বাঁশের ঠিকা দিয়ে সরকারি কলেজে পাঠদান!

0

জামালপুরের মেলান্দহ সরকারি কলেজে বাঁশ ও কাঠের ঠিকা দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান। এতে ঝুঁকিতে রয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কলেজের দুইটি ভবন এমন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

জানা গেছে, কলেজটি ১৯৭২ সালে চার একর জমির ওপর নির্মিত হয়। ১৯৮৭ সালে এটি সরকারিকরণ হয়। আট বছর আগে কলেজের প্রশাসনিক ভবনসহ দুইটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়ে ২০১৬ সালে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়।

পরে সরেজমিনে পরিদর্শন করেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। পরিদর্শন শেষে ভবনটির অফিস রুম, কন্ট্রোল রুম ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেন এবং শর্ত সাপেক্ষে অন্যরুমগুলো ব্যবহারের অনুমতি দেন। তবে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে এখনও ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন অভিভাবকরা।

একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. লিটন জানান, কলেজের বিজ্ঞান ভবন, প্রশাসনিক ভবনসহ দুইটি ভবনে শ্যাওলা জমে রয়েছে। বিজ্ঞান ভবনের তৃতীয় ও দ্বিতীয় তলায় ভবনের বিভিন্ন জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়ছে। জানালা দরজাগুলোও ভেঙে পড়েছে। ভবনে প্রবেশ পথের প্রথম গেট ভেঙে পড়ে আছে। পলেস্তারা যেন খসে না পড়ে তার জন্য কাঠ ও বাঁশ দিয়ে ঠিকা দিয়ে রাখা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ভবন ভেঙে পড়ার ভয়ে মা বাড়ি থেকে কলেজে আসতে দেয় না। কখন যেন ভেঙে পড়ে এই আতঙ্ক সব সময়। কলেজের সব ক্লাসরুমে একই অবস্থা প্রায়। সিঁড়ির ছাদ থেকেও প্লাস্টার খসে খসে পড়ছে। ভেঙে পড়ার ভয়ে মাঝে মধ্যে ক্লাস করি।

একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী লিনা আক্তার বলেন, ক্লাসে ঢুকলে ভয় লাগে, কখন যেন ভেঙে পড়ে। আতঙ্ক নিয়ে প্রতিনিয়ত ক্লাস করে যাচ্ছি। এভাবে ক্লাস করা সম্ভব নয়। যদি কোনো সময় ভূমিকম্প হয় সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে পড়বে। আমরা আতঙ্কের মধ্যে ক্লাস করে যাচ্ছি। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী উম্মে কুলসুম বলেন, যেদিন আমার প্রথম ক্লাস ছিলো ওই দিনই চোখের সামনে ক্লাসরুমের জানালা ভেঙে পড়তে দেখেছি। এছাড়াও কিছুদিন আগে পরীক্ষা দেওয়ার সময় হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে পরীক্ষা দিতে পারিনি। পরে অন্য রুমে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি।

আমিনুর রহমান নামে এক অভিভাবক জানান, একদিন কলেজে গিয়েছিলাম এক দরকারে। গিয়ে দেখি ছাদ থেকে ক্লাসরুমে পানি পড়ছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে প্লাস্টার খসে পড়ে রড দেখা যাচ্ছে। তারপর থেকে আমার ছেলেকে আর কলেজে যেতে দেয়নি। টিসি নিয়ে অন্য কলেজে ভর্তি করিয়ে দেবো ভাবছি।

পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রবিউল ইসলাম বলেন, সব সময় আতঙ্কের মধ্যে ক্লাস করাতে হয়। কখন যেন কী ঘটনা ঘটে। আমাদের সব সময় আতঙ্কে দিন কাটে। যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

কলেজের অধ্যক্ষ হাসান তৌফিক মো. আলী নূর বলেন, বর্তমানে সরকারি কলেজের অবকাঠামো অত্যন্ত নাজুক। ইতোমধ্যে প্রশাসনিক ভবনের একাংশ ও বিজ্ঞান ভবন মৌখিকভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রী ও আমরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করার ভয়ে অনেকে কলেজে আসতে অনীহা প্রকাশ করছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com