দেশের বিভিন্ন জেলায় আগাম ঈদ উদযাপন
অন্যান্য বছরের মতো এবারও চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ, দিনাজপুর, ঝিনাইদহ, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, বরিশালসহ দেশের কয়েকটি এলাকার মানুষ আগাম ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন। দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে আগামীকাল মঙ্গলবার ঈদ উৎসব পালনের ঘোষণা দেওয়া হলেও সৌদির সঙ্গে মিল রেখে এসব গ্রামের মানুষ আগাম ঈদ উদযাপন করছেন। মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে দীর্ঘদিন ধরেই এসব এলাকার মানুষ ঈদসহ অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে আসছেন। নামাজ শেষে মুসল্লিরা কুশল বিনিময় করেন। ব্রেকিংনিউজের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।
চাঁদপুর
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে চাঁদপুরে ঈদ উদযাপন করেছেন ৪০ গ্রামের মানুষ। যেসব গ্রামে ঈদ হচ্ছে সেগুলো হলো- হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা, সমেশপুর, অলিপুর, বলাখাল, মনিহার, বেলচো, জাঁকনি, প্রতাপপুর, গোবিন্দপুর, দক্ষিণ বলাখাল। ফরিদগঞ্জ উপজেলার-সেনাগাঁও, বাসারা উভারামপুর, উটতলী, মুন্সিরহাট, মূলপাড়া, বদরপুর, পাইকপাড়া, সুরঙ্গচাইল, বালিথুবা, কাইতাড়া, নুরপুর, শাচনমেঘ, ষোলা, হাঁসা, চরদুখিয়া এবং মতলব দক্ষিণ উপজেলার দশআনী, মোহনপুর, পাঁচআনী ও কচুয়া উপজেলার উজানি গ্রাম। চাঁদপুরের এসব গ্রাম ছাড়াও পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও চট্টগ্রাম জেলার কয়েকটি স্থানে মাও. ইছহাক খানের অনুসারীরা একদিন আগে ঈদ উদযাপন করছেন।
হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, মতলব দক্ষিণ ও কচুয়া উপজেলার ৪০টি গ্রামে ৯২ বছর ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ পালন হচ্ছে এসব গ্রামে। হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের সাদ্রা হামিদিয়া দাখিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ আবু ইছহাক ১৯২৮ সাল থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে সব ধর্মীয় রীতিনীতি প্রচলন শুরু করেন। ইছহাকের মৃত্যুর পর তার ছয় ছেলে এ মতবাদের প্রচার চালিয়ে আসছেন।
ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকাতেও সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতরের ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৮টায় জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলা মোড়ের গোলাম হযরতের মিল চত্বরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় এই ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এই জামাতে ঝিনাইদহ সদর, হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কুলবাড়ীয়া, বৈঠাপাড়া, বোয়ালিয়া, চটকাবাড়িয়া, ফলসী, পায়রাডাঙ্গা, নিত্যানন্দরপুর, চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলা থেকে শতাধিক মানুষ ঈদ জামায়াতে নামাজ আদায় করেন।
আলমডাঙ্গা উপজেলা থেকে নামাজ পড়তে আসা রেজাউল ইসলাম জানান, সহিহ হাদিসের আলোকে বিগত ১৪ বছর ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে হরিণাকুণ্ডুতে ঈদ জামায়াত করেন।
লক্ষ্মীপুর
লক্ষ্মীপুরেও আগাম ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন ১১ গ্রামের মানুষ। সকাল ১০টায় রামগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ পূর্ব নোয়াগাঁও তালিমুল কুরআন নূরানী মাদরাসা ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। এ উপজেলার ৪টি ও রায়পুর উপজেলার একটি মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাওলানা ইসহাকের (রা.) অনুসারী হিসেবে ৪৫ বছর ধরে এ নিয়ম পালন করে আসছেন তারা। সকাল ৭টায় রামগঞ্জ পৌরসভার জাহাঙ্গীর টাওয়ার, ৯ টায় পূর্ব বিঘা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, পশ্চিম নোয়াগাঁও জামে মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা।
জানা যায়, জেলার রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও, জয়পুরা, পূর্ব বিঘা, বারোঘরিয়া, হোটাটিয়া, শরশৈই, কাঞ্চনপুর ও রায়পুর উপজেলার কলাকোপাসহ ১১ গ্রামের সহস্রাধিক মানুষ ঈদ আনন্দে মেতে উঠেছেন। তারা পৃথকভাবে নিজ নিজ এলাকার মসজিদে ঈদের নামাজের আয়োজন করেছেন।
ভোলা
ভোলার ৫ উপজেলার ১৪ গ্রামের প্রায় তিন হাজার পরিবার ঈদুল ফিতর পালন করছেন। সকাল সাড়ে ৮টায় বোরহানউদ্দিন উপজেলা টবগী গ্রামে খলিফা মজনু মিয়ার নিজ বাড়ির আঙিনায় ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। তিনি নিজেই ওই জামাতের ইমামতি করেন। এছাড়া সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে জেলার বিভিন্ন জায়গায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে তজুমদ্দিন উপজেলার ছালাম মেম্বার বাড়ি, আব্দুল্লাহ মাঝি বাড়ি, লালমোহন উপজেলার লাঙ্গলখালীর পশ্চিম পাশে পাটোয়ারী বাড়ির জামে মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শরিয়তপুরের নুরিয়া উপজেলা দরবারে আউলিয়ার সুরেশ্বর দরবার পীরের মুরিদ ও ভোলা জেলার দায়িত্বে নিয়োজিত খলিফা মজনু মিয়া জানান, আজ ভোলা জেলার ৫ উপজেলার ১৪ গ্রামের প্রায় ৩ হাজার পরিবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করছে।
বরিশাল
বরিশালের ২২ গ্ৰামে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বরিশালের বিভিন্ন স্থানের মানুষ সৌদির সঙ্গে মিল রেখে ঈদের জামাত আদায় করেন। বরিশাল মহানগরীর ২০ গ্ৰামে প্রায় ৩ হাজার পরিবার সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে সোমবার ঈদ উদযাপন করেছেন।
বরিশাল নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ড টিয়াখালির বাসিন্দা নাসির চৌধুরী জানান, তারা বরাবরই সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও ঈদ উদযাপন করেন। বরিশাল নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের তাজকাঠীর হাজি বাড়ির জাহাগিরিয়া শাহসুফি মমতাজিয়া জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি আমীর হোসেন জানান, এ ওয়ার্ডের দক্ষিণ সাগরদী, তাজকাঠীসহ আশপাশের প্রায় ৫০০ পরিবার আজ ঈদ পালন করছেন। জেলার হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ ও মুলাদীসহ বেশ কিছু এলাকা কয়েক হাজার মানুষ সৌদির সঙ্গে মিল রেখে আগাম ঈদ উদযাপন করছেন।
বিরামপুর (দিনাজপুর)
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার দুটি গ্রামের মানুষ ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন। সকালে দুই গ্রামের মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। জানা যায়, ১৯৯৭ সাল থেকে এভাবে নামাজ আদায়ের পরিকল্পনা থাকলেও ২০১৩ সাল থেকেই এসব গ্রামের মানুষ সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদের নামাজ আদায় করছেন। বিগত বছরের তুলনায় এবারের জামাতে মুসল্লির উপস্থিতি বেশি হয়েছে।