কোরবানির হাট কাঁপাচ্ছে হিরো আলম

0
দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদ উল আজহা। ঈদকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বসেছে কোরবানীর পশু হাট। হাটে উঠেছে অসংখ্য কোরবানীযোগ্য পশু। এরই মধ্যে জেলার বিভিন্ন খামারিরা তাদের পরিচর্চায় প্রস্তুত করে হিরো আলম, বাংলালিংক, রবি ও ভারতীসহ বিভিন্ন নামের পশু।  ওজন ও নামের কারণে বিশাল আকৃতির এসব বাহারি ষাঁড়গুলোই বগুড়ায় কোরবানির পশুর হাট দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। পশু অনেকেই কিনতে না পারলেও এক নজর দেখার জন্য ভিড় করছেন ক্রেতা-বিক্রেতা ও উৎসুক জনতা।
জানা গেছে, সারা দেশের মতো বগুড়ায় কোরবানির জন্য পশু চাহিদা ৩ লাখ ৫৯ হাজার আর পালন হয়েছে প্রায় সোয়া ৪ লাখ পশু। তাছাড়া খামারে দেশিজাতের পশু লালন পালন করে লাভের আশায় হাটে হাটে কোরবানির পশু তুলছেন জেলার ৪৬ হাজার ১৫জন খামারিরা।
এসব পশুর মধ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলার খামারিদের মধ্যে গাবতলী উপজেলার নারুয়ামালার বাওইটোনা এলাকার খামারি জহুরুর ইসলাম জুয়েল ১৫শ কেজি ওজনের একটি ষাঁড় পালন করেছেন। নাম রেখেছেন বাংলালিংক। প্রসবের পর দেখতে সুন্দর ও নাদুসনুদুস হওয়ায় শখের বশে নাম রাখা হয় ‘বাংলালিংক’। গত সাড়ে চার বছরে ওজন হয়েছে প্রায় দেড় হাজার কেজি। দাম চাওয়া হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা।
অন্যদিকে শহরের রহমান নগর এলাকার আবেদীন ডেইরি খামারের মালিক আব্দুস সবুর বাবু তার খামারে ১ হাজার ৩০০ কেজি ওজনের একটি ষাঁড় পালন করেছেন। আদর করে নাম রেখেছেন ‘ভারতী’। ভারতীর প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় দেওয়া হয় প্রাকৃতিকভাবে দানাদার, লিকুইড, খৈল, গম, ভুসি, ভাত, ঘাস ও কলা। এছাড়া গরুটির প্রতিবার পানির প্রয়োজন হয় কমপক্ষে ৮০ লিটারের মতো। এটার দাম চাওয়া হচ্ছে ১০ লাখ টাকা। ইতোমধ্যেই ছয় থেকে সাড়ে ছয় লাখ টাকা দাম উঠেছে।
এছাড়া শহরের ফুলবাড়ি মধ্যপাড়া এলাকার যুবক জিয়াম পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার ব্যবসায় সহযোগিতা এবং গরু পালন করছেন। তিনি তার খামারে ৯শ কেজি ওজনের হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের একটি ষাঁড় পালন করেছেন। নাম দিয়েছেন ‘হিরো আলম’। কালো ও সাদা রঙের ষাঁড়টির দাম চাওয়া হচ্ছে ৮ লাখ টাকা।
হিরো আলম ৮ লাখ, বাংলালিংক ১৫ লাখ ও ভারতীর দাম চাওয়া হচ্ছে ১০ লাখ টাকা। এসব পশু হাটে না তুললেও খামারে দেখতে আসছেন ক্রেতারা। তাদের প্রাকৃতিক দানাদার, লিকুইড, খৈল, গম, ভুসি, ভাত, ঘাস ও কলা খাওয়ানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন খামারিরা।
জেলার গাবতলী উপজেলার নাড়ৃামালা ইউনিয়নের বাওইটোনা গ্রামের বাসিন্দা জহুরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, প্রায় সাড়ে চার বছর আগে বাড়ির অনেক পুরাতন অস্ট্রেলিয়ান হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান গাভি একটি বাচ্চা প্রসব করে। বাচ্চাটি দেখতে অনেক সুন্দর ও নাদুসনুদুস হওয়ায় নাম রাখা হয় বাংলালিংক। গত কয়েক বছরে ষাঁড়টির প্রায় ১৫০০ কেজি ওজন হয়। একে নিজ জমিতে চাষাবাদ করা নেপিয়ার ঘাস, খড় ও ভুসি খেতে দেওয়া হয়। প্রতিদিন খরচ প্রায় ৫০০ টাকা। কখনো কোনো ক্ষতিকারক ইঞ্জেকশন বা মোটাতাজা করার চেষ্টা করা হয়নি। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে বাংলালিংককে লালন-পালন করা হয়েছে। বাংলালিংক ষাঁড়ের ওজন হবে প্রায় ১৫শ কেজি। তাই দাম চাওয়া হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা। এরপরও বর্তমান বাজার দর অনুসারে বিক্রি করা হবে। যদি বগুড়ায় বিক্রি না হয় তাহলে বাংলালিংককে ঢাকা বা চট্টগ্রামে নিয়ে যাব।
