দেশে কুইক রেন্টালের নামে কুইক লোপাট চলছে: অভিযোগ মির্জা ফখরুলের

0

দেশে কুইক রেন্টালের নামে কুইক লোপাট চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মহাবিপর্যয়: সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, আত্মঘাতী চুক্তি ও অপরিণামদর্শী পরিকল্পনার মাশুল দিচ্ছে জনগণ’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।

দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত বিদ্যুৎ সেক্টর মন্তব্য করে তিনি বলেন, গত এক দশকে দেশে বিদ্যুৎ খাতের প্রকল্প বাস্তবায়ন ও রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো পরিচালনা করতে গিয়ে খাতটিতে মোট দায়দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। দেশের বিদ্যুৎ খাতে মোট দায়দেনার বৃহদাংশই তৈরি হয়েছে বিদেশি ঋণে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে গিয়ে। বিশেষ করে রাশিয়ান ঋণ নিয়ে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকায় ২৪০০ মেগাওয়াট রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পটি কতটুকু আর্থিক সাশ্রয়ী এবং মানুষের জীবন জীবিকার প্রশ্নে এর ঝুঁকি নিয়ে রয়েছে। একই প্রশ্ন রয়েছে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং রামপাল, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়েও।

গতকাল শনিবার (১৩ আগস্ট) বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

‘ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রে বিদেশি মালিকানা বা বিদেশি অংশীদারিত্ব থাকায় এ টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশে। দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বৈদেশিক মুদ্রায় দেনা পরিশোধ করতে হচ্ছে। কুইক রেন্টালের নামে চলছে কুইক লোপাট।’

কুইক রেন্টালের ক্ষেত্রে রীতিমত লুটপাট করা হয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রশ্ন হলো ক্যাপাসিটি চার্জ সাধারণত যে পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে ধরা হয়। কিছু কিছু সময় বিদ্যুতের চাহিদা গড় চাহিদার চেয়ে অনেক বেড়ে যায়। এই বাড়তি চাহিদা পূরণের জন্য কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র রিজার্ভ রাখার সুযোগ আছে। কিন্তু এই রিজার্ভে রাখা কেন্দ্রগুলো যখন বসে থাকবে তখন শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ পাবে। অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি চার্জ পাইয়ে দিতে দুর্নীতির মাধ্যমে অনেক অদক্ষ প্ল্যান্টের ক্যাপাসিটি আবার অনেক বেশি দেখানো হয়েছে। উৎপাদন ক্ষমতার কত অংশ রিজার্ভ রাখা হবে তার সঠিক হিসাব নিকাশ করতে হবে। কোনোরকমেই অতিরিক্ত হওয়া যাবে না। একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা প্রতি বছর যাচাই করে ক্যাপাসিটি চার্জ নির্ধারণ করার সুযোগে বড় ধরনের জাল-জালিয়াতির কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে চলছে। আর এই খরচ মেটানো হচ্ছে জনগণের পকেট কেটে।

সরকার গত দেড় দশক ধরে উন্নয়নের যে ঢোল বাজিয়ে আসছে তন্মধ্যে একটি বড় অংশ জুড়ে ছিল বিদ্যুৎ খাত উল্লেখ করে তিনি বলেন, দাবি করা হচ্ছে যে- ২০২২ সালে এসে ক্যাপাসিটিসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে এবং সর্বোচ্চ উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। গত ১০ জুলাই সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ১১ হাজার ৭৬০ মেগাওয়াট। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার উচ্ছ্বাস উদযাপন করা হল ঘটা করে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এত নজিরবিহীন অর্থ ব্যয় করেও কেন পুনরায় দেশের জনগণকে লোডশেডিং বরণ করতে হচ্ছে। বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে সাশ্রয়ী হওয়ার নসিহত দেয়া হচ্ছে, কেন আজ অন্ধকারাচ্ছন্ন দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত, কেন সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে, কেন বিদ্যুৎ খাত আজ অর্থনীতির জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে? এর উত্তর একটাই, সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি আর হরিলুটের খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে।

ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ এ পর্যন্ত প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা গচ্চা দেয়া হয়েছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, সরকারের বিশেষ আইনে স্থাপিত রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল ১৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালুর দুই-তিন বছরের পর বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও প্রয়োজন ছাড়াই তা এখনো চালু আছে। বেশ কিছু রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বিপুল অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ ছাড়াই সরকারকে এ পর্যন্ত ৯০ হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব ব্যবসায়ীদের পকেটেই গেছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। আবার এক হিসাবে গত এক যুগে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ গচ্চা গেছে প্রায় ৮ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। গত ৩ বছরেই ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয়েছে ৫৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকদের পকেটে গেছে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি পিডিবি কর্তৃক বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

‘বিদ্যুতের চাহিদা সঠিকভাবে নির্ধারণ না করেই চাহিদার অনেক বেশি পাওয়ার প্ল্যান্টের সঙ্গে চুক্তি করে দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবসায়ীদের লুট করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। এই সরকারের নীতি একটাই, তা হচ্ছে জনগণের সম্পদ লুট করে নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করা এবং বিদেশে সেই সম্পদ পাচার করা।’

গত ১২ বছরে আট দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জনগণের কাছে জবাবদিহীতা না থাকলে যা হওয়ার তাই করে চলেছে সরকার।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com