বন্যার কারণে ক্রেতা-সংকটে রয়েছেন বিক্রেতারা
পবিত্র ঈদুল আজহা ঘিরে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় জমে উঠেছে পশুর হাট। এ উপলক্ষে জেলায় প্রস্তুত রয়েছে কোরবানির পশু। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, পশুর হাটে বিক্রেতার ভিড় ততই বাড়ছে। কিন্তু বন্যার কারণে ক্রেতা-সংকটে রয়েছেন বিক্রেতারা।
কুড়িগ্রাম প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে জেলায় পশুর চাহিদা রয়েছে ৯০ হাজার। আর প্রস্তুত আছে ১ লাখ ৩৪ হাজার পশু। এখানকার চাহিদা মিটিয়ে বাকিগুলো যাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
মঙ্গলবার (৫ জুলাই) সদর উপজেলার একমাত্র ঐতিহ্যবাহী পশুর হাট যাত্রাপুর ঘুরে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্র দুধকুমার ও ধরলা নদীর অববাহিকাসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পশু নিয়ে হাটে এসেছেন পাইকারি বিক্রেতা, খামারি ও প্রান্তিক কৃষকরা। দেশি গরুতে বাজার ভরপুর। বিক্রেতারা বড় গরুর দাম হাঁকছেন দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা। এ ছাড়া ৯০ থেকে ১০০ কেজি ওজনের গরুর দাম চান ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা।
কোরবানির সম্মিলিত ও একক ক্রেতাসহ জেলার বাইরে থেকে বেশ কিছু পাইকার এসেছেন হাটগুলোয়। তবে ক্রেতা-সংকট থাকায় জমে উঠছে না ঐতিহ্যবাহী কোরবানির এ হাটটি।
জানা গেছে, জেলায় ছোট বড়-মিলে ১৬টি নদ-নদী রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও ধরলা। এসব নদীর অববাহিকায় অসংখ্য চর ও দ্বীপ চর রয়েছে। এখানকার বেশির ভাগ মানুষ গবাদিপশু পালন করে থাকে। তারা প্রতিবছর ঈদুল আজহায় তাদের পালিত পশু বিক্রি করে সংসারের সচ্ছলতা আনে।
একাধিক খামারি ও প্রান্তিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোখাদ্যের দাম তুলনামূলকভাবে বাড়ার পরও কোরবানির পশুর দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে আছে। এবার মাঝারি ও ছোট গরুর চাহিদা বেশি। কিন্তু আগাম বন্যার কারণে হাটে আমদানি বেশি থাকায় ক্রেতা-সংকট দেখা দিয়েছে। তাই অনেকে গরু নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। এদিকে জেলায় ভারতীয় গরু ঢুকে পড়েছে। বিভিন্ন হাটে ভারতীয় গরুর দাপটে খামারিরা পড়েছেন সংকটে।
ঝুনকার চর থেকে সদরের যাত্রাপুর হাটে গরু বিক্রি করতে আসা আমিনুর রহমান বলেন, অতিরিক্ত বন্যা হওয়ার কারণে হাটে গরুর আমদানি এবার অনেক বেশি। দুটি গরু নিয়ে আসছি। পাইকারও নাই, কেউ দামও বলছে না। কারণ, আমাদের এখনো সব মাঠ বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। গরুর খাদ্যের খুব সংকট দেখা দিয়েছে। তাই বিক্রি করতে বাধ্য হইছি।
যাত্রাপুর হাট ইজারাদার সেলিম মিয়া বলেন, হাটে বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক গরু এসেছে। সে তুলনায় ক্রেতা একেবারেই নেই। এবার হাট জমবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। তবে আরও তো সময় আছে; দেখা যাক। আল্লাহ ভরসা।
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, বন্যার কারণে আজ হাটে বিভিন্ন গবাদিপশুর আমদানি অনেক বেশি। আমদানি হিসেবে তুলনামূলক ক্রেতা কম। দামও গতবারের চেয়ে একটু কম। এই হাটে বেশির ভাগ গরু বিভিন্ন চর থেকে এসেছে।
কুড়িগ্রাম প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বলেন, জেলায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ১ হাজার ৭০টি খামার রয়েছে। এতে গরুর সংখ্যা ৯ লাখেরও বেশি। এদিকে ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১ লাখ ৩৪ হাজার পশু প্রস্তুত আছে। চাহিদা প্রায় ৯০ হাজার। বাকি পশুগুলো যাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।