ঈদুল আজহা ও কোরবানির কয়েকটি হাদিস

0

ইয়াওমুন নাহর বা ঈদুল আজহা। বাংলা ভাষাভাষী মানুষ একে কোরবানির ঈদ বলে। ঈদুল আজহার দিনের প্রধান কাজ হলো- আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি। ইসলামের নিদর্শনাবলীর মধ্যে কোরবানি অন্যতম। এটি হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সাল্লামের সুন্নাত। ঈদুল আজহা ও কোরবানি সম্পর্কে কিছু হাদিস তুলে ধরা হলো-

ইসলামে ঈদ

ইসলামে ঈদ দুইটি। ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর। হাদিসের বর্ণনায় সুস্পষ্টভাবে ওঠে এসেছে। হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন-

قَدِمَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ الْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا، فَقَالَ: مَا هَذَانِ الْيَوْمَانِ؟ قَالُوا: كُنّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِي الْجَاهِلِيّةِ، فَقَالَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: إِنّ اللّهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا: يَوْمَ الْأَضْحَى، وَيَوْمَ الْفِطْرِ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হিজরত করে মদিনায় আসলেন তখন মদিনাবাসীর দুটি উৎসবের দিন ছিল। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, এ দুটি দিন কী? (কী হিসেবে তোমরা এ দু’দিন উৎসব পালন কর?)

তারা বললো, জাহেলিয়াত তথা ইসলামের আগের যুগে আমরা এ দিন দুটিতে উৎসব পালন করতাম। তখন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহ তোমাদেরকে এ দুটি দিনের পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন- ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর।’ (আবু দাউদ, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ)

আল্লাহ তাআলা এ প্রাচীন উৎসবগুলোকে বাতিল করে দিয়ে এগুলোর স্থলে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দুটি উৎসব এ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যা উম্মতের তাওহিদি চরিত্র ও জীবনধারার সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ। মুসলিমদের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনার আয়না স্বরূপ। মুসলমানেরা যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষা ও হেদায়েত অনুযায়ী নিজেদের এ উৎসবগুলোকে উদযাপন করেন তাহলে ইসলামের প্রাণবস্তু ও এর মর্মবাণীকে বুঝা ও বুঝাবার জন্য কেবল এ দুটি উৎসবই যথেষ্ট হতে পারে।’

আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশিত ঈদ

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

أُمِرْتُ بِيَوْمِ الْأَضْحَى، جَعَلَهُ اللهُ عِيدًا لِهَذِهِ الْأُمّةِ

আমাকে ‘ইয়াওমুল আজহা’র আদেশ করা হয়েছে (অর্থাৎ, এ দিন কোরবানি করার আদেশ করা হয়েছে); এ দিনকে আল্লাহ তাআলা এই উম্মতের জন্য ঈদ বানিয়েছেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে হিব্বান, আবু দাউদ, নাসাঈ)

ঈদুল আজহার দিন নবিজীর খাওয়া

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল আজহার নামাজের পরে খেতেন। হাদিসে এসেছে-

.كَانَ النّبِيُّ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ لَا يَخْرُجُ يَوْمَ الفِطْرِ حَتّى يَطْعَمَ، وَلَا يَطْعَمُ يَوْمَ الأَضْحَى حَتّى يُصَلِّيَ

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন কোনো কিছু না খেয়ে ঈদগাহে যেতেন না। আর ঈদুল আজহার দিন নামাজ না পড়ে কিছু খেতেন না।’ (তিরমিজি)

ঈদুল আজহার দিন নামাজের পরে খাওয়ার কারণ সম্ভবত এটি হতে পারে যে, এ দিন যেন সবার আগে কোরবানির গোশতই মুখে উঠে। যা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এক ধরনের দাওয়াত ও আপ্যায়ন। আর ঈদুল ফিতরের দিন সকালে নামাজের আগেই কিছু খেয়ে নেওয়া সম্ভবত এ কারণে যে, আল্লাহর নির্দেশে রমজান মাসব্যাপী দিনের বেলা পানাহার বন্ধ ছিল, আজ যখন তাঁর পক্ষ থেকে দিনের বেলা পানাহারের অনুমতি মিলে গেল এবং এতেই তাঁর সন্তুষ্টি রয়েছে বলে জানা গেল তখন একজন আগ্রহী ও মুখাপেক্ষী বান্দার মত সকাল সকালই এসব নেয়ামতের স্বাদ গ্রহণ করলেন। আর বান্দার অবস্থা এমনটাই হওয়া চাই।’ (মাআরিফুল হাদিস)

