কোরীয় উপদ্বীপ: দক্ষিণের ‘প্রধান শত্রু’ উত্তর, পরিস্থিতি কতোটা বিপজ্জনক?

0

দক্ষিণ কোরিয়ায় যখন কট্টরপন্থী নতুন এক প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন তার আগে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-আন একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন।

দেশটির সঙ্গে ব্যর্থ পরমাণু আলোচনা এবং তার পরে কয়েক বছর ধরে চলা অচলাবস্থার পর কোরীয় উপদ্বীপে এখন উত্তেজনা ক্রমশই বাড়ছে।

‘আমি একটি কুড়াল নেওয়ার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু এটি বহন করা খুব কঠিন হবে। তাই আমি একটি ছুরির ব্যাপারে মনস্থির করি।’

একটি ককটেল বারে বসে জেন তার পালিয়ে যাওয়ার বিশদ পরিকল্পনার কথা বর্ণনা করছিলেন। সউলে বসবাসকারী একজন দক্ষিণ কোরীয় হিসেবে তিনি জানেন উত্তর কোরিয়া আক্রমণ করলে তিনি কী করবেন- প্রথমে তার কিছু অস্ত্র প্রয়োজন তারপর দুটো মোটরবাইক, একটি তার এবং অন্যটি তার ভাই-এর জন্য।

মা-বাবা তাদের পেছনে বসবেন। উত্তর কোরীয়রা সেতুতে বোমা ফেলার আগেই খুব দ্রুত তারা শহরের নদী পার হয়ে যাবেন এবং বন্দর ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আগেই পৌঁছে যাবেন উপকূলে।

এক সন্ধ্যায় জেন ও তার ভাই একসাথে বসে তারা কোন পথে পালাবেন সেই ম্যাপটাও ঠিক করে নিয়েছিলেন।

এসবই পাঁচ বছর আগের কথা। সে সময় উত্তর কোরিয়া উন্মত্ত হয়ে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাচ্ছিল। এর মধ্যে এমন ক্ষেপণাস্ত্রও ছিল যা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেও পরমাণু বোমা হামলা চালানো সম্ভব।

তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এর কড়া জবাব দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।

জেন স্বীকার করেন যে, সে সময় তিনি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন।

কিন্তু তারপরেও দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক নাগরিক মনে করেছিলেন ৭০ বছর আগে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের অবসানের পর তারা আবারো আরো একটি যুদ্ধের কাছাকাছি চলে এসেছেন।

ঐতিহাসিক কিছু ঘটনা
সে সময় উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা ঘটে। দক্ষিণ কোরিয়ার নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন ট্রাম্পকে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-আনের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যাপারে রাজি করাতে পেরেছিলেন।

এটা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন কোনো প্রেসিডেন্টের সাথে উত্তর কোরিয়ার নেতার প্রথম বৈঠক।

এর পরে আরো কিছু ঐতিহাসিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় যার জের ধরে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র ত্যাগ এবং দুই কোরিয়ার মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কিছু আশাবাদ তৈরি হয়।

উত্তর কোরিয়ার শরণার্থী মা-বাবার সন্তান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন তার প্রতিপক্ষ কিম জং-আনের হাত ধরে রাজধানী পিয়ংইয়াং-এর জনাকীর্ণ একটি স্টেডিয়ামে উপস্থিত হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

সে সময় প্রেসিডেন্ট মুনের উপদেষ্টা অধ্যাপক মুন চুং-ইন বলেন, তখন দর্শকরা বুঝতে পারে নি তারা কী করবে। তাদেরকে বলা হয়েছিল যে এ লোকটি তাদের শত্রু।

কিন্তু উত্তর কোরিয়ার দেড় লাখ দর্শক তখন তুমুল হর্ষ-ধ্বনি ও করতালিতে ফেটে পড়েছিল। ‘এই দৃশ্য ছিল দেখার মতো, আমার জন্য এটা ছিল দারুণ এক ঘটনা,’ বলেন তিনি।

বদলে যেতে থাকে পরিস্থিতি
কিন্তু প্রেসিডেন্ট মুনের যতই ক্ষমতা ছাড়ার সময় হতে থাকে, সে সব আশা-ভরসাও ছিন্ন হয়ে যেতে শুরু করে। ২০১৯ সালে উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরমাণু সমঝোতা ভেঙে পড়ে। একই সাথে ভেঙে পড়ে দুই কোরিয়ার মধ্যে আলোচনাও।

