চাঁদাবাজির ভয়ঙ্কর আস্তানা প্রগতি ক্লাব
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র কারওয়ান বাজারে চলছে সশস্ত্র চাঁদাবাজি। সন্ত্রাসীরা দিনে রাতে এই বাজার থেকে কোটি টাকার ওপরে চাঁদা ওঠাচ্ছে। কেউ অস্বীকৃতি জানালে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। চাঁদার টাকা পরিশোধ করেই সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে তাদের মুক্তি মিলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারওয়ান বাজারের প্রগতি ক্লাব থেকেই চাঁদাবাজির ভয়ঙ্কর সব ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া কারওয়ান বাজারের চাঁদাবাজি ছাড়াও ছিনতাই, অপহরণ, মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে সব ধরনের অপরাধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এই ক্লাব থেকেই। অন্তত ৫০০ সন্ত্রাসীর একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কারওয়ান বাজারে এই চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। আর ভয়ঙ্কর এই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক হলেন স্থানীয় যুবলীগ নেতা লোকমান; যার গডফাদার হলেন বিএনপি নেতা নবী সোলায়মান। এই সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে আছেন কারওয়ান বাজারের ছোটবড় হাজারো ব্যবসায়ী।
গত শুক্রবার রাতে কলাবাগান ও ধানমন্ডি ক্লাবে অভিযানের পর র্যাব প্রগতি ক্লাবেও হানা দেয়। এর আগে গত সপ্তাহে কারওয়ান বাজার থেকে অস্ত্রসহ এই সিন্ডিকেটের তিন সদস্যকে গ্রেফতারও করা হয়। গত ৪ আগস্ট কারওয়ান বাজার-কেন্দ্রিক চাঁদাবাজদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, ‘চাঁদাবাজি-মস্তানি করলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। আমরা এখানে কোনো ধরনের চাঁদাবাজি, মস্তানি করতে দেব না।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারিতে কোনো কাজ হয়নি। সশস্ত্র চাঁদাবাজি চলছেই। শুধু তাই নয়, চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে আটকে রাখার মতোও ঘটনা ঘটেছে। গত ১৭ আগস্ট রাতে এরশাদ পার্কের ভিতর থেকে ব্যবসায়ী জসিম পাটোয়ারীকে তুলে নিয়ে যায় লোকমান বাহিনী। জসিমের অপরাধ, তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করেছেন। তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয় কিচেন মার্কেটের ছাদে। সেখানে তাকে মারধরের পর ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। ব্যবসায়ী জসিম পাটোয়ারী নিজেও শাসক দলের নেতা হয়েও ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে প্রাণ রক্ষা করতে হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, লোকমান বাহিনীর লোকমানের কথাই যেন শেষ কথা। তার কথার বাইরে কেউ গেলে তাকে চরম খেসারত দিতে হয়। সূত্র জানায়, নোয়াখালীর এই লোকমান কিচেন মার্কেটের চার তলায় আস্তানা গেড়েছেন। তার সঙ্গে আরও রয়েছেন নাজমুল আলম রনি, খালেদ রানা, ফাহিম, মো. আলী, টিপু, সবুজ, টেইলর জসিম। সূত্র জানায়, লোকমান বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। বিশেষ করে নোয়াখালী অঞ্চল থেকে পেশাদার সন্ত্রাসীদের এনে কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজি করানো হচ্ছে। এদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে নিজ নিজ এলাকায়। এরা তাদের এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটে এদের জন্য রয়েছে লঙ্গরখানা। সেখানেই তারা খাচ্ছে, ঘুমাচ্ছে আর বাজারজুড়ে চাঁদাবাজি করছে অস্ত্র উঁচিয়ে। জানা গেছে, কারওয়ান বাজারে সারা বাংলাদেশ থেকে আসা প্রতিটি ট্রাক থেকে ১ হাজার টাকা করে চাঁদা তুলছে লোকমান বাহিনী। কারওয়ান বাজার ওয়াসা গলির প্রতিটি আড়তদার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, এরশাদ বিল্ডিংয়ের প্রতিটি আড়তদার, ফলপট্টি, মাছের আড়ত থেকে শুরু করে প্রতিটি ছোটবড় ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ইঞ্চি থেকে চাঁদা আদায় করছে লোকমান বাহিনী।