দূরত্ব কমাতে যেভাবে সৌদি যুবরাজকে স্বাগত জানাচ্ছে তুরস্ক

0
ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাসোগজি হত্যাকাণ্ডের পর এই প্রথম তুরস্ক সফরে গেছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।
ওই ঘটনা নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে যে গভীর ফাটল তৈরি হয়েছিল, তা কমিয়ে আনা তার এই সফরের লক্ষ্য। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে তিনি একান্ত বৈঠকও করবেন।
মিস্টার এরদোয়ান একবার পরোক্ষভাবে এমন অভিযোগও করেছিলেন যে, সৌদি যুবরাজের নির্দেশেই সৌদি এজেন্টরা জামাল খাসোগজিকে হত্যা করে। তবে মোহাম্মদ বিন সালমান এই ঘটনার সঙ্গে তার কোন সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন।
তুরস্কে অর্থনৈতিক সংকট তীব্র হওয়ার পর তারা এখন বেশি করে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং সাহায্য চাইছে। সেই পটভূমিতেই তুরস্কে সৌদি যুবরাজের এই সফর।
এর আগে তুরস্ক একই রকমভাবে মিশর, ইসরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গেও তাদের সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করে, যা বিগত বছরগুলোতে ভালো যাচ্ছিল না।
এদিকে যুবরাজ মোহাম্মদও চাইছেন তাকে যে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে করা হয়েছিল, সেটা থেকে বের হয়ে আসতে এবং তার শক্তিশালী আন্তর্জাতিক ভূমিকা পুনরুদ্ধার করতে।
এর আগে মধ্যপ্রাচ্য সফরের অংশ হিসেবে এ-সপ্তাহে তিনি জর্দান এবং মিশরে যান এবং সামনের মাসে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন। ২০১৯ সালে জো বাইডেন জামাল খাসোগজির হত্যাকাণ্ডের জন্য সৌদি আরবকে ‘একঘরে’ করা হবে বলে অঙ্গীকার করেছিলেন।
জামাল খাসোগজি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার এক কলামিস্ট এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের এক সুপরিচিত সমালোচক। তাকে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে ঢুকতে দেখা গিয়েছিল। তিনি তার তুর্কি বান্ধবী হাতিস চেঙ্গিসকে বিয়ে করার লক্ষ্যে সৌদি কনস্যুলেটে গিয়েছিলেন প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র সংগ্রহের জন্য।
জাতিসংঘের এক তদন্ত কর্মকর্তা তার তদন্তের উপসংহার টেনেছিলেন এই বলে যে, জামাল খাসোগজিকে রিয়াদ থেকে আসা ১৫ সদস্যের একটি শক্তিশালী দল হত্যা করেছিল এবং এরপর তার মৃতদেহ টুকরো টুকরো করে ফেলেছিল। কনস্যুলেটের ভেতরের কথাবার্তা গোপনে রেকর্ড করেছিল তুর্কি গোয়েন্দা সংস্থা, সেটা শুনেই জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান।
মিস্টার এরদোয়ান যদিও সরাসরি যুবরাজ মোহাম্মদকে এই ঘটনার ব্যাপারে অভিযুক্ত করেননি, তিনি দাবি করেছিলেন, এই হত্যার নির্দেশ যে সৌদি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এসেছে, সেটা তিনি জানেন।
সৌদি তদন্ত কর্মকর্তারা অবশ্য এই ঘটনার জন্য দায় চাপিয়েছিল কিছু শৃঙ্খলা-ভঙ্গকারী এজেন্টকে, এবং বলেছিল এই অভিযানের বিষয়ে যুবরাজ কিছুই জানতেন না।
এক বছর পর, একটি সৌদি আদালত এই হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য পাঁচজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে তাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়। পরে তাদের এই সাজা লঘু করে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। আর এই অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগে অপর তিন জনকে ৭ হতে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছিলেন, আংকারায় যুবরাজ মোহাম্মদের সঙ্গে তার আলোচনায় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে কিভাবে আরও উচ্চতর পর্যায়ে নেয়া যায়, সেটা নিয়ে কথা হবে।
একজন সিনিয়র তুর্কি কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেনে, এই সফর দুই দেশের সম্পর্ককে ‘একদম সম্পূর্ণ স্বাভাবিক এবং সংকট পূর্ববর্তী অবস্থায়’ ফিরিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। জ্বালানি, অর্থনীতি এবং নিরাপত্তা নিয়ে দুই নেতার মধ্যে চুক্তিও হবে।
জামাল খাসোগজির তুর্কি বান্ধবী হাতিস চেঙ্গিস যুবরাজ মোহাম্মদকে তুরস্কে স্বাগত জানানোর সমালোচনা করেছেন এবং ন্যায় বিচারের জন্য লড়াই অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন।
এই টুইট বার্তায় তিনি বলেন, “প্রতিদিন এক একটি দেশে সফরে গিয়ে যে রাজনৈতিক বৈধতা তিনি অর্জন করছেন, তাতে করে তিনি যে একজন খুনি সেই সত্যটা বদলে যাচ্ছে না।”
তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির নেতা কামাল কিলিকডারুগলু প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সমালোচনা করেন এই বলে যে, খাসোগজির হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল যে ব্যক্তি, তাকে তিনি আলিঙ্গন করছেন।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান গত এপ্রিল মাসে সৌদি আরব সফরে যান এবং সেখানে প্রকাশ্যেই যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে আলিঙ্গন করেন। সূত্র: বিবিসি
তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com