ঈদগাহে যাওয়া

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যেতেন এবং পায়ে হেঁটে ফিরতেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন-

كَانَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَخْرُجُ إِلَى الْعِيدِ مَاشِيًا، وَيَرْجِعُ مَاشِيًا

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যেতেন এবং পায়ে হেঁটে ঈদগাহ থেকে ফিরতেন।’ (ইবনে মাজাহ)

এক পথে যাওয়া ও ভিন্ন পথে ফেরা

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদগাহে এক পথ দিয়ে যেতেন ভিন্ন পথে ফিরতেন। হজরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন-

كَانَ النّبِيُّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ إِذَا كَانَ يَوْمُ عِيدٍ خَالَفَ الطّرِيقَ

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের দিন এক পথ দিয়ে যেতেন এবং ভিন্ন পথ দিয়ে ফিরতেন।’ (বুখারি)

ঈদের দিন পরস্পরের সঙ্গে সাক্ষাৎ

হজরত জুবায়ের ইবনে নুফাইর রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিন পরস্পরের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে বলতেন-

تَقَبّلَ اللّهُ مِنّا وَمِنْكَ

‘আল্লাহ আমাদের পক্ষ থেকে এবং আপনার পক্ষ থেকে কবুল করুন।’ (ফাতহুল বারি)

ঈদের নামাজের সময়

বিখ্যাত তাবেয়ী ইয়াজিদ ইবনে খুমাইর রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন-

خَرَجَ عَبْدُ اللّهِ بْنُ بُسْرٍ، صَاحِبُ رَسُولِ اللّهِ صَلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ مَعَ النّاسِ فِي يَوْمِ عِيدِ فِطْرٍ، أَوْ أَضْحَى، فَأَنْكَرَ إِبْطَاءَ الْإِمَامِ، فَقَالَ: إِنا كُنّا قَدْ فَرَغْنَا سَاعَتَنَا هَذِهِ، وَذَلِكَ حِينَ التسْبِيحِ.

নবিজীর সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর রাদিয়াল্লাহু আনহু ঈদুল ফিতর অথবা ঈদুল আজহার দিন লোকদের সঙ্গে ঈদের নামায পড়ার জন্য ঈদগাহে গেলেন। ইমামের আসতে বিলম্ব হলে তিনি এর প্রতিবাদ করলেন এবং বললেন, এ সময় তো আমরা (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে) নামাজ পড়ে ফারেগ হয়ে যেতাম। (রাবী বলেন) আর এটা নফলের (অর্থাৎ চাশতের) সময় ছিল।’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)

ঈদের নামাজের পর কোরবানি

প্রথমে ঈদের নামাজ পড়তে হবে তারপর কোরবানি দিতে হবে। হাদিসে এসেছে, হজরত বারা ইবনে আজেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন-

خَطَبَنَا النّبِيُّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَوْمَ النّحْرِ، قَالَ: إِنّ أَوّلَ مَا نَبْدَأُ بِهِ فِي يَوْمِنَا هَذَا أَنْ نُصَلِّيَ، ثُمّ نَرْجِعَ، فَنَنْحَرَ فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَقَدْ أَصَابَ سُنّتَنَا، .وَمَنْ ذَبَحَ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ، فَإِنَّمَا هُوَ لَحْمٌ عَجّلَهُ لِأَهْلِهِ لَيْسَ مِنَ النُّسُكِ فِي شَيْءٍ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের উদ্দেশে খুতবা দিলেন। তাতে বললেন, আমাদের এই দিনের প্রথম কাজ নামাজ আদায় করা; এরপর কোরবানি করা। সুতরাং যে এভাবে করবে তার কাজ আমাদের তরীকা মতো হবে। আর যে (নামাজের) আগেই জবাই করেছে (তার কাজ তরীকা মতো হয়নি অতএব) তা পরিবারের জন্য প্রস্তুতকৃত গোশত, (আল্লাহর জন্য উৎসর্গিত) কোরবানি নয়।’ (বুখারি, মুসলিম, ইবনে হিব্বান)