এরপর থেকেই অচলাবস্থা বিরাজ করছে। এর মধ্যে উত্তর কোরিয়া তাদের গণ-বিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির কাজ অব্যাহত রাখে। এবং উদ্বেগজনকভাবে খুব ঘন ঘন এসব অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে শুরু করে।

প্রেসিডেন্ট মুনের সরকার কি তাহলে ব্যর্থ হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তার সাবেক উপদেষ্টা প্রফেসর মুন চুং-ইন বলেন, ‘না, আমি সে রকম মনে করি না। কোনো যুদ্ধ কি হয়েছে?’

তার যুক্তি হচ্ছে: দুই কোরিয়ার মধ্যে যখন অনেক বড় সঙ্কট চলছিল তখনও প্রেসিডেন্ট মুন তার পাঁচ বছরের শাসনামলে শান্তি বজায় রাখতে পেরেছেন।

উত্তর কোরিয়াকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার জন্য যা কিছু করা দরকার সেটাও তারা করেছিল।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, তিনি মনে করেন যে উত্তর কোরিয়ার সমঝোতাকারীদের খালি হাতে ফেরত পাঠানো হয়েছে যা উত্তর কোরিয়ার শাসকদের জন্য ছিল বিব্রতকর। তিনি মনে করেন, এটা অবশ্যই শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে ভালিয়ে উত্তর কোরীয়দের আলোচনার ফিরিয়ে আনার জন্য প্রেসিডেন্ট মুন যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন।

কিন্তু এসব করার কারণে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে নিষ্ঠুর স্বৈরশাসককে তুষ্ট রাখার চেষ্টা করেছেন।

উত্তর কোরিয়ায় মানবাধিকার পরিস্থিতি
‘আমি যখন তাদের সে সব ছবি দেখি, যেখানে তারা হাত ধরাধরি করে আছেন, হাসছেন তখন আমি শিহরিত হই,’ বলেন সউলের হান্না সং।

তার সংস্থা ডাটাবেজ সেন্টার ফর নর্থ কোরিয়ান হিউম্যান রাইটস দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে উত্তর কোরিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ওপর নজর রাখছে। কিন্তু শেষ কয়েকটি বছর এই কাজ করা তাদের জন্য খুব একটা সহজ ছিল না।

হান্না সং বলেন, মানবাধিকার কিম জং-আনের বড় ধরনের দুর্বলতা। তার মতে উত্তর কোরিয়ার নেতা যাতে অস্বস্তি বোধ না করেন সেই চেষ্টা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট মুন ‘এসব বিষয় কার্পেটের নিচে’ চাপা দিয়ে রেখেছিলেন।

হান্নার সংস্থাটি উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে আসা লোকজনের সাক্ষাৎকার নিয়ে থাকে।

তাদের দেয়া এসব সাক্ষ্য উত্তর কোরিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের নথিপত্র তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে আসার পর প্রথম তিন মাস তারা যে কেন্দ্রে অবস্থান করে সেখানেই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার দু’বছর আগে হান্নার সংস্থার লোকজনের ওই কেন্দ্রে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দিয়েছে। যার ফলে তারা কোন তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারছে না।

এর পরে হান্না পালিয়ে আসা লোকজনের কাছ থেকে শুনতে শুরু করেন তারা যেন উত্তর কোরিয়ায় তাদের অভিজ্ঞতার ব্যাপারে প্রকাশ্যে কথা না বলেন সেজন্য তাদের ওপর চাপ দেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে কেউ কেউ স্থানীয় পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে টেলিফোনও পান।

নতুন সমাজে আত্তীকরণের ব্যাপারে এসব পুলিশ তাদের সাহায্য করছিল। ফোন দিয়ে তারা জানতে চান, ‘আপনি কি নিশ্চিত যে এটা করা বুদ্ধিমানের কাজ?’

