কলম কিনতে এসে যেভাবে মুসলিম হন অলিভার
অলিভার হ্যাল্ডারসন। একজন আইসল্যান্ডীয় নওমুসলিম ব্যবসায়ী। এখন মোহাম্মদ আলী নাম ধারণ করেছেন। তার জন্মভূমি আইসল্যান্ডে, যেখানে মোট জনসংখ্যার মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ মুসলিম।
একসময় মুসলিমদের খুব বিদ্বেষের চোখে দেখতেন তিনি। দাড়িওয়ালা মুসলিম পুরুষদের দেখে তার ঘৃণা হতো। কিন্তু একদিন হঠাৎ কলম কিনতে বের হলেন এবং ফিরলেন মুসলিম হয়ে! ইসলামগ্রহণের সেই অবাক করা কাহিনি তিনি আলজাজিরা আরবিকে শুনিয়েছেন।
মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘মরক্কোর রাজধানী রাবাতের একটি মহল্লায় এক যুবকের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। সে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। একদিন আমার হাত ধরে সে আমাকে রাবাতের গ্র্যান্ড মসজিদে নিয়ে গেল। মসজিদে তখন সুনসান নীরবতা, তবে সেখানে প্রবেশ করতেই মসজিদের মাঝ বরাবর থেকে এক বৃদ্ধের কুরআন তিলাওয়াতের সুমধুর আওয়াজ কানে বাজল।
তখন আমার মধ্যে আশ্চর্য রকমের এক অনুভূতি ও প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হলো। বুঝতে পারলাম আমি নতুন কিছু প্রাপ্ত হয়েছি। আমার মন-মস্তিষ্কে বজ্রপাতের মতো কি যেন প্রকটভাবে এবং খুব জোরে একটি ধাক্কা দিল। তখন হৃদয়কে খুব উন্মুক্ত অনুভব করলাম।
এ ঘটনার পর মসজিদ থেকে বের হয়ে সর্বপ্রথম গেলাম পাশেই একটি দোকানে, ধর্মীয় বইপত্র কিনতে। দোকানির কাছে পবিত্র কুরআনের অডিও ক্যাসেটের ফিতা চাইলাম, তিনি জিজ্ঞেস করলেন— আমি মুসলিম কিনা? নইলে ফিতা দেবেন না।
আমি তাকে বললাম— আমি মুসলিম নই, তবে আমার মা একজন মুসলিম। পরে দোকানি আমাকে লাগাতার কয়েকটি প্রশ্ন করলেন— আপনি কি ফেরেশতাদের বিশ্বাস করেন? … হ্যাঁ।
পৃথিবীতে নবী-রাসুলগণ এসেছেন— আপনি এটি মানেন? … হ্যাঁ। আসমানি কিতাবসমূহের ওপর আপনার বিশ্বাস আছে? … হ্যাঁ। সব প্রশ্নের উত্তরে ‘হ্যাঁ’ শুনে তিনি আমাকে বললেন— আপনি নিজেই জানেন না যে আপনি একজন মুসলিম!
তিনি এবার আমার থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা চেয়ে প্রশ্ন করলেন, কখনও শাহাদাত পাঠ করছেন? আমি বললাম— জানি না, তবে খুব শিগগির হয়তো। তিনি বললেন— এখন কেন নয়? তখন আমি বুঝতে পারলাম, আল্লাহতায়ালা আমার বিবেক স্থবির করে দিয়ে হৃদয়-দুয়ার খুলে দিয়েছেন। তাই তখন আমি শাহাদাত পাঠ করে ইসলামগ্রহণ করলাম। আলহামদুলিল্লাহ!
তার সঙ্গে আমার এসব কথাবার্তাকে দোকানি অবশ্য প্রথমে কৌতুক মনে করেছিলেন। পরে আমার সম্পর্কে বললেন— ভাই আমার, আপনি আজিব মানুষ। খাতাকলম কিনতে এসে দেখি মুসলিম হয়ে ফিরে যাচ্ছেন এবং তাই হলো— সত্যিই আমি মুসলিম হয়েই ফিরে এলাম।
এখন আমি ও আমার পরিবার যথাসম্ভব ইসলামি অনুশাসন মেনে চলার চেষ্টা করি। আমার ১২ বছর বয়সি ছেলে ফয়সাল, সেও বিগত রমজানে রোজা রেখেছে। শুধু তাই নয়; ফয়সাল তার মা লাবনী হ্যাল্ডারসনকে জানিয়েছেন, রোজার মৌসুমের লম্বা দিনগুলোতেও রোজা রাখতে তার তেমন সমস্যা হয়নি। শুরুতে নাকি একটু কষ্ট হতো, এখন সে তাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
আমার স্ত্রী লাবনী হ্যাল্ডারসনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম— তোমার কি ইসলামি অনুশাসন পরিপালনে খুব কষ্ট হচ্ছে? সে তেমন বড় রকমের সমস্যায় পড়েনি জানিয়েছে। তবে বলেছে— পাকিস্তানে থাকাকালীন রোজায় খুব কষ্ট হতো। কারণ সেখানে প্রচণ্ড গরম। এখন আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা খুব ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ! আমাদের পরিবারের সবাই মুসলিম এবং আমাদের বাড়ি একটি মুসলিম বাড়ি— ব্যাপারটি সত্যিই দারুণ রোমাঞ্চকর।
ভিডিও সাক্ষাৎকার থেকে বেলায়েত হুসাইনের ভাষান্তর