারা নিজেদের চলাফেরায় বেহেশতের সাধ অনুভব করছেন। কারণ তাদের হাতিশালে হাতি আর ঘোড়াশালে ঘোড়ার অভাব নেই। আর জনগণ ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর ঋণের ক্র্যাচে ভর করে হাঁটছে।

 

‘‘কৃচ্ছতা সাধনের কথা বললেও প্রধানমন্ত্রী তার পিতা-মাতার জন্ম-মৃত্যু দিবস পালন উপলক্ষে বর্নাঢ্য জাঁকজমকের সীমারেখা থাকে না। ইতিপুর্বে শত শত কোটি টাকা খরচ করে উৎসব হয়েছে তার পিতার জন্ম শতবার্ষিকীতে’’।

 

তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট তার পিতার শোক পালনের চেয়ে ছোট ব্যবসায়ী থেকে বড় ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে থাকেন ছাত্রলীগ-যুবলীগের চাঁদা দাবির হুমকিতে। নোয়াখালীর এক এমপি দুই শতাধিক গরু জবাই করে ভোজসভা করার ঘোষণা দিয়েছেন। আর এইসব উপলক্ষে চাঁদাবাজির মহোৎসবের খবর পত্রিকায় সয়লাব। কিন্তু জনগণ দেখছে-প্রধানমন্ত্রী আর মন্ত্রী, এমপি ও শাসকদলের জন্য ‘বেহেস্তের নিয়ম’, আর তাদেরকে সবক দেয় তার উল্টোটা। কারণ অবৈধ ক্ষমতার আমলকি তাদের করতলগত।

 

তিনি আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ঢাকায় বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে নিশিরাতের ভোট ডাকাত সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠা জনগণের উর্মিমুখর জনসমুদ্র দেখে সরকারের মাথা বিগড়ে গেছে। তারা তাদের বিদায়ের সাইরেন শুনতে পাচ্ছেন। অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া সরকারের মন্ত্রীরা স্ববিরোধী বক্তব্যের প্রলাপে মানুষকে বিভ্রান্ত করার প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের মন্সমীক্ষা বলছে-এরা মেকি, সৌখিন ও অনর্গল মিথ্যা বলায় পারঙ্গম।
তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com