বেলারুশকে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র দেবে রাশিয়া
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশকে পারমাণবিক সক্ষমতাসম্পন্ন স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা দেবে রাশিয়া। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বেলারুশকে এই ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা সরবরাহ করা হবে। খবর বিবিসি।
পুতিনের ভাষ্য অনুযায়ী, ইস্কান্দার-এম ব্যবস্থা থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ৫০০ কিলোমিটার (৩১০ মাইল) দূরত্ব পর্যন্ত আঘাত হানতে পারে। ইস্কান্দার-এম ব্যবস্থা প্রচলিতের পাশাপাশি পরমাণুবাহী ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে।
স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা বেলারুশে পাঠানোর ঘোষণা দেন। একই দিন ইউক্রেন বলেছে, দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ সেভেরোদোনেৎস্ক শহর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রুশ বাহিনী।
গতকাল রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে বৈঠক করেন পুতিন। বৈঠকে পুতিন বেলারুশকে ‘ইস্কান্দার-এম’ নামের ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা সরবরাহের অঙ্গীকার করেন।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত বৈঠকে পুতিন বলেন, ‘আমরা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আমরা বেলারুশকে ইস্কান্দার-এম কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা হস্তান্তর করব।’
বৈঠকে লুকাশেঙ্কোর এক প্রশ্নের জবাবে পুতিন আরও বলেন, বেলারুশের এসইউ-২৫ যুদ্ধবিমান হালনাগাদে রাশিয়া সহায়তা করবে, যাতে এই যুদ্ধবিমান পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে পারে।
ইস্কান্দার-এম ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নিয়ে রাশিয়া ও বেলারুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করবে বলে জানান পুতিন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। এই হামলার জেরে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমাদের উত্তেজনা বেড়ে যায়। এমন প্রেক্ষাপটে পুতিন বেশ কয়েকবার রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে কথা বলেন।
কারও কারও ভাষ্যমতে, ইউক্রেন যুদ্ধে হস্তক্ষেপ থেকে পশ্চিমাদের বিরত রাখতে সতর্কতার অংশ হিসেবে পুতিন রুশ পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে কথা বলেছেন।
দুই ন্যাটো সদস্য লিথুনিয়া ও পোল্যান্ডের মধ্যকার ছোট রুশ ছিটমহল কালিনিনগ্রাদে ইতিমধ্যে ইস্কান্দার-এম ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে।
সম্প্রতি লিথুনিয়া সরকার কালিনিনগ্রাদ থেকে কিছু পণ্য আনা-নেওয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লিথুনিয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছে মস্কো। গতকাল পুতিন ও লুকাশেঙ্কো লিথুনিয়ার এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বেলারুশের নেতা বলেছেন, লিথুনিয়ার এই পদক্ষেপ যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। এই সিদ্ধান্ত অগ্রহণযোগ্য।
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সরঞ্জামগত সহায়তা দিয়ে আসছে বেলারুশ। তবে দেশটির সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত অংশ নেয়নি।
ইউক্রেনের এক স্থানীয় কর্মকর্তার ভাষ্য, গত শুক্রবার রাতে দেশটির উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রাশিয়া। এতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকতে পারেন।
ইউক্রেনের ভাষ্য, এই হামলায় বেলারুশ থেকে কিছু রকেট ছোড়া হয়েছে। ইউক্রেনের সেভেরোদোনেৎস্ক শহর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রুশ বাহিনী। গতকাল ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।
কয়েক সপ্তাহ ধরে শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল লড়াই চলছিল। শহরটি নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অর্থ হলো, রাশিয়া এখন লুহানস্কের প্রায় পুরোটা ও পার্শ্ববর্তী দোনেৎস্কের বেশির ভাগ অংশ দখলে নিয়েছে।
লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক নিয়ে বৃহত্তর দনবাস শিল্পাঞ্চল গঠিত। পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চল দখলের লক্ষ্যে রুশ বাহিনী জোরালো অভিযান চালাচ্ছে।
যে শহরগুলো রাশিয়া দখল করেছে, সেগুলোর পুনর্দখল করা হবে বলে গতকাল রাতে এক ভিডিও ভাষণে ঘোষণা দেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।