নবিজীর কোরবানি

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি বছরই কোরবানি করতেন। হাদিসে এসেছে, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন-

أَقَامَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِالمَدِينَةِ عَشْرَ سِنِينَ يُضَحِّي كُلّ سَنَةٍ

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনার দশ বছরের (জীবনে) প্রতি বছরই কোরবানি করেছেন।’ (তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ)

নবিজীর কোরবানির পশু ও পদ্ধতি করেছেন

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনার জীবনের ১০ বছর কোরবানি থেকে বিরত থাকেননি। তিনি সেখাবে কীভাবে কোরবানি করেছেন/ কী পশু দিয়ে কোরবানি করেছেন; তা ওঠে এসেছে হাদিসের বর্ণনায়। হজরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন-

…ذَبَحَ النّبِيُّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَوْمَ الذّبْحِ كَبْشَيْنِ أَقْرَنَيْنِ أَمْلَحَيْنِ مُوجَأَيْنِ، فَلَمّا وَجّهَهُمَا قَالَ إِنِّي وَجّهْتُ وَجْهِيَ لِلّذِي

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোরবানির দিন দুটি সাদা-কালো, বড় শিং বিশিষ্ট, খাসি দুম্বা জবাই করেছেন। যখন তিনি তাদের শায়িত করলেন তখন বললেন-

إِنِّي وَجّهْتُ وَجْهِيَ لِلّذِي فَطَرَ السّموَاتِ وَالْأَرْضَ عَلَى مِلّةِ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا، وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ، إِنّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ، اللّهُمّ مِنْكَ وَلَكَ، وَعَنْ مُحَمّدٍ وَأُمّتِهِ بِاسْمِ اللّهِ، وَاللّهُ أَكْبَرُ

উচ্চারণ : ইন্নি ওয়াঝাহতু ওয়াহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা আলা মিল্লাতি ইবরাহিমা হানিফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিনা; ইন্না সাল্লাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহয়িয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিনা লা শারিকা লাহু; ওয়া বিজালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমনিনা; আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা; ওয়া আন মুহাম্মাদিন ওয়া উম্মাতিহি বিসমিল্লাহি; ওয়াল্লাহু আকবার।

এরপর (পশু) জবাই করলেন।’ (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ, মুসতাদরাকে হাকেম)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন-

كَانَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَذْبَحُ وَيَنْحَرُ بِالْمُصَلّى

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদগাহে (পশু) জবাই করতেন এবং নহর করতেন।’ (বুখারি)

নিয়ম হলো- গরু, ছাগল, দুম্বা জবাই করা হবে এবং উট নহর করা হবে। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনই করেছেন।

কোরবানির পশু

হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন-

ضَحّى النّبِيُّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِكَبْشَيْنِ أَمْلَحَيْنِ، فَرَأَيْتُهُ وَاضِعًا قَدَمَهُ عَلَى صِفَاحِهِمَا، يُسَمِّي وَيُكَبِّرُ، فَذَبَحَهُمَا بِيَدِهِ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুটি সাদা-কালো বর্ণের (বড় শিং বিশিষ্ট) নর দুম্বা কোরবানি করেছেন। আমি দেখেছি, তিনি দুম্বা দুটির গর্দানে পা রেখে ‘বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার’ বললেন। এরপর নিজ হাতে জবাই করলেন।’ (বুখারি, মুসলিম)

হজরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদিসে এসেছে, ‘এরপর নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোরবানির স্থানে এলেন এবং নিজ হাতে তেষট্টিটি উট নাহর করলেন।’ (মুসলিম, আবু দাউদ)

স্ত্রীদের পক্ষ থেকে কোরবানি

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন-

وَضَحّى رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ عَنْ نِسَائِهِ بِالْبَقَرِ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ থেকে গরু দ্বারা কোরবানি করেছেন।’ (বুখারি, মুসলিম)

