‘সংলাপ তখনই হবে যখন সরকার পদত্যাগ করবে এবং সংসদ বিলুপ্ত হবে’

0

দিন যতই গড়াচ্ছে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানামুখী তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা এ বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করছেন। আগামী বছরের শেষে কিংবা ২০২৪ সালের শুরুতে হবে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তবে দেড় বছরেরও বেশি সময় বাকি থাকতেই এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, দলীয় সরকারের অধীনে কখনোই নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ইতোমধ্যে যেসব নির্বাচন হয়েছে তার কোনোটাই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। সম্প্রতি মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও মানবাধিকার রিপোর্ট প্রমাণ করে বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করলে তা সুষ্ঠু হবে না। তাই আগে সরকারকে পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। তারপরে সংলাপ বা নির্বাচনের আলোচনা।

অবশ্য সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে রাজপথের আন্দোলনকেও গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। তবে বিএনপি বর্তমানে প্রধানত দুইটি ইস্যুতে অনড় অবস্থানে রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন আদায়। সেই সাথে দল গুছিয়ে এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে সাথে নিয়ে দাবি আদায়ে বৃহত্তর ঐক্য গঠনও বিএনপির অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। শিগগিরই দাবি আদায়ে আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করা হবে বলে দলের নীতিনির্ধারক সূত্র জানিয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কয়েকজন এবং নির্বাহী কমিটির কয়েকজন সম্পাদক ও সহসম্পাদকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারসহ একগুচ্ছ দাবি আদায়ে এবার ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে বিএনপির হাইকমান্ড। আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারের কোনো পাতানো ফাঁদে পা না দিয়ে সতর্ক অবস্থানে থাকবে দলটি। তাদের মতে- আওয়ামী লীগ সরকারকে মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত আন্দোলনের বিকল্প নেই। এজন্য বিএনপি এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোকে পুনর্গঠন করা জরুরি। সম্প্রতি দলের তৃণমূল থেকে এ ধরনের প্রস্তাবনা এসেছে। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের এই অভিন্ন মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে আন্দোলনের পরিকল্পনা প্রণয়নে দফায় দফায় বৈঠক করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এ ছাড়া সমমনা অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট নাগরিকদের একই প্ল্যাটফর্মে এনে বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠনেরও কাজ করছে বিএনপি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে ভয়াবহ একটা পরিস্থিতি। আমাদের কিছুই অবশিষ্ট নেই। আমরা এখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে ভাবছি না। আমরা ভাবছি নির্বাচন কিভাবে হবে সেটা নিয়ে। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি, অবৈধ দখলদার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাব না। এজন্য আমাদের দাবি হচ্ছে সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে এবং এই সংসদকেও বাতিল করতে হবে। এরপর নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারকে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষমতা দিতে হবে। তাহলে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করব। সুতরাং আমাদের দাবি হচ্ছে নির্বাচনকালীন একটা নিরপেক্ষ সরকার এবং বর্তমান সংসদের বিলুপ্তি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও অবাধ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান দেশের জনগণের দাবি। সেই দাবির প্রতি শতভাগ সম্মান জানিয়ে আমরা বিএনপি মাঠে আছি। আজকে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত এমনকি সরকারের উচ্ছিষ্টভোগী রাজনৈতিক দলগুলোও এই দাবির সাথে একমত পোষণ করছে যার যার অবস্থান থেকে। যেকোনো আন্দোলনের পূর্ব শর্ত হচ্ছে- একটি জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা। আর সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করার দাবিতে ভিন্ন জায়গা থেকে আমরা অভিন্ন মতামত পাচ্ছি। সুতরাং জাতীয় ঐক্য গড়া অত্যন্ত দরকার।

আন্দোলন ও জোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের আহ্বানে রাজনৈতিক দলগুলো যখন সাড়া দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হবে তখন মাঠই বলে দেবে আন্দোলন যুগপৎ হবে নাকি আলাদা? কখনো কখনো আন্দোলন আলাদা হলেও চূড়ান্ত পর্যায়ে এককাতারে চলে আসে। আবার যুগপৎ আন্দোলনও একপর্যায়ে এসে নানা কারণে আলাদা হয়ে যায়। সুতরাং আমাদের প্রস্তুতি আছে। যেকোনো সময় জাতীয় ঐক্যের বিষয়টি পরিষ্কার হবে। যারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় না তারা আমাদের আহ্বানে সাড়া দিবে এবং শিগগিরই তা দৃশ্যমান হবে। যেকোনো রাজনৈতিক দল তাদের মতো কর্মসূচি পালন করতেই পারে। কিন্তু এবার তারা সবাই সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে একমত। কোনো দল আর সরকারের প্রতারণার শিকার হবে না। কারণ সবাই সজাগ।

গয়েশ্বর আরো বলেন, এই সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। সুতরাং আমাদের কথা পরিষ্কার যে, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে নতুনভাবে সরকারের পাতানো ফাঁদে পা দেয়ার কারণ নাই। সরকারের সাথে তো সংলাপ প্রতিদিনই হচ্ছে। তারা তাদের মতো বলছে। আমরা আমাদের মতো বলছি। উত্তর-প্রত্যুত্তর তো দেয়া হচ্ছে। সংলাপ তখনই হবে যখন সরকার পদত্যাগ করবে এবং সংসদ বিলুপ্ত হবে। শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে তার সাথে সংলাপের প্রশ্নই আসে না। জনগণের দাবি সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। তাদের যেনতেন নির্বাচন করতে দেয়া হবে না।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না এটাই দলীয় সিদ্ধান্ত। শুধু তা-ই নয়, কোনো আলোচনায়ও বিএনপি যাবে না। কারণ আমরা বিগত দিনে আলোচনা করেছি, নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেছি। কিন্তু তার ফলাফল দেশের মানুষ পেয়েছে, বিশ্বাবাসীর কাছে এটা পরিষ্কার দিনের আলোর মতো। সুতরাং এই রেজিমের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া যাবে না, আলোচনায়ও যাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট- একমাত্র নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে সে বিষয়ে আলোচনা শুরু হতে পারে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com