এসব ব্যাপারে হান্না দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করেছিলেন।

‘যখন তথ্যপ্রমাণের মধ্যে কিছু ফারাক থাকে এবং আপনি শুধু চান যে কিম জং-আন যাতে আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে লজ্জা না পান, তখন আপনি কী করতে পারেন?’ বলেন হান্না সং।

‘ইউক্রেনে যা হচ্ছে তা ভয়ঙ্কর। কিন্তু আমরা অন্তত সেগুলো জানতে পারছি,’ বলেন তিনি।

কী হচ্ছে উত্তর কোরিয়ায়
উত্তর কোরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে খুব সামান্যই জানা যায়। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ায় লোকজন দেশ ছেড়ে কোথাও যেতে পারছে না এবং সে কারণে তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে না।

তবে যেটা নিশ্চিত করে জানা যায় তা হচ্ছে আন্তর্জাতিক নানা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কিম জং-আন পরমাণু অস্ত্র তৈরির করার কাজ অব্যাহত রেখেছেন।

তার অস্ত্র ক্রমশই অত্যাধুনিক ও বিপদজনক হয়ে উঠছে।

মার্চ মাসে তারা ২০১৮ সালের সম্মেলনগুলোর পর প্রথমবারের মতো আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় যা পূর্বের পরীক্ষিত যেকোনো ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়ে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করে।

‘প্রধান শত্রু’ উত্তর কোরিয়া
কিন্তু দুই কোরিয়ার নেতাদের আলিঙ্গন ও করমর্দনের দিন শেষ হয়ে গেছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন যিনি বেশ কড়া কথাবার্তা বলে থাকেন।

তিনি একজন সাবেক কৌসুলি এবং তার কোনো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই। সম্প্রতি দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইওন সুক-ইওল উত্তর কোরিয়াকে দক্ষিণের ‘প্রধান শত্রু’ বলে উল্লেখ করে দেশটির সামরিক শক্তি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের ব্যাপারে উত্তর কোরিয়া যদি আন্তরিক হয় তবেই শুধু তিনি তার প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তবে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞই একমত যে উত্তর কোরিয়ার এখন পরমাণু অস্ত্র পরিত্যাগ করার কোনো ইচ্ছাই নেই।

এ ধরনের অস্ত্র ত্যাগ করার ফলে কী বিপদ হতে পারে, সেটা ইউক্রেনের যুদ্ধে দেখা গেছে এবং উত্তর কোরিয়া এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার অনেক আগেই পরমাণু অস্ত্র পরিত্যাগ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

এর ফলে নতুন প্রেসিডেন্ট ইওনের ঘোষিত কৌশল ‘কাজ করার কোনো সম্ভাবনা নেই’ বলে মনে করেন যুদ্ধ প্রতিরোধে কাজ করে এমন একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশেষজ্ঞ ক্রিস গ্রিন।

ইওন তার নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় বলেছেন, উত্তর কোরিয়া তাদের জন্য হুমকি হয়ে উঠলে এবং দেশটি তাদের ওপর হামলা চালাতে যাচ্ছে – এমন কোন ইঙ্গিত পাওয়ার সাথে সাথেই ওই দেশের অস্ত্র ধ্বংস করার জন্য তিনি উত্তর কোরিয়ার ওপর আক্রমণ চালাবেন। এটা দক্ষিণ কোরিয়ার দীর্ঘ দিনের প্রতিরক্ষা কৌশলের অংশ হলেও এই নীতির কথা এর আগে এতো জোরে খুব কমই উচ্চারিত হয়েছে। কারণ এর ফলে উত্তর কোরিয়া যে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে সেটা মোটামুটি নিশ্চিত করেই বলা চলে।

গত মাসে উত্তর কোরিয়া তার শক্তি প্রদর্শনের সবশেষ চেষ্টায় সামরিক কুচকাওয়াজে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র তুলে ধরেছে। কিম জং-আন সাদা সামরিক ইউনিফর্মে হাজির হয়ে কড়া ভাষায় হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন: কোনো শক্তি উত্তর কোরিয়াকে হুমকি দিলে তার ‘অস্তিত্ব ধ্বংস’ হয়ে যাবে। কেউ কেউ তার এই হুঁশিয়ারিকে দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দেয়া হুমকি বলেও ব্যাখ্যা করেছেন।