কোরবানির পশুর বয়স

হজরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-

لَا تَذْبَحُوا إِلّا مُسِنّةً، إِلّا أَنْ يَعْسُرَ عَلَيْكُمْ، فَتَذْبَحُوا جَذَعَةً مِنَ الضّأْنِ

তোমরা (কোরবানিতে) ‘মুছিন্না’ ছাড়া জবাই করবে না। তবে সংকটের অবস্থায় ছয় মাস বয়সী ভেড়া-দুম্বা জবাই করতে পারবে।’ (মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)

কোরবানির উট অন্তত পাঁচ বছর বয়সী হতে হবে। গরু, মহিষ দুই বছর এবং ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা এক বছর হতে হবে। ভেড়া ও দুম্বার ক্ষেত্রে উপরোক্ত হাদিস থেকে জানা গেল যে, সঙ্কটকালীন সময়ে তা ছয় মাসের হলেও চলবে।

হজরত বারা ইবনে আজেব রাদিয়াল্লাহু আনহু কোরবানির পশু সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন-

أَشَارَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِيَدِهِ وَيَدِي أَقْصَرُ مِنْ يَدِهِ فَقَالَ: أَرْبَعٌ لَا يُضَحّى بِهِنّ: الْعَوْرَاءُ الْبَيِّنُ عَوَرُهَا، وَالْمَرِيضَةُ الْبَيِّنُ مَرَضُهَا، وَالْعَرْجَاءُ الْبَيِّنُ ظَلَعُهَا، وَالْعَجْفَاءُ الّتِي لَا تُنْقِي فَقَالُوا لِلْبَرَاءِ: فَإِنّمَا نَكْرَهُ النّقْصَ فِي السِّنِّ وَالْأُذُنِ، وَالذَّنَبِ، قَالَ: فَاكْرَهُوا مَا شِئْتُمْ وَلَا تُحَرِّمُوا عَلَى .النّاسِ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাত দিয়ে ইশারা করেছেন- আমার হাত তো তাঁর হাত থেকে ছোট এবং বলেছেন, ‘চার ধরনের পশু দ্বারা কোরবানি করা যায় না : যে পশুর এক চোখের দৃষ্টিহীনতা স্পষ্ট, যে পশু অতি রোগা, যে পশু সম্পূর্ণ খোড়া এবং যে পশু এত দুর্বল যে, তার হাড়ে মগজ নেই।’ লোকেরা বললো, আমরা তো দাঁত, কান ও লেজে ত্রুটিযুক্ত প্রাণী (দ্বারা কোরবানি করা)ও অপছন্দ করি? তিনি বললেন, যা ইচ্ছা অপছন্দ করতে পার। তবে তা অন্যের জন্য হারাম করো না।’ (ইবনে হিব্বান, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)

হজরত আলী ইবনে আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন-

أَمَرَنَا رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَنْ نَسْتَشْرِفَ الْعَيْنَ وَالْأُذُنَيْنِ، وَلَا نُضَحِّي بِعَوْرَاءَ، وَلَا مُقَابَلَةٍ، وَلَا مُدَابَرَةٍ، وَلَا خَرْقَاءَ.

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের আদেশ করেছেন, আমরা যেন (কোরবানির পশুর) চোখ ও কান ভালোভাবে লক্ষ করি এবং ওই পশু দ্বারা কোরবানি না করি, যার কানের অগ্রভাগ বা পশ্চাদভাগ কর্তিত। তদ্রূপ যে পশুর কান ফাড়া বা কানে গোলাকার ছিদ্রযুক্ত।’ (আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিজি)

হযরত আলি ইবনে আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের শিং-ভাঙ্গা বা কান-কাটা পশু দ্বারা কোরবানি করতে নিষেধ করেছেন।’ (ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ)

গরু ও উটে সাত অংশীদার

হজরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন-

خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ مُهِلِّينَ بِالْحَجِّ،…فَأَمَرَنَا رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَنْ نَشْتَرِكَ فِي الْإِبِلِ وَالْبَقَرِ، كُلّ سَبْعَةٍ مِنّا فِي بَدَنَةٍ