ভারতী নামের গরুর মালিক আব্দুস সবুর বাবু বলেন, ৩ বছর ধরে গরুটির লালন-পালন করে আসছি। গরুটি দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ বাড়িতে ভিড় করছে। এটি বড় হওয়ার কারণে কোনো হাট-বাজারে তোলা হবে না। যারা কিনবেন তারা খামারে এসে নিয়ে যাবেন। ষাড়টির পরিচর্যায় কোনো ধরনের ক্ষতিকর ট্যাবলেট ও ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়নি। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে খড়, তাজা ঘাস, খৈল, ভুসি, চালের গুঁড়া, ভুট্টা, ভাতসহ পুষ্টিকর খাবারের মাধ্যমে লালন-পালন করা হচ্ছে। পাশাপাশি নিয়মিত দুই বার করে গোসল করানো, পরিষ্কার ঘরে রাখা ও রুটিন অনুযায়ী ভ্যাকসিন দেওয়াসহ প্রতিনিয়ত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া হয়।
অন্যদিকে ফেসবুকে ব্যাপক সাড়া জাগানো হিরো আলমের মালিক জিয়াম বলেন, বাবা-দাদারা আগে থেকেই বাড়িতে গরু পালন করতেন। ইউনানীতে পড়াশোনা করে ব্যবসার পাশাপাশি গাভী পালন করে আসছি। তারই ধারাবাহিকতায় ৪ বছর বয়সী ‘হিরো আলম’ আমাদের বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করেছে।
ষাড়টির ওজন এত বেশি হবে বুঝতে পারিনি। হঠাৎ করেই ষাঁড়টি এতটা স্বাস্থ্যবান হয়েছে। ষাঁড়টি পালন করতে করতে ওর ওপর অনেক মায়া জন্মেছে। আর এ কারণে ভালোবেসে নাম দিয়েছি ‘হিরো আলম’। এ কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ষাঁড়টির ছবি পোস্ট দিয়েছি। ফেসবুকেও সাড়া পেয়েছি। ইতোমধ্যে ষাঁড়টির দাম চাওয়া হয়েছে ৭ লাখ টাকা।
নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল ইউনিয়নের সরিষাবাদ গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক মিয়া সবচেয়ে বড় গরু লালন পালন করেছেন। তার পরিচর্চায় এই বাছুরটি রবিবারে হয়েছিল বলে আমরা ষাঁড়টিকে রবি বলে ডাকি। এর ওজন ১১০০ কেজি। উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি ও দৈর্ঘ ১০ ফুট ৫ ইঞ্চি। এটি বাহামা জাতের ষাঁড়। তাঁর আশা কমপক্ষে ১০ লাখ টাকায় বিক্রি হবে গরুটি।
তিনি আরও বলেন, ৩ বছর ৩ মাসের ওই গরুটিকে প্রতিদিন ২৫০-৩০০ টাকার খাবার দিতে হয়। খড়, খৈল, ভুষি, ভাতের পাশাপাশি কাঁচা ঘাসও খাওয়াতে হয় রবিকে। গরুটিকে দেখতে প্রতিদিন অনেক লোক আমার বাড়িতে আসে। এলাকায় কাক্সিক্ষত দামে রবিকে বিক্রয় না করতে পাড়লে ঢাকায় নিয়ে যাবেন বলে ওই খামারী জানিয়েছেন।
বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সাইফুল ইসলাম জানান, জেলার ১২ উপজেলায় ৪৬ হাজার ১৫ জন খামারি মোট ৪ লাখ ২৭ হাজার ২৯৫টি গবাদিপশু কোরবানির উপযোগী করেছেন। এ বছর জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৭টি। এ হিসেবে জেলায় অতিরিক্ত পশু রয়েছে ৬৭ হাজার ৯২০টি। তবে এবার কোরবানীর বাজারে সৌখিন ও সবচেয়ে বড় আকৃতির ষাঁড় হিসেবে বাংলালিংক, ভারতী, হিরো আলম, রবি ও ভারতী নামের এসব ষাঁড়গুলো ফেসবুকসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে।
তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com