উত্তর কোরিয়া স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে এবং গতমাসেই তারা প্রথমবারের মতো ইঙ্গিত দিয়েছে যে এসব অস্ত্র পরমাণু অস্ত্র বহনে ব্যবহার করা হতে পারে। এবং এই অস্ত্র দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে যুদ্ধে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। উত্তর কোরিয়া যে এখন এরকম একটি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালাতে পারে তারা লক্ষণও দেখা যাচ্ছে।

কিন্তু ক্রিস গ্রিন এখনও বিশ্বাস করেন উত্তর কোরিয়ার প্রধান উদ্দেশ্য টিকে থাকা। ‘তারা যদি পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করে, যে কোনো পরিস্থিতিতে, এর ফলে এই শাসকদের পতন ঘটবে এবং উত্তর কোরিয়া সেটা জানে,’ বলেন তিনি।

অস্ত্র প্রতিযোগিতা
গ্রিন মনে করেন এর পরিবর্তে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা অব্যাহত থাকবে। উভয়েই তাদের অস্ত্র তৈরি করবে এবং আরো ঘন ঘন এসব অস্ত্রের পরীক্ষা চালাবে। তাদের এসব তৎপরতা যুদ্ধের দিকে যাবে না, তবে এসব করতে গিয়ে কোনো এক পক্ষ ভুল হিসেব করে ফেলতে পারে এবং এই মুহূর্তে সেটাই সবচেয়ে বড় বিপদ বলে তিনি মনে করেন।

সাধারণত দক্ষিণ কোরীয়রা উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে খুব একটা চিন্তিত নয়। তাদের বিশ্বাস যুক্তরাষ্ট্রই হচ্ছে উত্তর কোরিয়ায় আসল টার্গেট এবং এই ভাবনা তাদেরকে স্বস্তি দেয়।

সিউলের একটি গলিতে বারবিকিউ করছিলেন লী সি-ইওল, যিনি অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বাধ্যতামূলক সামরিক সার্ভিসে যোগ দিতে যাচ্ছেন। কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার কারণে তিনি তার মন থেকে ভয় ঝেড়ে ফেলতে পারছেন না।

‘আমি জানি আমি অস্বাভাবিক। কিন্তু কিম জং-আন যখনই একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেন, আমি চিন্তিত হয়ে পড়ি। আমি উদ্বিগ্ন কারণ এখন আমরা যে নতুন কঠোর নীতি গ্রহণ করতে যাচ্ছি তা সঙ্ঘাতকে উস্কে দিতে পারে,’ বলেন তিনি।

চিন্তিত লী গিওন-ইলও। কিন্তু কয়েকদিন আগেও তার উদ্বেগ ছিল না। তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তার মনে হয়েছে তার দেশেও এরকম হতে পারে। তিনি বলেন, সামরিক সার্ভিসে যোগ দিয়ে তিনিও একজন অফিসার হবেন।

লী গিওন-ইল স্বীকার করেন, যে যুদ্ধে তিনি একটি বাহিনীকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেটা তিনি কল্পনাও করতে পারেন না। তবে তিনি নতুন প্রেসিডেন্টকে সমর্থন করেন।

‘তাদের ব্যাপারে আমাদের শক্ত জবাব দিতে হবে, কারণ তারা পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে। হুমকি এতোটাই নিকটাপন্ন,’ বলেন তিনি।

প্রফেসর মুন চুং-ইন বলেন, ‘ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন। আমি বড় ধরনের কোনো অগ্রগতি হওয়ার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি না। আমার জীবদ্দশায় নয়। আমরা আমাদের সুযোগটা হারিয়ে ফেলেছি।’

আগামীতে কী ঘটতে যাচ্ছে তা নিয়ে সিউলে অস্বস্তি রয়েছে। কারণ উত্তর কোরিয়া অবধারিতভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন সরকারের সহ্যের সীমা পরীক্ষা করে দেখবে।

‘এজন্য আমি নিজেকে প্রস্তুত করে রাখছি,’ বলেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক একজন লে. জেনারেল, যিনি তার নাম প্রকাশ করতে চাননি।

বর্তমানে সারা বিশ্ব হয়তো অন্য কোনো দিকে তাকিয়ে আছে, তবে উত্তর কোরিয়াকে উপেক্ষা করা খুবই কঠিন হবে।

সূত্র : বিবিসি

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com