আমরা হজের ইহরাম বেঁধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে বের হলাম। …তিনি আমাদেরকে আদেশ করলেন যেন আমরা প্রতিটি উট ও গরুতে সাতজন করে শরিক হয়ে কোরবানি করি।’ (মুসলিম)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, (একটি) গরু সাত জনের পক্ষ থেকে এবং (একটি) উট সাত জনের পক্ষ থেকে (কোরবানি করা যায়)।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, বায়হাকি, ইবনে হিব্বান, ইবনে খুজাইমা)

কোরবানির পশুকে কষ্ট না দেওয়া

কোরবানির পশুকে জবাই করার সময় অহেতুক কষ্ট দেওয়া ছাড়া সুন্দরভাবে জবাই করতে হবে। হাদিসে এসেছে- হজরত শাদ্দাদ ইবনে আওছ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

إِنّ اللهَ كَتَبَ الْإِحْسَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ، فَإِذَا قَتَلْتُمْ فَأَحْسِنُوا الْقِتْلَةَ، وَإِذَا ذَبَحْتُمْ فَأَحْسِنُوا الذّبْحَ، وَلْيُحِدّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَهُ، فَلْيُرِحْ ذَبِيحَتَهُ

আল্লাহ তাআলা সবকিছুর উপর অনুগ্রহকে অপরিহার্য করেছেন। অতএব যখন তোমরা হত্যা করবে তো উত্তম পদ্ধতিতে হত্যা কর। যখন জবাই করবে তো উত্তম পদ্ধতিতে জবাই কর। প্রত্যেকে তার ছুরিতে শান দেবে এবং তার পশুকে শান্তি দেবে।’ (মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)

কোরবানির পশুর গোশত সংরক্ষণ

হজরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন-

أَنّهُ نَهَى عَنْ أَكْلِ لُحُومِ الضّحَايَا بَعْدَ ثَلَاثٍ، ثُمَّ قَالَ بَعْدُ: كُلُوا، وَتَزَوّدُوا، وَادّخِرُوا

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (বিশেষ একটি কারণে) তিন রাত পর কোরবানির গোশত খেতে নিষেধ করেছিলেন। এরপর (অবকাশ দিয়ে) বলেন, ‘খাও, পাথেয় হিসাবে সঙ্গে নাও এবং সংরক্ষণ করে রাখ।’ (মুসলিম)

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার এক বর্ণনায় এসেছে-

فَكُلُوا وَادّخِرُوا وَتَصَدّقُوا

‘খাও, সংরক্ষণ কর এবং সদকা কর।’ (মুসলিম)

কোরবানির পশুর গোশত-চামড়া বিক্রি করা

কোরবানির পশুর গোশত-চামড়া বিক্রি করা বা পারিশ্রমিক হিসেবে কসাইকে দেওয়া যাবে না। হাদিসের বর্ণনায় এসেছে- হজরত আলি ইবনে আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন-

أَمَرَنِي رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَنْ أَقُومَ عَلَى بُدْنِهِ، وَأَنْ أَتَصَدّقَ بِلَحْمِهَا وَجُلُودِهَا وَأَجِلّتِهَا، وَأَنْ لَا أُعْطِيَ الْجَزّارَ مِنْهَا، قَالَ: نَحْنُ نُعْطِيهِ .مِنْ عِنْدِنَا

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে তাঁর (কোরবানির উটের) আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করতে বলেছিলেন। তিনি কোরবানির পশুর গোশত, চামড়া ও আচ্ছাদনের কাপড় ছদকা করতে আদেশ করেন এবং এর কোনো অংশ কসাইকে দিতে নিষেধ করেন। তিনি বলেছেন, আমরা তাকে (তার পারিশ্রমিক) নিজেদের পক্ষ থেকে দেব।’ (মুসলিম, বুখারি)

সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি না করা

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

مَنْ كَانَ لَهُ سَعَةٌ، وَلَمْ يُضَحِّ، فَلَا يَقْربَنّ مُصَلّانَا

সামর্থ্য থাকার পরও যে ব্যক্তি কোরবানি করলো না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ (ইবনে মাজাহ, দারাকুতনি)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঈদুল আজহা ও কোরবানি সম্পর্কিত হাদিসের দিকনির্দেশনা মেনে চলার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com